কাঁঠাল ভেঙে চিকিৎসা ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের
একদিন বিধানবাবু নিজের চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। ১৬ নম্বর রোগীকে দেখে ওষুধ দিয়ে উনি সবে বেরোতে যাবেন , এমন সময় কম্পাউন্ডার এসে জানালো আরেকজন রোগী এসেছে। সে কথা শুনে বিধানবাবু কম্পাউন্ডারকে ধমক দিয়ে বললেন , ❝ তুমি জানো না যে আমি এর চেয়ে বেশি রোগী দেখি না..? ❞ আজীবন ১৬ টা করেই রোগীকে বিনা পয়সায় দেখতেন বিধানবাবু। উত্তরে কম্পাউন্ডার মুখ কাচুমাচু করে বললেন,❝ লোকটা মাথার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে , স্যার পাগলের মত করছে।❞ যেহেতু এটি এমার্জেন্সি কেস তাই বিধানবাবু সেই রোগীকে ফেরালেন না। সোজা চেম্বারের বাইরে বেরিয়ে ওই রোগীর সামনে এসে দাঁড়ালেন।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তিনি রোগীকে না ছুঁয়ে একবার দেখেই কম্পাউন্ডারকে নির্দেশ দিলেন, সামনের বাজার থেকে একটা পাকা কাঁঠাল আনতে। এমন নিধান শুনে কম্পাউন্ডারসহ রোগীর বাড়ির লোক পুরো অবাক। যাইহোক যথাসময়ে কাঁঠাল নিয়ে আসা হলো। এরপর বিধানবাবু রোগীকে একটা স্ট্রেচারে শুইয়ে, কাঁঠালটাকে দুটো টুকরো করে কেটে সেটা বেঁধে দিলেন রোগীর দুই কান বরাবর, আর রোগীকে বললেন,❝ আমি যতক্ষণ না ফিরছি এভাবে এখানে শুয়ে থেকো..।❞
প্রায় ঘন্টা খানেক পর স্নান খাওয়া-দাওয়া সেরে ফিরে এলেন তিনি। আশ্চর্যজনকভাবে ততক্ষণে রোগীর মাথা ব্যথা ও সেরে গিয়েছে। বিধানবাবু এসে ওই কাঁঠালের টুকরো দুটো রোগীর কান থেকে খুললেন , সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থাকা সবাই চমকে উঠলো। কাঁঠালের দুটো টুকরোতে থিক থিক করছে একাধিক পিঁপড়ে। সেই রোগীর কান দিয়ে পিঁপড়ে ঢুকে গিয়েছিল মাথার ভেতর আর সেই থেকেই মাথা ব্যাথা। এবার রোগীকে স্বস্তি দিয়ে বিধানবাবু মৃদু কন্ঠে ধমকের সুরে বললেন,❝ এবার পানাপুকুরে স্নান করাটা বন্ধ করুন না হলে আবার এমন হবে। এবার বাড়ি যান। ❞🌻
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিধান বাবু নিয়ম করে দিয়েছিলেন বিকেল পাঁচটার পর যেন কেউ মহাকরণে না থাকে। এমনকি লিফটম্যানদেরও তিনি ছুটি দিয়ে দিতেন। কিন্তু নিজেরা সাড়ে আটটা অবধি মহাকরণে কাজ করতেন।
একদিন কাজ করতে করতে নটা বেজে গেছে। বিধান বাবু মহাকরণের সিঁড়ি দিয়ে নামছেন , হঠাৎ একটি কাশির শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ালেন। তাঁর সহায়ক কে বললেন, ❝ এই সময় কে কাজ করছে এখানে? বলেছি না এত রাত অব্দি কেউ যেন না থাকে..! যে কাশলো , তাকে এক্ষুনি ডেকে আনো।❞ সহায়ক এক সাফাইকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এলেন। মুখ্যমন্ত্রীর আদেশ আদেশ অমান্য করায় তার চাকরি চলে যাবে এই ভেবে ওই সাফাই কর্মীর মুখ তখন কাঁচুমাচু। