কান্দি মহকুমা র জজানে গাজন উৎসব
কান্দি মহাকুমার জজানে সোমেশ্বরের গাজন উৎসব ও দেবী সর্বমঙ্গলার শোভাযাত্রা l
জয়শ্রী বসু
পশ্চিমবঙ্গে গাজন উৎসব মূলত শিবকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার অন্তর্গত জজান গ্রামে গাজন উৎসবে শিব ও শক্তি সমান গুরুত্বপূর্ণ l সোমেশ্বর শিব কে কেন্দ্র করে গাজন উৎসবের শুরু এবং সমাপ্তি হয় চৈত্র সংক্রান্তির আগের রাতে দেবী মা সর্বমঙ্গলার শোভাযাত্রা সহ গ্রাম প্রদক্ষিণের সঙ্গে যা প্রায় বিজয় উৎসবের মত l
দেবী মা সর্বমঙ্গলার এই শোভাযাত্রার শুরু হয় রাত্রি বারোটায় l প্রাচীনকালে তোপের আওয়াজে বোঝা যেত শোভাযাত্রা শুরু বা মা সর্বমঙ্গলা মন্দির ছেড়ে দোলায় চেপে গ্রাম প্রদক্ষিনে বেরোলেন l বর্তমানে সরকারি শব্দ নিয়ন্ত্রণ মেনে নিয়ম রক্ষা করে তোপের আওয়াজ করে শোভাযাত্রা শুরু হয়--- প্রাচীনকালের মতোই ঠিক রাত বারোটায় l মায়ের গ্রাম প্রদক্ষিণে শোভা যাত্রার শুরুতেই একজন মঙ্গলমশাল হাতে নিয়ে এগিয়ে যান l সেই মশাল থেকেই গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ির মঙ্গলদীপ জালানো হয়। নানাবিধ সমারোহে বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রায় দেবী সর্বমঙ্গলার সঙ্গে মিলিত হয় জনসমুদ্র l মন্দিরের পূজারী ,পান্ডা ,কার্যনিরবাহকগণ এবং ভক্তগণের ভিড়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্তে যে জনজোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাতে বাংলার কীর্তন ও লোকসংস্কৃতির নানা প্রকারের নিদর্শন এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার বৈচিত্র ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে l এই বিচিত্র শোভাযাত্রা সহ ""মায়ের ""বা দেবী সর্বমঙ্গলার গ্রাম প্রদক্ষিণ সম্পূর্ণ হতে প্রায় শেষ রাত হয়ে যায় l গ্রাম প্রদক্ষিনের পর ওই রাতের শেষেই মন্দিরে মা সর্বমঙ্গলার প্রবেশের পরই মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায় l সংক্রান্তির দিন মন্দির বন্ধ থাকে ও সেইদিন মায়ের উপবাস l ""মায়ের"" মন্দির খোলে নতুন বছরের প্রথম দিন বা বাংলা ক্যালেন্ডারের পয়লা বৈশাখের ভোর চারটেয় l চৈত্র মাসের শেষ চারদিন জজান গ্রাম এই নামে বা ভাবে চিহ্নিত ------ চোরা জাগরণ , জাগরণ , মায়ের গা ফেরা ও মায়ের উপবাস l
বাংলা নতুন বছরের শুরু হয় ভোর চারটেয় মায়ের স্নান, অভিষেক ও নানাবিধ পুজো অর্চনা ভোগ রাগাদির মাধ্যমে l মায়ের উপবাস ভঙ্গ হয় ক্ষীরের মিষ্টি দিয়ে l জজান গ্রামের লোক ছাড়াও আশেপাশের গ্রাম থেকে ও অনেকে ঐদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ দেবী সর্বমঙ্গলার কাছে পুজো দেন ও সন্ধ্যা বেলায় প্রসাদ গ্রহণ করেন l প্রসঙ্গত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সোমেশ্বর শিবের ভক্তরা গাজন উৎসবের কয়েকটা দিন অত্যন্ত সাত্ত্বিক জীবন যাপন করেন। বিশেষ ছন্দে ঢাকের তালে নৃত্য প্রদর্শন করেন দেবী সর্বমঙ্গলা ও সোমেশ্বরের মন্দির চত্বরে যা অনবদ্য l সমবেত ভক্তদের "হর হর মহাদেব "ধ্বনি সমগ্র গ্রামকে ভক্তি রসে আপ্লুত রাখে l গ্রামের প্রতিটি গৃহের প্রতি সদস্য গ্রামের রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেন যা খুবই কঠিন বর্তমান যুগের ব্যস্ত জীবনযাত্রার মধ্যে l শিবের ভক্তরা গঙ্গা স্নানের মাধ্যমে তাদের ভক্ত হওয়ার প্রথম সোপান পার করার পর বাড়ির সঙ্গে খাদ্য বাসস্থানের কোন সম্পর্ক রাখেন না গাজন উৎসবের সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত l কঠিন ব্রত সমৃদ্ধ এই ভক্তরা দেবী সর্ব মঙ্গলার শোভাযাত্রায় ও অংশগ্রহণ করেন l
এ এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র--- শিব ও শক্তি এবং সমগ্র মানব সমাজের , বর্ণ, শ্রেণী যেখানে অবান্তর -- মানুষই সত্য l জয়শ্রী বসু বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রবাসে থাকেন কান্দি জ জান অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় আছে








কোন মন্তব্য নেই