Header Ads

বিজেপি জোট সরকার বাঙালি স্বার্থ বিরোধী কাজ করছে : সভাপতি দীপক দে

নয়া  ঠাহর  ,গুয়াহাটি ,কোলকাতা ;, ১২ নভেম্বর:: "অসম সহ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালিরা সর্বস্তরে বঞ্চিত। বাঙালির প্রকৃতিগত সমস্যার পরিবর্তে অসমের বর্তমান বিজেপি জোট সরকার কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিজেপি শুধু মাত্র একটি দল। আমরা বিজেপি দলকে সমালোচনা করছি না। কিন্তু বিজেপি জোট সরকার হিন্দু বাঙালির স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করাই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত।"
আজ গুয়াহাটির দিসপুর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সারা অসম বাঙালি যুবছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি দীপক দে এই মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, ধলা সদিয়ায় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পাঁচ জন হিন্দু বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও আজ পর্যন্ত ওই পরিবার গুলো কোনো বিচার পায় নি। বিজেপি সরকারের শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী থাকার পরও তাঁরা বঞ্চিত বিচার থেকে বঞ্চিত। ওদিকে, হিন্দু বাঙালি দের নানা ভাবে বঞ্চিত করার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, ঢেকিয়াজুলীতে বিজেপির প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন একজন বাঙালি। অথচ তাঁকে দলীয় বিভিন্ন কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অসমের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হিন্দু বাঙালির অবদান অনস্বীকার্য। তা সত্ত্বেও বাঙালিরা চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের হিন্দু বাঙালিদের রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা এসে পড়েছে। একই সঙ্গে বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর  জন্য একটি অরাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করতেই আজ গুয়াহাটিতে এক সভা আহ্বান করা হয়েছে। 
বলাবাহুল্য, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড সহ অসমের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিদের নিয়ে এখানে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সিআরপিসি-র সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন পাল প্রয়াত গোলাম ওসমানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, অসম হচ্ছে সংখ্যালঘুদের এক রাজ্য। এ রাজ্যে কোনও জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯০১ সালে অসমিয়া ভাষী মানুষ ছিলেন ২২ শতাংশ, ১৯১১ সালে ২১.৭ শতাংশ, ১৯২১ সালে ২১.৬ শতাংশ, ১৯৩১ সালে ২১.৬ শতাংশ এবং ১৯৫১ সালে ৫৬.৭ শতাংশ। সেবছর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কিছুসংখ্যক মুসলিম অসমিয়া মাতৃভাষার পরিচয় দেওয়ার ফলে অসমিয়া ভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে। সুরমা উপত্যকায় কাছাড় ও সিলেট নিয়ে ১৯৩১ সালে বাংলাভাষী ছিলেন ২৮,৪৭,৪৫৪ জন। বিপরীতে অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা ছিলেন ৩,৬৯২ জন। ওদিকে, অসম উপত্যকায় অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা ছিলেন ১৯,৭৮,৮২৩ জন ও বাংলাভাষী ছিলেন ১১,০৫,৫৮১ জন। মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা  বরপেটায় স্বীকার করেছেন যে বর্তমান অসমে মাত্র ২৫ শতাংশ অসমিয়া ভাষীর মানুষ রয়েছেন। সুতরাং সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও বিজেপি সরকার শাসন ক্ষমতায় এসে হিন্দু বাঙালি ও মুসলমান জনগোষ্ঠীকে চূড়ান্ত ভাবে শোষণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা ঝারখণ্ডের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মুসলিমদের টার্গেট করে বক্তব্য দিচ্ছেন, যদিও তাঁর প্রকৃত লক্ষ্য হচ্ছে হিন্দু বাঙালি। কারি সেখানে ৪০ শতাংশ বাংলাভাষী রয়েছেন।অসমের হিন্দু বাঙালির নাগরিকত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলার নেশায় বুঁদ হয়ে এখন ঝারখণ্ডের বাঙালির ভাগ্যে অমানিশা নামিয়ে আনতে চাইছেন। বিজেপি সরকার শাসন ক্ষমতায় আসার পর নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে আইএলপি চালু করেছে। এই ইনার লাইন পারমিটের দরুণ বাঙালির ভোগান্তির শেষ নেই। সম্প্রতি কার্বি আংলঙেও ইনার লাইন পারমিটের দাবি তুলেছে বিজেপি। হাতে না মেরে ভাতে মারার ষড়যন্ত্র করছে হিমন্তবিশ্বের সরকার। নাগরিকত্ব আইনে যে নয় টি রুল্স বানিয়েছে, তার মাধ্যমে হিন্দু বাঙালিরা নাগরিকত্ব পাবেন না। এই আইন দেখিয়ে স্রেফ ভণ্ডামি ও প্রতারণা করেছে বিজেপি, চিত্তরঞ্জন পাল বলেন।
