Header Ads

প্রাক নির্বাচন। পর্য্যলোচনা ডিব্রু গড়

প্রাগ নির্বাচনী পর্যালোচনা
             Bijoy  chakraborty। Hojai  প্রতিবেদন -৩
১৩ নং ডিব্রুগড় লোকসভা সমষ্টি।
" নানা জাতী উপ জাতী রহনিয়া  এই কৃষ্টির "অন্যতম দৃষ্টান্ত ১৩ নং ডিব্রুগড় লোক সভা সমষ্টি। এই সমষ্টি মনমুগ্ধ কর প্রাকৃতিক সুন্দর্যের সাথে প্রাকৃতিক রত্ন ভান্ডারও। হিমালয় পর্বত মালার পাদদেশের উদিত সূর্যের দেশ অরুণাচল প্রদেশ ঘেঁষা এই  সমষ্টির পাটকই পর্বতের পাদদেশের লিডু মার্গারিটার গর্ভে আছে কালো হীরার(কয়লা ) অফুড়ন্ত ভাণ্ডার , আছে সভ্যতা বিকাশের অন্যতম ধারক ও বাহক খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসেরও (PETRO PRODUCT'S)ভাণ্ডার। এশিয়ার প্রথম সর্ববৃহৎ তেল শোধনাগার এই সমষ্টির ডিগবয়ে অবস্থিত। নামরূপে অবস্থিত ভারতের সর্ব বৃহত সার কারখানা। সারা সমষ্টিকে চির সবুজ করে রেখেছে একটি পাতা দুটি কলি চা বাগান- সে কি অপরূপ দৃশ্য।
        তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বড়াইল পর্বতমালার পেট চিরে আসামের প্রথম রেল লাইন এসে ঠেকেছিল ডিব্রুগড় শহরের নাতিদূরে কলো হীরার ভাণ্ডার লিডুতে। ডিব্রুগড়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল আধুনিক আসামের আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ,ডিব্রুগড়ই আসামের শিল্প বিপ্লবের আতুর ঘর। এই আতুর ঘরের উপর দিয়েই পাটকই গিরিপথ অতিক্রম করে শন দেশীয় এক রাজকুমার চাওলুং ছুকাফা মহিলা বিহীন এক বৃহত পদাতিক বাহিনী নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে ১২২৬ সনে আসামে এসে একটি রাজ্য স্থাপন করেন। ইতিহাসের পাতায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নাম আহোম  রাজ্য। ইয়ান্ডাবো সন্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাওলুং ছুকাফা প্রতিষ্ঠিত অহম/ আসাম বোনাস হিসেবে লাভ করে। ব্রিটিশ বণিকদের হাত ধরে তাদেরই স্বার্থে আসামে শুরু হয় অধুনিক শিল্প স্থাপন -  ঘটে প্রব্রজন । অবিভক্ত ভারতে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে বৃটিশ বনিকরা নিয়ে আসে চা শ্রমিক। চা শ্রমিকদের অধিকাংশই আনা হয় সাঁওতাল পরগনা, ছত্তিশগড়,বিলাসপুর,উড়িষ্যার, ও দক্ষিণ ভারত থেকে। অফিস স্টাফ, বাগান বাবু/ টিলা বাবুদেরকে আনা হয়েছিল বঙ্গ প্রদেশ থেকে। চা বাগান স্থাপন নিয়ে একটি সুন্দর গানের ক্য়েকটি কলি এই রূপ "ও যদুরাম ফাঁকি দিয়া অনিলি আসাম। বাবু বলে কাম কাম, সর্দার বলে ধরি আন, সাহেব বলে লিব পিঠের চাম। ও জেডুরাম , ফাঁকি দিয়া আনিলি আসাম।"   বৃটিশ আমলে রেল লাইন লাইন বসানো হয়েছিল চা, খনিজ তেল, কয়লা, বনজ সম্পদ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ইংলণ্ডে নেবার জন্য। প্রাগ নির্বাচনী পর্যালোচনায় এত কথা লেখার কারন আসাম কি ভাবে নানা জাতী উপ জাতীর বাসস্থান হয়ে উঠল। বিভিন্ন জাতী উপ জাতী ও ভাষাভাষীর সমন্বয় ও সংমিশ্রনে কিভাবে আধুনিক অসমীয়া জাতি গড়ে উঠেছে তার সম্যক ধারণা তুলে ধরার জন্য।
