আজাদ হিন্দ বাহিনীর শহীদের ভুলে গেল বাঙালি!
ব্যারাকপুরের নীলগঞ্জে হত্যা করা হয়েছিল ২৫০০ থেকে ৩০০০ আজাদ হিন্দ সৈন্যকে, ইতিহাসের ‘অজানা’ অধ্যায়।
অনেক রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতার লড়াই। এমন অনেক কাহিনিই আছে, যেগুলো আমাদের অগোচরে রয়ে গেছে। বলা ভালো, সামনে আসতে দেওয়া হয়নি। ব্রিটিশদের অত্যাচারের নৃশংস কিছু চিহ্নও চাপা পড়ে গেছে ইতিহাসের তলায়। নীলগঞ্জের সাহেব বাগানের নারকীয় হত্যালীলা এইরকমই একটি ভুলে যাওয়া অধ্যায়…
আইএনএ বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রতিষ্ঠা। আরও ভালো করে বললে, আজাদ হিন্দ বাহিনীর সূচনা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু’র নেতৃত্বে এই বাহিনী রীতিমতো ত্রাস তৈরি করেছিল ব্রিটিশদের ভেতর। শেষ পর্যন্ত নানা কারণে পরাজিত হতে হয় বটে; কিন্তু গোটা দেশবাসীর মধ্যে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেন তাঁরা।
এরপরই বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। লালকেল্লার ঐতিহাসিক বিচারসভা তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে আরও দুটো রহস্য। প্রথমটি, নেতাজির অন্তর্ধান; যা আজও সমাধান হয়নি। আর অন্যটি, নীলগঞ্জের হত্যাকাণ্ড।
ব্যারাকপুরের কাছেই বিস্তীর্ণ অঞ্চল এই নীলগঞ্জ। অনেক আগে থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল ,সেই নীল বিদ্রোহের সময় থেকেই এই অঞ্চল পরিচিত। পরে ব্যারাকপুর ব্রিটিশ সেনাদের আস্তানা হওয়ার পর এখানেও তার প্রভাব পড়ে। সালটা ১৯৪৫। ইতিমধ্যেই জাপানে পরমাণু বোমা পড়ে গেছে। আজাদ হিন্দ বাহিনী অর্থাৎ আইএনএ পরাজিত হয়েছে। সেই সেনাদেরই বন্দি করে রাখা হয়েছিল নানা জায়গায়। আর ওই অবস্থাতেই চলত অত্যাচার। জিজ্ঞাস্য একটাই, সুভাষ বসু কোথায়?
১৯৪৫ সালের সেই দিনটি ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর। মধ্যরাত পেরিয়েছে সবে। নীলগঞ্জের ডেরায় বন্দি প্রায় তিন হাজার আইএনএ বাহিনীর সৈন্য। একদিন ভারতকে স্বাধীন করার জন্য তাঁরা লড়েছিলেন। নেতা ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সেদিন প্রায় গোটা রাত গুলি চলেছিল নীলগঞ্জের ওই ডেরায়। কাদের ওপর, সেটা আন্দাজ করে নিতে অসুবিধা হয় না। রাতারাতি আইএনএ’র ওই তিন হাজার সৈন্যকে ঠান্ডা করে ব্রিটিশ পুলিশ। কোল্ড-ব্লাডেড জেনোসাইড! জালিয়ানওয়ালা বাগের থেকে কোনো অংশে কম নয়।
পরেরদিন যখন বাসিন্দারা ওখানে যান, সেখানকার দৃশ্য দেখে শিহরিত হন সবাই। পাশেই বয়ে যাচ্ছিল নোয়াই খাল। রং বদলে খালের জল হয়ে গেছে লাল! এখানে সেখানে পড়ে আছে আইএনএ’র বন্দি সৈনিকদের ছিন্নভিন্ন দেহ। এক জায়গায় মাটি খোঁড়া হচ্ছে, সব দেহ একসঙ্গে সেখানে চাপা দেওয়া হবে। মিটিয়ে দেওয়া হবে এই নারকীয় ঘটনার সমস্ত নিদর্শন।
এত বড়ো একটা ঘটনা, অথচ ইতিহাসে তার বিশেষ উল্লেখ পাওয়া যায় না। ১৯৪৫-এরই অক্টোবরে অমৃতবাজার পত্রিকায় এই ঘটনার বিবরণ হিসেবে বলা হয় ‘মাত্র পাঁচজন’ আইএনএ সৈন্য মারা গেছেন। নেহেরুর বিবৃতিতে একই কথা বলেছিলেন। তার থেকেও বড়ো কথা, ভারত সরকারের তরফ থেকেও পরবর্তীতে এই ঘটনা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি। কেন এরকম ধামাচাপা? আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের ইতিহাসে একটি চিরস্মরণীয় নাম।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
কোন মন্তব্য নেই