Header Ads

৩০ এপ্রিল কমিউনিস্ট দের কালো অধ্যায়

ত্রিশে এপ্রিল, কমিউনিস্টদের কালো অধ্যায়।
                 খগেনচন্দ্র দাস।
      
         ১৯৮২ সালের ৩০ শে এপ্রিল ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক রাজধানী, যার গর্বে বাঙালির মাটিতে পা পড়ে না সেই কলকাতার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন বাম সরকার তাদের চিরাচরিত কৌশল অবলম্বন করে আনন্দমার্গের সতেরোজন সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীকে নৃশংসতার চরমতম নিদৰ্শন রেখে হত্যা করেছিল। যার কোন বিচার হয় নি। অবশ্য আজকের যুগে 'বিচারের বাণী নীরবে কাঁদাটাই' স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে উঠেছে। ভারতবর্ষে এইমুহুর্তে কোটি কোটি মামলা বিচারের অপেক্ষায় আদালতে ঝুলে রয়েছে।  বিচার  না হওয়ার অন্যতম কারণ এই, যে শাসকের ছত্ৰছায়ায় হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়েছিল তারা একটি 'বৈজ্ঞানিক' তত্ত্বের ধারক ও বাহক। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের সব কাজকর্ম; সাংগঠিনক, প্রশাসনিক এমনকী খুনখারাপিতেও সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসৃত হয়,তাই আদালত তাদের শাস্তি দেওয়া দূরে থাক টিকিটিও ছুঁতে পারে না। তবে সাধারণ জনগণ   খুনিদের ঠিকই চিহ্নিত করে নিয়েছেন।
           আসুন দেখা যাক কেন আইন আদালত এই বামপন্থী বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আড়ালে থাকা খুনিদের ধরতে পারে না,কেন তারা এতটা নৃশংস আর তাদের তত্ত্বের উৎসই বা কোথায়। 
আসলে নানা ফন্দিফিকির করে মানুষ খুন করাটা ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগে থেকেই বামপন্থীদের  নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছিল। কখনও কৃত্ৰিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে,কখনও গুপ্ত খুন কখনও বা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে কাতারে কাতারে প্রকাশ্যে খুন চলেই এসেছে। তাদের মূল  সংগ্রাম যদিও বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে তথাপি মানুষ খুন করার সময় তারা কোন বাছবিচার না করে সযত্নে সাম্যবাদী নীতিই অনুসরণ করে । রাশিয়ার শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ইউক্ৰেনের কৃত্ৰিম দুর্ভিক্ষই হোক আর কাতিন অরণ্যের বাইশ হাজার পোল্যান্ডবাসীর হত্যাই হোক অথবা বেইজিঙের তিয়েনানমেন চত্বরের ছাত্র গণহত্যা,সব হত্যাযজ্ঞকেই তারা অত্যন্ত সুনিপুণভাবে রূপ দিয়েছে। পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া বা চিনের কমিউনিস্টদের সঙ্গে ভারতীয় কমিউনিস্টদের মৌলিক পার্থক্য এই যে,ওসব দেশের কমিউনিস্ট নেতারা কোটি কোটি মানুষকে হত্যার জন্য রীতিমত সরকারি আদেশ জারি করে (পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত এইরকম আদেশের বহু দলিল THE BLACK BOOK OF COMMUNISM পুস্তকে সংরক্ষিত আছে)আর ভারতীয় কমিউনিস্টরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে খুনের দায় অস্বীকার করে।  আরও একটি বড় পার্থক্য এই যে,ওসব দেশের কমিউনিস্টরা ভীষণ রকমের দেশভক্ত আর ভারতের কমিউনিস্ট মানেই স্বদেশের সমস্তকিছুর বিরোধী। এরা এতটাই দেশবিরোধী যে, ১৯৬২সালের চিনের ভারত আক্রমণকে এরা আজও উল্টো করে দেখায়। অথচ চিন বা রাশিয়া এদের কাছে পিতৃতুল্য।  