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বিধানবাবু বললেন, ❝ এই ব্যাটাকে এক্ষুনি যাদবপুর টিবি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিন। এর গ্যালোপিং টিবি হয়েছে। চিকিৎসা না হলে মারা যাবে।❞ বিধানবাবু কথায় সবাই অবাক একতলায় দাঁড়িয়ে তিন তলা থেকে আসা কাশির শব্দ শুনে টিবি রোগ ধরা সম্ভব নাকি..! অতঃপর লোকটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সহায়ক পরের দিন সকালে বিধানবাবুকে ফোন করে জানালেন, ❝ হ্যাঁ লোকটির সত্যিই গ্যালোপিং টিবিই হয়েছে, চিকিৎসা না করালে মারা যেত।❞
চিকিৎসক হিসেবে তিনি আগাগোড়াই ছিলেন স্বনামধন্য। তাঁর চিকিৎসায় রোগ নিরাময় হয়েছে সাধারণ ব্যক্তি থেকে আরম্ভ করে একাধিক দিকপাল মানুষের। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ওনার চিকিৎসাধীন। মতিলাল নেহরু , মহাত্মা গান্ধী , জওহরলাল নেহরু , কমলা নেহরু , বল্লভভাই প্যাটেল , ইন্দিরা গান্ধী থেকে কে না তাঁর চিকিৎসা পরামর্শ নিতেন। বিধানচন্দ্র রায় যে হতদরিদ্র থেকে রাজা-উজিরের কাছে তিনি ছিলেন ধন্বন্তরি চিকিৎসক। কেউ কেউ বলতেন তাঁর দিব্যদৃষ্টি রয়েছে। তাঁকে বলা হত ধন্বন্তরি। মহাত্মা গান্ধী বলতেন, ❝ বিধান, দ্য সেফ্টি হ্যান্ড অব ইন্ডিয়া।❞🩷🌿
প্রায় সমবয়স্ক সরোজিনী নাইডু একবার চিমটি কাটলেন, ❝ পঞ্চাশ হচ্ছে। এখনও হাসলে আপনার গালে টোল পড়ে..! ❞ অকৃতদার বিধান রায়ের পাল্টা , ❝ পঞ্চাশের ধারে এসেও তুমি কিন্তু সেটা নজর করো..!❞ সচরাচর রাগতেন না। বরং হাসিটাই ধরে রাখতেন ঠোঁটে। ভোর ছ’টা থেকে রাত দশটা কাজ করতেন। দুপুরে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিতেন। বলতেন , এটা উচিত। কর্মপ্রাণ এই মানুষটিকে ❝ ভারতরত্ন ❞ দেওয়া হয় ১৯৬১ সালে। শরীর তখন অসুস্থ। হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়েছিল একাধিকবার। কাজ তবু কমাননি।
১৯৬২-র ১ জুলাই জন্মদিনের ভিড় তাঁর ওয়েলিংটন স্ট্রিটের বাড়িতে। ১৯১৫ সালে এই বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন এবং দাতব্য চিকিৎসালয় গড়ার জন্য দান করে গিয়েছিলেন। যাই হোক, সে দিন তাঁর দেখা করার অবস্থা ছিল না। শুধু ফুলের পাহাড় জমেছে। রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ এসেছিলেন বিকেলে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দিতে। সে দিনই দুপুর ১২টায় জীবনাবসান। জন্মদিনের ফুলে সেজে উঠল বিধানচন্দ্র রায়ের নিষ্প্রাণ দেহ...🌷
আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি..💙🙏
© এক যে ছিলো নেতা
| #এক_যে_ছিলো_নেতা |
📌 Facebook এর পাশাপাশি আমরা পথচলা শুরু করেছি YouTube এও.. আমাদের কাজ ভালো লাগলে আমাদের channel টি Subscribe করে পাশে থাকবেন..
কোন মন্তব্য নেই