Header Ads

ইন্দ্র ভূষণ রায় এর নাম শুনেছ কি বাঙালিরা

🩸একটি তরুণ শরীরের পচে যাওয়া হাত 🩸

১৯০৭ সাল। স্থান— আন্দামান সেলুলার জেল।
সামান্য তরুণ, নাম ইন্দুভূষণ রায়, বয়স মাত্র আঠারো। কলকাতার রাজপথে তখন জাতীয়তাবাদের ঝড়। যুবসমাজ একের পর এক ঝাঁপিয়ে পড়ছে বিপ্লবের আগুনে। সেই আগুনের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইন্দুভূষণ।

তিনি ছিলেন আলিপুর বোমা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। আর সেই অপরাধেই তাঁকে পাঠানো হয় “কালাপানির জেল” নামে berated সেলুলার জেলে, যেখানে প্রতিটি দিন ছিল একটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু সেদিনের ঘটনাটা ছিল ভয়াবহতার সীমা ছাড়িয়ে।

---
আন্দামানের গা-জ্বালানো জলবায়ু, আর ইংরেজদের অসহ্য নির্যাতন। জেলর তাকে পাঠিয়েছিল জঙ্গলের গভীরে, গাছের ছাল ছাড়িয়ে আঁশ বের করার কাজে। সেই গাছের আঠা ছিল বিষাক্ত— হাতে তৈরি হল দগদগে ঘা। আঙুল ফেটে রক্ত, পুঁজ। দিনের পর দিন সহ্য করেও মুখ খোলেনি ইন্দু।

শেষমেশ অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ইন্দু একদিন কাঁপা কণ্ঠে অনুরোধ করল—
"স্যার, আমি ভাত খেতে পারি না, আমার হাতে ঘা। একটু দয়া করুন, অন্য কোনও কাজ দিন..."

কিন্তু জেলরের হুকুম—
"বাঁ হাত দিয়ে খাও। আর কাল থেকে ঘানি টানবে..."

ইন্দু স্তব্ধ। ঘানি টানবে! যে ছেলেটা চামড়া খুলে যাওয়া হাতে ভাত তুলতে পারে না, সে ঘানি টানবে? জেলরের হুকুম অমান্য করলে আরও অত্যাচার। তবু সে বোঝাতে চেষ্টা করে—
"আমি মরেই যাব স্যার। আমি পারব না..."

---
একদিন ইন্দু রুক্ষ জমাদারকে অনুরোধ করল— "আমার শরীর খারাপ, আমাকে জেলের ভিতরের কোনও কাজ দিন।" জবাবে তাঁর হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হল জেলের ভেতর।
তখন মনে হল— অন্তত কিছু মুখ চিনে, কিছু চোখে দয়া আছে। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই।

দুদিন যেতে না যেতেই নতুন হুকুম—
"আবার জঙ্গলে যেতে হবে।"
ইন্দু বলল,
"আমি যাব না।"
আর তাতেই লাগল দেশদ্রোহিতার ছাপ। তাঁকে ফের পাঠানো হল জঙ্গলে আরও বিষাক্ত গাছের আঁশ ছাড়াতে।

---
শেষ চেষ্টা করলেন ইন্দু। ফের গিয়ে জেলরকে বললেন—
"দয়া করে স্যার, আমি ঘানি টানতে পারব না। আমার দু’হাতেই পচন ধরেছে।"
তবু কোনও সদয় দৃষ্টি নয়, শুধু বর্বর হুকুম—
"ঘানি টানতেই হবে!"

জেলখানায় ফিরে এল ইন্দু। মনটা ছিন্নভিন্ন। ১৮ বছরের এই ছেলেটা যে দেশকে ভালোবেসে এসেছে মৃত্যুর মুখে।
সেদিন সে খুলে ফেলল নিজের কুর্তা।
ফালি-ফালি করল।
সেই কাপড় দিয়ে পাকিয়ে বানাল এক টুকরো দড়ি।
আবার গলার চারপাশে ঘুরিয়ে বেঁধে ফেলল সেই দড়ি।
ধীরে ধীরে টেনে ধরল… যেন তার হাতের পচে যাওয়া আঙুলগুলো আর গলার শ্বাসরোধ— সব এক হয়ে নিঃশব্দ এক বিদ্রোহে মিলিয়ে গেল।

---
ইন্দুভূষণ রায়— ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক "অদৃশ্য নায়ক"। তাঁর নাম পাঠ্যবইয়ে নেই, কোনও মূর্তি নেই, শহরের মোড়ে মোড়ে পোস্টার নেই।
তবে তাঁর আত্মত্যাগ একটি প্রশ্ন হয়ে থাকে আমাদের চোখের সামনে—

এই স্বাধীনতা কি এতটাই সস্তা ছিল?
এই কিশোরটি কেন নিজেকে দড়ি দিয়ে শেষ করে দিয়েছিল?

আজকের প্রজন্ম জানে না, ইন্দুভূষণ রায় কে ছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁকে জানি, তাঁকে মনে রাখি।

আজকের স্বাধীন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আসুন আমরা সবাই মাথা নত করে এই আত্ম বলিদান এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই 🙏🙏🙏🙏

কলমে ✍️ সুরজ মন্ডল 
©️Mr. Hotch Potch

চিত্র ও তথ্য - উইকিপিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.