        ভারতীয় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গীয় বামপন্থীরা তাদেরই উত্তরসূরী। তাই ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সেই খুনের ধারাই ওরা এখানেও অব্যাহত রেখেছিল। সাঁইবাড়ি মরিচঝাঁপি,নানূর,নন্দীগ্রাম বা বিজনসেতু গণহত্যা সবই ওই একটিমাত্র উদ্দেশ্যেই বামপন্থীরা ব্যবহার করেছে। খুন হওয়া মানুষগুলির কেউই তথাকথিত বুর্জোয়া শ্রেণির নয় সকলেই ওরা যাদের প্রোলাতারিয়েত বলে সেই শ্রেণিভূক্ত। বামপন্থীদের খুনের বিশেষ বৈশিষ্ট এই যে,শুধু খুন নয় চরম নৃশংসতার মধ্য দিয়ে খুন করে সমাজকে ভীত সন্ত্রস্ত করে পদানত করে রাখাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। প্রত্যেকেটি খুনের মধ্য দিয়েই কমিউনিস্টরা একটাই বার্তা দেয়--- সাবধান! আমরা যা বলব তার অন্যথা করা চলবে না।
          গণহত্যার শিকার কেউ কেউ হয়তো বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিন্তুএদের সঙ্গে আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীদের হত্যা কেন? সন্ন্যাসী তো আর এমএলএ, এমপি,মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করে নি। আসলে এর অন্তর্নিহিত কারণ সন্ন্যাসীদের গুরু  আনন্দমূর্তি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত আদর্শ। পশ্চিমবঙ্গ বস্তুত মহাপুরুষ ও  ধর্মগুরুদের পীঠস্থান; কই কারও বিরুদ্ধেই তো বামপন্থীদের  এমন নৃশংসতা নেই! এর কারণ ব্যাখ্যা করার আগে  আনন্দমার্গীদের সঙ্গে বামপন্থীদের বিগত সময়ের কিছু ঘটনার উপর কিঞ্চিত আলোকপাত অত্যাবশ্যক।
     পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্টদের উত্থানের প্রারম্ভিক কালে, ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ সবেমাত্র নির্বাচন শেষ হয়েছে,জ্যোতি বসু যুক্ত ফ্রন্টের হাতধরে ক্ষমতার অলিন্দে ঢুকবেন। সেই সন্ধিক্ষণে বামপন্থী খুনীরা পুরুলিয়ার বাগলতা মৌজায় আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের নিৰ্মিয়মান আশ্রম আক্রমণ ও পাঁচজনকে নৃশংসভাবে খুন করে। যে ঘটনায় অনেকের দীর্ঘমেয়াদী শাস্তিও হয়। এরপরও যখন আনন্দমার্গকে দমানো যাচ্ছে না তখন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বামপন্থীশক্তির চাপে ইন্দিরা সরকার সিবিআইকে দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে  সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুকেই জেলে পুরে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছে। ( দ্ৰষ্টব্যঃ CELL NUMBER 13 BANKIPORE CENTRAL JAIL;  Suppression Repression Oppression of Ananda Marga, Arun prakash. Chapter 2.) কিন্তু কেন্দ্র রাজ্য উভয়কেই চমকে দিয়ে  আনন্দমূর্তি তাঁর অসাধারণ সাংগঠিনক দক্ষতা দিয়ে জেলের  চারদেয়ালের মধ্যে বসেই সংগঠনকে ছড়িয়ে দিলেন বিশ্বময়। 