          ১৬ লক্ষাধিক ভোটারের এই লোকসভা কেন্দ্রে আহোম/ অসমীয়া ভোটার ছয় লাখের উপর। চার লাখ চা শ্রমিক ভোটের বিপরীতে প্রায় তিন লাখ হিন্দু বাঙালি ভোটারও আছে। এক লক্ষাধিক হিন্দি ভোটার ছাড়াও আছে নেপালি ,পাঞ্জাবী ভোটারও। ৮৫% হিন্দু ভোটারের বিপরীতে ১০% মুসলীম ভোট ছাড়াও আছে খ্রীষ্টিয়ান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মাবম্বী ভোটও। এই সমষ্টিতে আছে কিছু জনজাতীয় ভোটও। লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন AASU র প্রাক্তন দুই নেতা তাঁরা হলেন AASU র প্রাক্তন সভাপতি, আসাম বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি, AGP র প্রাক্তন সাংসদ,আসামের প্রাক্তন তথা  আসাম বিজেপির প্ৰথম মুখ্যমন্ত্রী, বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোওয়াল, অন্যজন AASU র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক , আসমে CAA বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ, অসম জাতীয়  পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লুরিন জ্যোতি গগৈ তিনি তথাকথিত I,N,D,I,A জুটের প্রার্থী । তৃতীয় কংগ্রেস ত্যাগী কংগ্রেসের প্রাক্তন যুব নেতা, যাঁর পিতা প্রায়ত রামেশ্বর ধানোয়ার আসাম মন্ত্রী ছিলেন,  কংগ্রেস DNA বহন করা, চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের মার্জিত, অমায়িক ও শিক্ষিত যুবক AAP প্রার্থী মনোজ ধানুয়ার। ত্রি কোনি লড়াইয়ে বিজেপি প্রার্থী মাননীয় সর্বানন্দ সনোয়াল সংগঠননিক শক্তি ও জনপ্রিয়তা ও প্রচারে সকল প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে। জয় নিশ্চিত জেনেও কংগ্রেস বিধায়ক মুক্ত এই লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিজন বিজেপি বিধায়ক সর্বানন্দের হয়ে বিরাম হীন প্রচার চালাচ্ছেন । ডিরুগড়ের বর্তমানের সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, চা শ্রমিক নেতা দলীয় টিকিট না পেয়েও সতীর্থ মন্ত্রী বিজেপি প্রার্থীকে নিয়মিত ভাবে সঙ্গ দিচ্ছেন। কংগ্রেস রাজনীতিতে যা অকল্পনীয়। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ড: হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও এই সমষ্টিতে পালা করে প্রচার চালাচ্ছেন। অন্য দিকে অসম জাতীয় পরিষদের I,N,D, I, A সমর্থিত প্রার্থী লুরিন জ্যোতি গগৈর হয়ে কংগ্রেস দলের হেভি ওয়েট কোনও তারকাকে তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না। লুরিন এর সাথে কংগ্রেস দলের পতাকার সাথে CPIM ও CPI দলের পতাকাও দেখতে পাওয়া যায়।CAA বিরোধী ভোটই লুরিনার ভরসা।
        মনোজ ধানওয়ার AAP হওয়া সত্বেও I,N,D,I, A জোটের বাইরে থেকে একক ভাবে তাঁর অনুগামী নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর মূল প্রচার বাগানে বাগানে। তাঁর হয়ে APP এর সর্ব ভারতীয় নেতা দিলীপ পান্ডে ও দিল্লীর শিক্ষা মন্ত্রী মাননীয়া আতিশী ইতি মধ্যেই প্রচার চালিয়ে দিল্লী উড়ে গেছেন।APP প্রধান দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজিরিওয়াল বিজেপি সরকারের হিংসার শিকার হয়ে জেল বন্দী হওয়ায় দিল্লীর সাথে আসামেও প্রভাব পড়েছে।  তবু,ধানুয়ার অনেকটা ব্যাকফুটে থেকেও সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছেন। 
