Header Ads

বিবেকানন্দের মহা সমাধি র ১২৩ তম বার্ষিকী উদাল বাকরা তে

৭ জুলাই, ২০২৫ - পূর্ব ঘোষণা মতো গুআহাটির বিবেকানন্দ কল্যাণ কেন্দ্রে ৪ ও ৬ জুলাই স্বামী বিবেকানন্দের মহাসমাধির ১২৩তম বার্ষিকী পালিত হয়। প্রথম দিন অর্থাৎ ৪ঠা জুলাইয়ের অনুষ্ঠান  ছিল ছাত্রকেন্দ্রিক এবং তদনুযায়ী সংস্কৃত স্তোত্র পাঠ সহ সমবেত ও এককভাবে স্বামীজির রচনা থেকে মুখস্থ উপস্থাপনা হয়। বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল  অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী দীক্ষা কুমারীর  দ্বারা  স্বামী বিবেকানন্দ রচিত To the Fourth of July নামক ইংরেজি ode   শ্রেণীর বিখ্যাত কবিতাটির উপস্থাপনা। উল্লেখযোগ্য যে ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই তিনি দেহরক্ষা করেন। তার চার বছর আগে ১৮৯৮ খৃস্টাব্দের ৪ঠা জুলাই কাশ্মীরের ডাল হ্রদে নিবেদিতা ও অন্যান্য পাশ্চাত্য শিষ্যদের নিয়ে আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস পালন করেন। সেই উপলক্ষ্যে  তিনি ঐ কবিতাটি রচনা করেন। আমেরিকা ও ভারতের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম তথা ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে এই কবিতাটির গুরুত্ব অপরিসীম। বিদ্যায়তনিকভাবে কবিতাটিকে ইংরেজি ভাষার কিছু ব্যকরণ শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে কর্মশালার আয়োজন করা হয় কল্যাণ কেন্দ্রে। এছাড়া শিকাগো বক্তৃতা, স্বদেশমন্ত্র, নিবেদিতার প্রতি আশীর্বাদ, ইংরেজিতে স্বামিজীর লেখা ছড়া ও জীবনীমূলক বক্তৃতায় অংশ গ্রহণ করে ছাত্রছাত্রীগণ। তাদের কয়েকজন হল তৃতীয় শ্রেণীর শিবাঙ্গী এবং খুশবু, সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর পায়েল এবং অনুষ্কা। 
    ৬ জুলাই রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিবেকানন্দ-অনুরাগী নাগরিকদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় কল্যাণ কেন্দ্রের যোগমন্দিরে। স্বামীজির প্রতিকৃতিতে মাল্যার্পণ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের পর নজরুল ইসলাম রচিত বিখ্যাত "জয় বিবেকানন্দ" গানটি গায় রবি রাগিনীর প্রজ্ঞা দাস। 
  সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যায় গোবিন্দ অধিকারী বলেন যে কল্যাণ কেন্দ্রের সকল অনুষ্ঠানই ছাত্রছাত্রীদেরকে কেন্দ্র করে, স্বামীজির বিশ্বাত্মিক ভাবনার আত্মীকরণে নিবেদিত। এখানে প্রতিদিনের নৈষ্ঠিক বিদ্যায়তনিক কার্যক্রমেও তার নিরন্তর অনুশীলন চলে। এই অনুষ্ঠানও তেমনি একটি। ছাত্রছাত্রীরা স্বামীজির রচিত ইংরেজী ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করে, তার মধ্যে ছিল নিবেদিতার প্রতি লেখা Benediction।   To the Fourth of July কবিতাটিও আবৃত্তি করা হয়।
     সভায় এবছরের এইচ এস এল সি পরীক্ষায় সংস্কৃতে দুটি লেটার সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যে বিবেকানন্দ কল্যাণ কেন্দ্র জাতীয় শিক্ষা নিকেতনের তিনজন কৃতী ছাত্রছাত্রীকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তারা হল   সরোজ চৌধুরী, সোনম কুমারী ও মহিমা শাহ্। তাঁদের প্রত্যেককে ফুলাম গামোছা পরিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ রচিত বই ও রোমা রোলা রচিত বিবেকানন্দ জীবনীর সংগে শ্রী শ্রী মায়ের কথা ও জীবনী প্রদান করে পুরস্কৃত করা হয়। পরীক্ষার দিন-পনেরো আগে সরোজের বাবা নিহত হন। এখন সে সংসারের দায়িত্ব পালনে কাজ নিয়েছে ও কলেজে ভর্তি হয়েছে।
    কেন্দ্রের কার্যনির্বাহী সভাপতি শ্রীযুক্তা শুভ্রা ভট্টাচার্যের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট বিবেকানন্দ-চর্চানিরতা অধ্যাপিকা শ্রাবণী কর পরকায়স্থ গুপ্তা।  'আমেরিকা ও ভারতের সাধারণ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনে স্বামিজীর ভূমিকা'-র উপর বক্তব্য রাখেন তিনি। বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক মানবতাই আমেরিকার মানুষকে আপন করে নিয়েছিল। প্রথম বক্তৃতার প্রারম্ভিক সম্বোধনের পাঁচটি শব্দ Sisters and Brothers of America -ই আত্মীয়তার সম্পর্কটিকে চিরকালের জন্য খোদাই করে দিয়েছে। উপস্থিত সকলের গ্রহণযোগ্য করে শ্রীযুক্তা গুপ্তার দ্বারা বিষয়টির মনোজ্ঞ উপস্থাপনা সকলকে মুগ্ধ করে। তিনি সরোজকে সস্নেহ দানে আপ্যায়িত করেন। অনুষ্ঠানটির অন্যতম আহ্বায়ক পমি দাস কেন্দ্রের অগ্রগতির জন্য সহায়তার আশ্বাস দান করেন। উল্লেখযোগ্য যে তিনি ইতিমধ্যেই রোটারী ক্লাবের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের একটি শ্রেণীকে স্মার্ট ক্লাশে পরিণত করার কাজে হাত দিয়েছেন। "সহারি" নামক সাংস্কৃতিক মঞ্চের পক্ষ থেকে নবনীতা চৌধুরী ছাত্রদের একটি ফুটবল উপহার দেন। পুলকিত ছাত্রদের হয়ে শ্রীজহরলাল সাহা মনে করিয়ে দেন যে স্বামীজি ভাবতেন যে গীতা নয়, ফুটবলের মধ্যে দিয়েই মুক্তি আসবে। পুষ্পিতা চক্রবর্তী ও সহচরীবৃন্দ রীতা দাস, মিতালি দাস ও পুলমী দাস সমবেত সংগীত পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানটির সৌষ্ঠব বর্দ্ধনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে অভিজিৎ চক্রবর্তী।সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষয়িত্রী যামিনী শর্মা।সকলকে ধন্যবাদ প্রদান করেন কেন্দ্রের পক্ষে শ্রীযুক্ত আশীষ দাস। সভাপতি শ্রী যুক্তা শুভ্রা ভট্টাচার্যের ভাষণের পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনে সভা সমাপ্ত হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.