            ১৯৬৭সালে যখন কমিউনিস্টরা পুরুলিয়ার আনন্দমার্গ আশ্রম আক্রমণ করে পাঁচজনকে খুন করে সেটা ভারতবর্ষে কমিউনিস্টদের উত্থানের প্রারম্ভিক কাল। প্ৰণিধানযোগ্য যে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিঙ জেলার "চিকেন নেক" সংলগ্ন নক্সালবাড়ি থেকেই গড়ে তোলা হয় কমিউনিস্ট আন্দোলন। কী আশ্চর্য সংযোগ, এই সেই "চিকেন নেক" যার উপর আজও চোখ রয়েছে ভারতবিরোধী বামপন্থী ও ইসলামিক শক্তিগুলির। আর এখানেই এদের সঙ্গে আনন্দমার্গের দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনগত পার্থক্য।  আনন্দমার্গ দর্শন পুরোপুরি প্রাচ্য সংস্কৃতি আধারিত বললে কম বলা হবে বস্তুত ভারতাত্মার বাণীই প্রতিফলিত হয়েছে আনন্দমার্গ দর্শনে। আর বামপন্থী দর্শন ঠিক তার বিপরীত অর্থাৎ এটি একটি সম্পূর্ণ জড়বাদী তত্ত্ব যার সঙ্গে ভারতীয় জীবনদর্শনের কোন মিলই নেই। এ প্রসঙ্গে নিবন্ধের পরবর্তী অংশে আলোচিত হয়েছে। 
      এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে,একই সময়ে যখন সেই চিকেন নেক সংলগ্ন নক্সালবাড়িতে বামপন্থীদের তথাকথিত কৃষক আন্দোলন দানা বাঁধছিল ঠিক তখনই  সমান্তরালভাবে নবগঠিত আনন্দমার্গ আদর্শও এই অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছিল। এটি নিছক কাকতালীয় না আনন্দমূর্তিজীর পরিকল্পিত ? আর এতেই ভীত সন্ত্ৰস্ত হয়ে বামপন্থীরা আনন্দমার্গকে ধ্বংস করার জন্য দাঁত নখ বের করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আনন্দমার্গের কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রভূমি পুরুলিয়ার আনন্দনগরে। তাদের ধারণা ছিল যে,এই কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দিলেই আনন্দমার্গ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
       এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের ধারণা হল যে, আনন্দমার্গ সংগঠনের মূলোৎপাটন করতে হলে  আনন্দমূর্তিজীকেই সরাতে হবে।
কৌশলগত বা অন্য কোন অজ্ঞাত কারণে আনন্দমূর্তি তখন থেকে অবস্থান করছিলেন তদানীন্তন বিহার ও বর্তমানের ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে। আর তাই সহযোগী হয়ে আসরে নামল দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী সরকার। সংঘ প্রতিষ্ঠাতাকে  জেলবন্দী অবস্থায় শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রচিত হল। ১৯৭১ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর ভোররাতে সিবিআই আনন্দমূর্তিজীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে। যা পরবর্তী সময়ে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি আনন্দমূর্তিজীর অসুস্থতার সুযোগে পাটনার বাঁকিপুর সেন্ট্রাল জেলের ভেতর ওষুধের নাম করে তাঁর শরীরে প্রাণঘাতী বিষ প্রয়োগ করা হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দৃষ্টিশক্তি ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অসুস্থতা দেখা দেয়,যা আর কোনদিনই সাড়ে নি।  কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ের অধিবক্তা অমরপ্রসাদ চক্রবর্তী ও ভক্তিভূষণ মণ্ডল এই দুই সদস্য দ্বারা গঠিত বেসরকারী তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে প্রাণঘাতী বিষ প্রয়োগের উল্লেখ রয়েছে--- DARKNESS OF DOGMA FEARS FLAME OF ILLUMINATION by Arun Prakash. Page 597 দ্রষ্টব্য। 
