প্রভু জগন্নাথের একশো কুড়ি প্রকার সেবা
কোন মেয়ে বউকে তাকাবি না
প্রভু জগন্নাথের একশো কুড়ি প্রকার সেবা আছে। তার মধ্যে পুষ্পক সেবা বা বড় সিঙ্গার বেশ অন্যতম। প্রভুর এই বড় সিঙ্গার বেশ প্রায় এক গরুর গাড়ি ভর্তি ফুল দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে। এই দৃশ্য খুবই মনোরম। প্রভু জগন্নাথের এই বড় সিঙ্গার বেশ দেখার জন্য স্বর্গের দেবদেবীও লালাইত এবং এই বড় সিঙ্গার বেশ দেখার জন্য স্বর্গের দেবদেবীরা যে আসেন, তা শুধু সিঙ্গারি সেবকরা অনুভব করে না, স্বচোখে দেখেও থাকে। ১৯৮২ সালের ঘটনা। লক্ষণ সিংগারি নামে একজন যুবক সেবায়ত বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারী সূত্রে মা সুভদ্রার বড় সিঙ্গার বেশ করতেন। তিনি যখন প্রথম বড় সিঙ্গার বেশ শুরু করেন, তার ঠাকুরদা তাকে বলে রাখেন যে "বাবুরে! দুইটি কথা মনে রাখবি। বড় সিঙ্গার বেশ করার সময় কোন মেয়ে বউদের মুখের দিকে তাকাবিনি বা কেউ যদি পিছন দিক থেকে ডাকে পিছনে ফিরে সাড়া দিবিনি"। যুবক লক্ষণ সিংগারি ঠাকুরদার এই কথা অক্ষর অক্ষরে পালন করেন। তিনি নিষ্ঠার সাথে মা সুভদ্রার সিঙ্গার বেশ প্রতিদিন সম্পাদনা করেন। এই সিঙ্গার বেশ প্রভু জগন্নাথকে পহড বা শয়ন দেওয়ার আগে ও প্রভুর শেষ ধুপ বা ভোগ দেবার আগে করা হয়।
এক দিনের ঘটনা। লক্ষণ সিংহারি রত্ন সিংহাসন এর উপরে মা সুভদ্রার সিংগার বেশ করার সময় দেখলেন - তিনটি অপূর্ব সুন্দরী যুবতী গরুড় খম্বের কাছে দাঁড়িয়ে এক বৃষ্টিতে রত্ন সিংহাসনের দিকে তাকিয়ে আছেন। তখন বিলম্বিত রাত্রি। শ্রীমন্দিরে লোকজনের ভিড় কমে গেছে। যুবক লক্ষণ সিংগারির মন এই তিন যুবতীকে দেখে চঞ্চল হয়ে উঠলো। তিনি ঠাকুরদার কথা সম্পূর্ণ ভুলে গেলেন। এই তিন যুবতীর সাথে আলাপ করার জন্য তিনি সুযোগ খুঁজলেন। মাথায় একটা বুদ্ধি ঢুকলো। প্রভু জগন্নাথের শেষ ভোগ হয় পান্তা ভাত। তিনি মনে মনে স্থির করলেন প্রভু জগন্নাথের মহাপ্রসাদ পান্তা ভাত নিয়ে, সেই যুবতীদের হাতে দেবেন। সেই সুযোগে তাদের বাড়ি, নাম, গ্রাম সবকিছু বুঝে নেবেন। এদিকে অন্য সেবকরা মহাপ্রভুর পহড় বা শয়ন দেওয়ার জন্য ব্যস্ত। যুবক লক্ষণ সিংহারির মন পড়ে রয়েছিল সেই যুবতীদের কাছে। তিনি প্রভু জগন্নাথের মহাপ্রসাদ পান্তা ভাত ধরে চললেন সেই যুবতীদের কাছে। যেমনি তিন ঠাকুরের পহড় দেওয়া শেষ হয়েছে, তিনি দেখলেন সেই অপূর্ব সুন্দরী তিন যুবতী দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছেন বাইশ পাহাচ বা সিড়ির দিকে। তিনিও এক প্রকার দৌড়াতে দৌড়াতে চললেন তাদের পিছনে। যখন যুবতীরা সিংহ দুয়ার পেরিয়ে যাচ্ছেন, যুবক লক্ষণ শিয়ারি ডাক দিলেন পিছন থেকে "এই দাঁড়াও"।
ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি নিচে পড়ে গেছেন এবং তার সেন্স চলে গেছে। তারপর দিন তার সেন্স যখন ফিরলো তিনি দেখলেন তার আত্মীয়-স্বজন তাকে ঘিরে বসেছেন। লক্ষণ সিংহারি জিজ্ঞাসা করলেন "কি হলো"? বাড়ির লোকেরা বললো "তোর কি হয়েছে বল? তুই পড়ে গেলি কেন"? লক্ষণ সিংহারি তো আর সত্যি কথাটা বলতে পারলেন না। তিনি বললেন তার পায়ে কাপড়টা ঘুরিয়ে গেল, তাই তিনি পড়ে গেলেন। বাড়ির লোকেরা তাই বিশ্বাস করল। সবাই ভাবলো হতে পারে। কিন্তু লক্ষণ সিংহারির ঠাকুরদার এ কথা বিশ্বাস হলো না। তিনি ভাবলেন মহাপ্রভুর সেবা করলে,পড়ে গিয়ে সেন্স চলে যাবে"? তিনি এই বিষয়টিকে খুব গভীরভাবে চিন্তা করলেন। দুইদিন পরে তিনি লক্ষণ সিংহারিকে ডাকলেন:- "এই লক্ষণ! শোন"। লক্ষণ সিংহেরী জিজ্ঞাসা করলেন "কি বলছো বলো "? ঠাকুরদা বললেন "কিরে কুলাঙ্গার! তুই কি করতে যাচ্ছিলি? তুই কার পিছনে দৌড়াচ্ছিলি"? লক্ষণ সিংহেরী চমকে পড়লেন। তিনি তো কাউকে সে কথা বলেননি। ঠাকুরদা কি করে জানলেন? ঠাকুরদা বললেন "ওরে সেদিন দক্ষিণ কালী এসেছিলেন, তিন ঠাকুরানি এসেছিলেন। মহাপ্রভুর বড় সিঙ্গার বেশ দেখার জন্য। তুই বুঝতে পারলি না বা ওদেরকে চিনতেও পারলি না। কুলাঙ্গার তুই তাদের পিছনে দৌড়াচ্ছিলি? তুই কেন এই রকম করলি রে। পাপ অর্জন করলি"।
এই বলে তিনি ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করলেন। লক্ষণ সিংহারি সেই রকম দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার চোখ থেকে জল বাধা মানছিল না। বুঝতে পারছিলেন না কত বড় অপরাধ করেছেন তিনি। ঠাকুরদার কথা শুনে তিনি দৌড়ালেন সেই তিন ঠাকুরানীর কাছে। নিজের কান মূলে কানতে কানতে বললেন মা আমায় ক্ষমা করো আমি বুঝতে পারিনি তাই এই অপরাধ করেছি। কিছুক্ষণ পর তার মনে হল যেন কেউ বলছেন ঠিক আছে যা যা, কিছু হবে না যা যা"। এ কথা শোনার পর তিনি ফিরে আসলেন। এখনো তিনি আছেন। তাকে যদি একথা জিজ্ঞাসা করা যায়, তিনি কেঁদে ফেলেন। বলেন আমি জানতে না পেরে এই অপরাধ করেছিলাম। সেই কারণে আমার ঠাকুরদা আমাকে বলেছিলেন, তুই যখন মহাপ্রভুর বড় সিঙ্গার বেশ করবি, কোন মেয়ে বউকে তাকাবি না বা পিছন থেকে কেউ ডাকলে সাড়া দিবি না। কারণ তিনি ভালোভাবে জানতেন যে মহাপ্রভুর বড় সিঙ্গার বেশ দেখার জন্য স্বর্গের দেবদেবীও সর্বদা লালাইতো। তারাও স্বর্গ থেকে নেমে আসেন মহাপ্রভুর মানব লীলা দর্শন করার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত লক্ষণ সিংগারি তাদেরকে চিনতে পারেননি। এখন তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কেঁদে ফেলেন। বলেন যদি জানতাম পায়ে পড়ে কিছু চাইতাম। তাদেরকে চোখের সামনে দেখেও চিনতে পারলাম না।
কোন মন্তব্য নেই