স্বাধীনতা আন্দোলনের অমর শহীদ শের আলী খান কে সবাই ভুলে গেছে
স্বাধীনতা আন্দোলনের অমর শহীদ "শের আলী খান"-
বড় লাটকে হ|ত্যা করে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েও যিনি স্থান পাননি ইতিহাসের পাতায়!
***************************************
"একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পড়ব ফাঁ|সি দেখবে ভারত বাসী!"
এই গানটির সাথে অপরিচিত এমন কাউকে পাওয়া যাবে বলে মনেহয়না। ইংরেজ বড় লাটকে হ|ত্যার চেষ্টাকারী ক্ষুদিরামের স্মরণে লিখিত গানটি সবাই গেয়ে থাকি, স্মরণ করি ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগের কথা।
কিন্তু কখনো কি শুনেছেন সেই মহান বীরের নাম যিনি বড় লাটকে হ*ত্যা করে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের ভিত?
শুনেননি!
কেননা #ইতিহাস রচনাকারীরা তাকে গোপন করেছে কারন তিনি ছিলেন মুসলমান!
জি হ্যা!
শের আলী খান সেই অমর শহীদ যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে নিশ্চিত মৃ|ত্যু জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বড়লাটের উপর আর তাকে হ|ত্যা করেই সমাপ্ত করেছিলেন নিজের মিশন!
উপমহাদেশের স্বাধীকার #আন্দোলনে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোন ব্রিটিশ বড়লাটকে হ*ত্যা করতে সক্ষম হন।
জন্মঃ-
শের আলি আফ্রিদি বা শের আলি খান খাইবারপাসের জামরুদ গ্রামে জন্মগ্রহণকরেন। তিনি ছিলেন সৈয়দ আহমদ শহীদ (রাহঃ) এর শিষ্য।
কন্টকময় সংগ্রামী জীবন
***********************
ইংরেজ বিরোধী শীর্ষস্থানীয় নেতা মৌলানা জাফর থানেশ্বরী সহ অন্যান্য বিপ্লবীকে ধরিয়ে দেওয়া ও পুলিশের গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে হায়দার আলি নামক এক যুবককে হত্যা করার অ*প*রাধে পেশোয়ার থেকে তিনি গ্রে*প্তার হন ১৮৬৭ সালে। বিচারে তার মৃ*ত্যু*দ*ন্ড হয়।
কলকাতা হাইকোর্ট আপিলে তাকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে দন্ডিত করে।
১৮৬৯ সালে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত শের আলীকে আন্দামানে পাঠান হয় । তখন তাঁর বয়স ২৫ বছর এবং উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি । আন্দামান হচ্ছে সেই স্থান যাকে অনেকেই কু*খ্যা*ত কালাপানির দেশ নামে চিনে।
আন্দামানে তখনো সেলুলার জেল তৈরি হয়নি। বন্দীদের বিভিন্ন দ্বীপে কঠোর পাহারায় রাখা হতো। পোর্ট ব্লেয়ারের হোপ টাউন অঞ্চলের পানিঘাটায় বন্দি ছিলেন শের আলি।
তিনি ছিলেন খুবই সরল , দয়ালু এবং ধর্ম ভীরু প্রকৃতির । জেলে মজুরি হিসাবে সামান্য যে পয়সা পেতেন তার সবটাই সহযোগী বন্দীদের মধ্যে বিলি করে দিতেন । এর ফলে বন্দীদের মধ্যে তিনি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । অন্যদিকে দিন রাত একই চিন্তা , বিপদজনক নির্জন দ্বীপে নির্বাসন অবস্থায় অত্যাচারের বদলা কিভাবে নেওয়া যায় এবং দেশবাসীকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা যায় । ১৮৭২ সালে ৮ই ফেব্রুয়ারী সেই সুযোগ উপস্থিত হয় ।
অ*ত্যা*চারী বড় লাট লর্ড মেয়ো আসেন আন্দামান পরিদর্শনে।