          এই সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ করেও যখন একটি আধ্যাত্মিক ও আর্থসামাজিক সংগঠন দুর্বার গতিতে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ ও বৌদ্ধিক সমাজের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল ঠিক তখনই  ১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্ৰিলের এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। 
    আসুন বিশ্লেষণের চেষ্টা করা যাক এই সংগঠনের প্রতি বামপন্থীদের এই প্রতিহিংসাপরায়ণতার কারণ কী। মার্ক্সবাদ প্রসঙ্গে আধুনিককালের মৈত্রেয়ী গৌরী ধর্মপাল একটি অত্যন্ত প্ৰণিধানযোগ্য উক্তি করেছেন তিনি বলেছেন---"যে মার্ক্সবাদের প্রভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা স্বদেশের অতীত সম্পর্কে উদাসীন অবিশ্বাসী বিদ্বিষ্ট এবং সেক্যুলিরিজমের আঁচলের আড়ালে অপব্যাখ্যামুখর, সেই মার্ক্সবাদের লালনভূমি, কুরুক্ষেত্র এবং শ্মশানভূমিতেই বিজ্ঞানীরা নিষ্পক্ষবাদ দৃষ্টিতে তত্ত্বদর্শন করতে গিয়ে ঋষিপ্রজ্ঞার গোপন মহাদেশগুলি আবিষ্কার করছেন এবং তাঁদের বিস্ময় গোপন রাখছেন না---এ পৃথিবীর পক্ষে বড় আশার কথা।আর আমাদের পক্ষে বড়ই লজ্জার কথা। (গৌরী ধর্মপাল রচনাসমগ্র ৩ পৃঃ ৪২২) তাঁর এই উক্তির একটি ঐতিহাসিক কারণ এই যে,১৮৫১ সালে জার্মান সাহিত্যিক লুই ব্লঁ (ব্ল্যাংক) একটি শ্লোগান সৃষ্টি করেন যা পরবর্তীকালে কার্ল মার্ক্সের দৌলতে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং মার্ক্সীয় তত্ত্বের একটি অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে গৃহীত হয়। "To each according to his ability and to each according to his needs. " অর্থাৎ প্রত্যকেই সামর্থ অনুসারে শ্রম দেবে আর প্রয়োজন অনুযায়ী পারিশ্রমিক নেবে। অথবা মার্ক্সের Equal distribution বা সমতার তত্ত্ব সর্বত্রই বৈদিক চিন্তারাজির সুস্পষ্ট প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়,যা মার্ক্স সাহেবের আগমনের বহু হাজার বছর আগে এদেশের ঋষিগণ ভেবেছিলেন। আমরা তার দুটি উদাহরণ উদ্ধৃত করছি যার উল্লেখও শ্রীমতী ধর্মপাল করেছেন।  
" সমানী প্রপা সহ বোহন্নভাগঃ সমানে যোত্রে সহ বো যোনজিম।
সম্যঞ্চোঽগ্নিং সপর্ষতারা নাভিমিবাভিতঃ।।" অথর্ব বেদ ৩/৩০/৬ ( হে সমানতাকাঙ্ক্ষী মনুষ্যগণ! তোমাদের ক্ষুধার অন্ন ও তৃষ্ণার জলের উপভোগ সমান [বা একইরকম] হোক। আমি তোমাদের এক প্রেম-সূত্রে বন্ধন করছি। যেমন চক্রের অর বা কীলগুলি [গুঁজগুলি] নাভিকে [অর্থাৎ মধ্যমণ্ডলকে] আশ্রয় করে থাকে, তেমনই তোমরা সকলে এক অগ্নির আশ্রয়ে অবস্থান পূর্বক তাঁর সেবা করো।)

আমার "কৃষন্নিৎফাল  আশিতং কৃণোতি যন্বধানমপ বৃংক্তে চরিত্রৈ। 
বদন্ ব্রহ্মাবদতো বনীয়ান্ পুণন্নাপিরপৃণন্তমভি ষ্যাৎ।।" ঋগ্বেদ ১০/১১৭/৬ 
(যাচককে অবশ্য ধন দান করবে। সে দাতা ব্যক্তি অতি দীর্ঘ পথ প্রাপ্ত হয়।রথের চক্র যেমন ঊর্ধ্বাধোভাবে ঘূর্ণিত হয় সেরূপ ধন কখন এক ব্যক্তির নিকট,কখন অপর ব্যক্তির নিকট গমন করে অর্থাৎ এক স্থানে চিরকাল থাকে না।)বেদের এই সাম্যবাদী চিন্তার প্রতিফলনই কিছুটা বিবর্তিত রুপে কার্ল মার্ক্সের তত্ত্বে দৃশ্যমান হয়েছে, একথা কি অনস্বীকাৰ্য নয়?