গুয়াহাটি হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট সহদেব দাস বলেন, নিজেদের মধ্যে অনেকের দরুণ বাঙালির আজ এমন অবস্থা। আজ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বাঙালির ভবিষ্যত অন্ধকার। প্রয়াত হিতেশ্বর শইকীয়ার আমলে চার পাঁচ জন মন্ত্রী ছিলেন। অথচ হিন্দুত্ববাদী সরকারের মন্ত্রীসভায় বাঙালির প্রতিনিধি শূন্য। নাগরিকত্ব আইন দিয়ে বাঙালির কোনো লাভ হবে না। গুয়াহাটি খানাপাড়া মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন,অর্জুন নমঃশূদ্রের মৃত্যু বিফলে যাবেনা। অথচ কা-র মাধ্যমে বাঙালিদের বিদেশি বানানোর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। ইমিগ্র্যান্টস এক্সপালসন অ্যাক্ট ১৯৫০ আইন টি বাতিল করে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে বিজেপি সরকার। বিপ্লব কুমার শর্মা কমিটির সুপারিশ দেখিয়ে তফশিল সম্প্রদায়ের মানুষদের ট্রাইবেল বেল্ট ও ট্রাইবেল ব্লক থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে এই সরকার। ওদিকে, শিলাদিত্য দেব হিন্দু বাঙালির সমস্যার কথা না বলে শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে উগ্র বক্তব্য দিয়ে বাঙালির মধ্যে বিভাজন আনছেন। 
মেঘালয় লিঙ্গুইস্টিক মাইনোরিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি সুশীত কান্তি চৌধুরী বলেন, ১৯৭৯ সাল থেকেই মেঘালয়ে হিন্দু বাঙালির ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। বাঙালির মধ্যে পরশ্রীকাতরতা বেশি হওয়ার দরুনই ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে বাঙালি এখন ঘৃণার পাত্র। নিজস্ব শক্তিশালী সংগঠন না থাকলে এরা বেঁচে থাকতে পারবে না। 
নাগাল্যান্ড মাইনোরিটিজ ফোরামের চেয়ারম্যান বিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, নাগাল্যাণ্ডে এখন বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। তাহলেই আর চাকরি পাওয়ার প্রশ্ন আসে না। বর্তমানের আইন অনুসারে কেউ নতুন করে সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন না। এমনকি, ১৯৬০ সালে ক্রয় করা সম্পত্তিও ষড়যন্ত্র করে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে আরও বলেন, এমন আইন বিজেপি আমলে কার্বি আংলঙ ও বিভিন্ন অটোনোমাস কাউন্সিলের অঞ্চলে প্রয়োগ করবে। বাঙালি হিন্দু মুসলমান নিয়ে বসে থাকুন। বরপেটা রোডের প্রদীপ দেবনাথ নয়াদিল্লি গিয়ে আন্দোলন করার পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত, সভায় বিজয় চক্রবর্তী, প্রদীপ সেনশর্মা, শুভ্রাংশু দেব, ঝন্টু দাস, কিশোর দাস, চিরাং জেলার বিশ্বজিৎ দাস, কার্বি আংলঙ বাঙালি সমাজের সাধারণ সম্পাদক অজিত দাস, রিটায়ার্ড এস পি প্রদীপ রঞ্জন কর, রিটায়ার্ড আই আর এস নিবাস দাস প্রমুখেরা বক্তব্য দেন। 
উল্লেখ্য, সারা অসম বাঙালি যুবছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত আজকের সভায় সর্বসন্মতিক্রমে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল কে সামিল করে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী সভায় এই সংগঠনের নামাকরণ করা হবে। বাঙালির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মোকাবেলা করার পাশাপাশি বাঙালিদের রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করবেন এই সংগঠনের নেতারা। আজকের সভায় একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন পাল কে মনোনীত করার পাশাপাশি এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ক্রমে সুশীত কান্তি চক্রবর্তী, বিষ্ণু ভট্টাচার্য, প্রসেনজিৎ পাল চৌধুরী, কমলাকান্ত পাল, রামচন্দ্র হাজং, প্রদীপ সেনশর্মা, প্রদীপ রঞ্জন কর, শুভ্রাংশু দেব, শুভদীপ দত্ত, সিতু নাথ, বিশ্বজিৎ দাস, প্রদীপ দেবনাথ, অজিত দাস,স্বর্ণালী চৌধুরী, চন্দন পাটিকর, শীর্ষেন্দু সীঁ, সান্ত্বনু মুখার্জি, ঝ  ন্টু দাস ও কিশোর দাস।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.