লর্ড মেয়োর পরিদর্শনের সংবাদ শুনে শের আলী খান তাঁর কর্তব্য স্থির করে ফেলেন অর্থাৎ যে ভাবেই হোক তাকে হ*ত্যা করতে হবে । তিনি এটাও জানতেন তাঁকে দ্রুত আটক করা হবে এবং তাঁর মৃ*ত্যু অবধারিত । তাই আগেই তাঁর হিন্দু মুসলিম সতীর্থদের কাছ থেকে বিদায় পর্ব সেরে নেন এবং তাঁর যে সামান্য অর্থ ছিল তা দিয়ে রুটি মিষ্টি খাওয়ান । নির্ধারিত পরিদর্শনের দিন সকাল থেকেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন । কিন্তু সুযোগ পেলেন না ।
অবশেষে ভাইসরয় মাউন্ট হ্যারিয়েট থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে ফেরার সময় অন্ধকার নেমে আসে । সামনে আলো জ্বালিয়ে তাকে পথ দেখান হচ্ছে এবং চারিদিকে উচ্চপদস্ত কর্মচারীবৃন্দ আর সশস্ত্র বাহিনী । ঠিক পিছনে আন্দামানের সুপারিন্টেনডেন্ট ওয়াকার । উদ্দেশ্য জেটির ধারে ছোট নৌকায় চেপে তার জন্য নির্ধারিত জাহাজ গ্লাসগো তে চড়া । হঠাৎ ওয়াকার অন্যজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য পিছিয়ে পড়ে । সেই মুহূর্তে শের আলী খান বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন হাতের ছু*রি দিয়ে ভাইসরয়ের পি*ঠে আ*ঘা*ত করার সাথে সাথে ভাইসরয় লুটিয়ে পড়ে । তাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় । কিন্তু ততক্ষণে সব শে*ষ । ঐ আ*ঘাতেই তার মৃ*ত্যু হয় ।
সাথে সাথেই শের আলী খানকে গ্রে*প্তার করা হয় । পরের দিন দ্রুততম বিচার সম্পন্ন হয় । বিচারের সময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তাঁর সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না । সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে জানান তার একমাত্র সঙ্গী আল্লাহ এবং তাঁর দ্বীনি ভাই আব্দুল্লাহ (সৈয়দ আহম শহীদের রাহঃ আরেক শিষ্য) যেভাবে প্রধানবিচারপতি নরম্যানকে হ*ত্যা করেছে তার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই তিনি এ কাজ করেছেন । তিনি প্রাণ ভিক্ষার জন্য কোন মার্জনা চাননি ।
১৮৭২ সালের ১১ই মার্চ তাঁকে ফাঁ*সিতে ঝুলানো হয়। ফাঁ*সির দিন ফাঁ*সির দ*ড়িকে চুমু খেয়ে সেই দ*ড়ি পড়ে নেন এবং "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" এই কথা দুবার বলার পরই তাঁর শ্বা*স রোধ হয়ে যায় । মাত্র ২৮ বছরেই থেমে যায় মহান এই স্বাধীনতাকামীর বিপ্লবী জীবন!
শের আলী খান জানতেন, তাঁর দেশকে স্বাধীন করতে তাঁকে চরম মূল্য দিতেই হবে । তিনি তা-ই দিয়েছেন । তবে শের আলী খানের জন্য রচিত হয়নি কোন শহিদ বেদি, একটা শুকনো ফুলও কোন দিন কেউ দেয়নি , কোন কবি লিখেনি শোক গাঁথা, কোন সুরকার তুলেনি সুরের কোন করুণ মূর্ছনা, ইতিহাসের পাতার কোন এক কোণেও স্থান হয়নি স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহান বীর শহীদের এটাই সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি, এটাই সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক !!
তথ্যসূত্রঃ-
১) নারায়ণ সান্যাল (২০০৩)। শের-ই-শহীদ দ্বীপ। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর পা: লি:।
২) ক খ মুক্তির সংগ্রামে ভারত। কলকাতা: পশ্চিমবংগ বাংলা আকাদেমী। ১৯৯৬।
৩) "উনি 'বীর', আর বাকিরা?"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭
কোন মন্তব্য নেই