      আনন্দমার্গ আদর্শ শুধুমাত্র ভারতীয় প্রাচীন সংস্কৃতির আধারে সৃষ্ট একটি আধ্যাত্মিক তত্ত্ব নয় এর পরিধি আরও অনেক বেশি বিস্তৃত। এর প্রবক্তা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্তিজী তাঁর দর্শনে আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে আর্থসামাজিক তত্ত্বের সংযোজন  ঘটিয়ে অভিনবরূপে উপস্থাপন করেছেন। সমাজ,অর্থনীতি ও আধ্যাত্মিকতার পুনর্বিন্যাস ব্যতিরেকে মানবসমাজের পক্ষে আর্থিক প্রগতি ও পরমার্থ লাভ কোনটাই সম্ভব নয়। এই চিন্তা থেকেই তিনি প্রবর্তন করেছেন আর্থসামাজিক দর্শন "প্রাউট" বা প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব। এটিরও উৎসভূমি সেই বেদ। কিন্তু মার্ক্সবাদের সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য এই যে,কার্ল মার্ক্স তাঁর তত্ত্বকে বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত আদর্শবান মানুষ তৈরির কোন পরিকল্পনা করেন নি। বরঞ্চ প্রোলাতারিয়েত নেতৃত্ব সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন তা এককথায় হাস্যকর 
অন্যদিকে প্রাউট প্রবক্তা তাঁর তত্ত্বকে বাস্তবায়নের জন্য যে উচ্চ আদর্শ সম্বলিত সৈনিক আবশ্যক সেটিরও ব্যবস্থা করেছেন। তাই স্থূল বুদ্ধির মার্ক্সবাদীরা প্রথমে ১৯৬৭ সনে ভেবেছিল যে, সংস্থার কেন্দ্র যে ভূমিতে সেটি ভেঙ্গে দিলেই আনন্দমার্গ ধ্বংস হয়ে যাবে। সফল না হয়ে তাদের ধারণা হল যে, শ্রীশ্রীআনন্দমূর্তিজীই সমস্তকিছুর মূলে তাই ১৯৭৩ সালে চেষ্টা হল তাঁকেই শেষ করার; সেখানেও ব্যর্থতা। সবশেষে তাদের চিন্তা হল যে, সংগঠনের আসল কারিগর এই সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী কৰ্মীবৃন্দ সুতরাং ১৯৮২ সালে মরিয়া হয়ে বামপন্থীরা সুপরিকল্পিত ভাবে সংগঠিত করল বিজনসেতুর সেই নারকীয় নরসংহার। উদ্দেশ্য যাতে হত্যাযজ্ঞের বীভৎসতা দেখে পরবর্তীকালে আর কেউ এই সংগঠনের কর্মী হতে সন্ন্যাস নিয়ে এগিয়ে আসার সাহস না দেখায়। সেই বীভৎসতার রূপ আরও নগ্নরূপে তুলে ধরেছিলেন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু যখন তিনি তাঁর বাড়ি থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বের ঘটনাস্থলে যাওয়াটুকু পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করেন নি।
        জড়বাদী বামপন্থীদের সমস্ত পরিকল্পনাকে ভুল প্রমাণিত করে একটি সর্বাঙ্গসুন্দর মানবসমাজ সংরচনার দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য আদর্শবান যুবকযুবতী নিরন্তর এই বিশাল আদর্শের ছত্রছায়ায় সমবেত হয়ে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্তিজীর স্বপ্ন "মানবসমাজ এক ও অবিভাজ্য" এই একটিমাত্র সত্যকে বাস্তবায়িত করার বিশ্বব্যাপী কর্মযজ্ঞে নিজেদের আহুতি দিয়ে চলেছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.