Header Ads

নিজের ব্যর্থতা স্বিকার বুদ্ধবাবু থেকে ওমর আবদুল্লা

কি অসামান্য লিখেছেন ধ্রুব জ্যোতি প্রামাণিক ....
তাঁর দেওয়াল থেকে তুলে দিলাম, পড়ুন সবাই..... 

####

দায় স্বীকার মহতের লক্ষণ। বুদ্ধবাবু থেকে ওমর আবদুল্লা….
লজ্জা আসলে মানুষের ভূষণ। লজ্জা মানুষকে নীতিবোধ স্মরণ করায়। আত্মশুদ্ধ হতে সাহায্য করে। আপনারা ভাবছেন, হঠাৎ করে কেন এসব বলছি ! শেষ ভদ্রলোক বাঙালি রাজনীতিক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার যোগ কোথায়। সেটা বলব বলেই তো লিখতে বসলাম। 

পহলগামে হিন্দুনিধনের নিন্দাপ্রস্তাব গ্রহণ করতে, আজ জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন বসেছিল। সেখানে ভাষণ দিলেন, ওমর সাহেব। চুপ করে কথাগুলো শুনছিলাম। লক্ষ্য করছিলাম, মাঝে মাঝেই ওমর সাহেবের গলা ধরে আসছে, মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। লজ্জায়। আর সেই লজ্জাবোধ প্রকাশ্যে বলতে দ্বিধা করছেন না, জম্মু-কাশ্মীরের দুবারের মুখ্যমন্ত্রী। কী বললেন আজ ওমর সাহেব ? 

১. পহলগামের ঘটনা গোটা দেশকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রথম নয়। অমরনাথ যাত্রার ক্যাম্পে হামলা আমরা দেখেছি। আমরা ডোডার গ্রামে হামলা হতে দেখেছি। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বস্তিতে হামলা দেখেছি আমরা সবাই। কিন্তু বৈসরণ উপত্যকায় যা হল, গত ২১ বছরে নিরীহ মানুষের ওপর এতবড় হামলা আর হয়নি। মৃত ২৬ জনকে শ্রদ্ধা জানাতে গেছিলাম যেদিন, আমার মুখ থেকে কথা সরছিল না। পরিবারের লোকেদের কাছে আমি কী বলে ক্ষমা চাইব, আমি বুঝতে পারছিলাম না। জম্মু-কাশ্মীরের সুরক্ষা আমাদের হাতে নেই ঠিকই, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে, আমিই তো সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে এনেছিলাম। সবাইকে নিরাপদে ঘরে ফেরানোর দায়িত্ব আমারই ছিল। আমি পারিনি। আমার ক্ষমা চাওয়ার মুখ ছিল না। কী বলতে পারতাম আমি ওঁদের ? কী বলতাম ওই ছোট্ট ছেলেটাকে, যে তার চোখের সামনে তার বাবাকে রক্তাক্ত হয়ে মরতে দেখেছে ! কী বলতাম ওই বিধবাকে, যাঁর বিয়েই হয়েছিল মাত্র ৬ দিন আগে ! কী বলতাম …..

২. আমরা, কাশ্মীরিরা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত নই । এই হামলা, আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থল পর্যন্ত ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু সব অন্ধকার শেষে আলোর রশ্মি দেখা যায়। কোনও জঙ্গি হামলার পর, গত ২৬ বছরে আমি এভাবে সাধারণ মানুষকে পথে নেমে প্রতিবাদ করতে দেখিনি। কাঠুয়া থেকে কুপওয়ারা, মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে পথে নেমেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। মানুষ সোচ্চারে বলেছেন, এই হামলা কাশ্মীরিয়তের ওপর হামলা। আমাদের মাথা নত হয়ে গেছে। 

৩. আজ এই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে, এই মুহূর্তে পূর্ণ রাজ্যের দাবি তোলার মুখ আমার নেই। আমি কী করে মৃত ২৬ জনের শবের ওপর দাঁড়িয়ে এখন রাজ্যের দাবি তুলব ? রাজনীতি কি এত সস্তা ! এই ২৬ জন নিরীহ প্রাণের কি কোনও মূল্য নেই ! 

ঠিক বলেছেন ওমর সাহেব। আপনার মানুষের চামড়া আছে। আপনি ভদ্রলোকের রাজনীতির নুয়ে আসা গাছটায় জল দিলেন আজ। গাছটা বাঁচুক। আরও বাঁচুক। জানেন ওমর সাহেব, আমি বাঙালি তো, আজ আমার এক শুভ্রকেশ ভদ্রলোকের কথা খুব মনে পড়ছে। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আমার সশ্রদ্ধ সম্ভ্রমে বুদ্ধবাবু বলতাম। তিনিও আজ থেকে বহু বছর আগে আপনার মতোই দায় স্বীকার করেছিলেন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ডিওয়াইএফআইয়ের এক জনসভায়। ডান তর্জনী নিজের মাথায় ঠেকিয়ে বলেছিলেন, নন্দীগ্রামে গুলি চালনার দায় আমি মাথা পেতে নিলাম। বাঙালি তাঁকে তবুও ক্ষমা করেনি। 

সেই বাঙালি, জানেন ওমর সাহেব, যাঁরা, এই তো সেদিন মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের ওপর চূড়ান্ত অত্যাচার দেখল। দেখল কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করা হল পিতা পুত্রকে। সেই বাঙালি, যাঁরা শুধু দেখল না, কেউ ক্ষমা চাইলেন বা দায় স্বীকার করলেন। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে রক্ষার সাংবিধানিক শপথ সত্ত্বেও। 
সেই বাঙালি, জানেন ওমর সাহেব, দেশের ইতিহাসে সবথেকে বড় প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি চুরি দেখল। শিক্ষককে পুলিশের লাথি খেতে দেখল, শিক্ষককে রাস্তার ধুলোয় শুয়ে থাকতে দেখল। শুধু দেখল না, দায় স্বীকার। কেউ বলল না, ভুল হয়েছে, মাথা পেতে দায় নিচ্ছি। সততার সঙ্গে সংশোধনের চেষ্টা করব। 
সেই বাঙালি, জানেন ওমর সাহেব, যাঁরা মাঝে মধ্যেই রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ধরা পড়তে দেখে। তাদের কাছে এ রাজ্যের জাল ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড উদ্ধার হয়। সেই বাঙালি, জানেন ওমর সাহেব, যাঁরা গত এক দশকেরও বেশি ধরে দেখছে, অবৈধ অনুপ্রবেশে রাজ্যের জনবিন্যাস দ্রুত বদলে যাচ্ছে। সেই বাঙালি শোনে, সীমান্ত পাহারা দেওয়া তো বিএসএফের কাজ। কিন্তু, আপনার মতো কেউ বলে না, তাতে কী ? জাল ভোটার, আধার, রেশন কার্ড যাতে অনুপ্রবেশকারীরা না পায়, সেটা দেখা আমাদের কাজ। 

লজ্জা আসলে মানুষের ভূষণ। দায় স্বীকার, মহতের লক্ষণ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.