         দেখা যাক কার কত ভোট কে পেতে পারেন:-
আহোম/অসমীয়া, জনজাতি সম্প্রদায়ের ভোট কাষ্ট রেট কম। মোট ভোটের ৭০% কাষ্ট হলে চার লাখ ৮০/৯০ হাজার কাষ্ট হতে পারে । অতীতের প্রবণতা, এবং বর্তমান নির্বাচনি আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে কাষ্ট ভোটের ৬০% বিজেপির পক্ষে যেতে পারে। যদি যায় ,তাহলে বিজেপির পাবে ২ লাখ ৭৬ হাজর ভোট। বাকী ভোটের ৮০% কংগ্রেস/AJP পক্ষে গেলে লুরিন পাবেন ১লাখ ৬০হাজার। চা শ্রমিক ভোট যদি ৭০% কাষ্ট হয় তাহলে ভোট পড়বে ২লাখ ৮০হাজার। কাষ্ট ভোটের ৫০% APP পেলে ধানুয়ারের ঝুলিতে হয়ত যাবে ১ লাখ ৪০হাজার । বাকি ভোটের ৬০%  বিজেপিতে গেলে বিজেপি পাবে ৯০ হাজার, লুরিন পেতে পাবেন ৫০ হাজার। মুসলিম ভোট ৯০% কাষ্ট হলে কাষ্ট ভোটের৮০% লুরিন পেলে তাঁর ঝুলিতে পড়বে ১লাখ ৩০/৩৫ হাজার ভোট, ২০হাজার বিজেপি,২০ হাজার APP। 
       লুরিন CAA বিরোধীর অন্যতম মুখ, তাঁর সহযোগী যুদ্ধা বাঙালি বিদ্বেষী রাইজর দলের প্রধান বিধায়ক অখিল গগৈ, সমর্থক লাচিত সেনা হওয়ায় হিন্দু বাঙালি ভোট তিনি আদৌ পাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ২০১৬সনের পর থেকে কংগ্রেস বাঙালি হিন্দুর নাগরিকত্বের প্রশ্নে নেতি বাঁচক ভূমিকা নেয়ায় এই সম্প্রদায় কংগ্রেস থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে দেশে একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে বিশেষ করে আসামে কংগ্রেস বাঙালি হিন্দুর চোখের বালি হয়ে গেছে। আসামে কংগ্রেস উগ্র বাঙালি বিদ্বেষী AASU,AAMSU,AJYCP জাতীয় সংগঠনের সাথে CAA বিরোধীতায় আন্দোলনে অংশ গ্রহন করায় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় কংগ্রেসের উপর অস্থা হারিয়েছে। এক সময় এই সম্প্রদায় বামপন্থী বিশেষ করে CPIM এর সমর্থক ছিল -CPIM এর উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদ বিরোধী স্থিতির জন্য। কিন্তু বাম পন্থীদের ডিগবাজির জন্য বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় বাম ছেড়ে এখন রামে আকৃষ্ট। ডিব্রুগড় লোকসভা সমষ্টির তিনসুকিয়া , ডিগবয়, মকুম, দুলিয়াজান, লিড়ু, মার্গারিটা, ডিব্রুগড় শহরে গড়ে ৩০% বাঙালি হিন্দু। তাছাড়াও উক্ত শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রচুর অনুসূচীত বাঙালি সমর্দায়ের লোক আছেন। তাঁরাও নিরাপত্তার স্বার্থে বিজেপি মুখি, অনেকটা রামের কৃপা যদিও বিজেপি সরকারের বহু সিদ্ধান্ত বাঙালির হিতের পরিপন্থী। তাই বাঙালি ভোট যদি ৭০% কাষ্ট হ্য় তাহলে IMDT আইনের নিকেশকারী হওয়া সত্বেও ৯০% ভোট সর্ব্বানন্দের ঝুলিতে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল অর্থাত্ বাঙালি হিন্দুর কাষ্ট ভোটের ১লাখ ৮০ হাজার ভোট বিজেপি প্রার্থী পেয়ে জেতে পারে। এভাবেই যদি ভোট হয় তাহলে বিজেপি প্রার্থী পেতে পারেন সর্বাধিক ৭ লক্ষ ভোট,I,N,D,I,A জোটের প্রার্থী AJP পেতে পারেন সর্বাধিক ৫ লক্ষ ভোট,APP প্রার্থী পেতে পারেন সর্বাধিক ৩ লক্ষ ভোট। নির্বাচনি আবহাওয়ায় এই আভাস দিচ্ছে। ভোট দিন আরো কয়েক দিন বাকি আছে। ভোটে জনগণই শেষ কথা বলবে। কাল বৈশাখী আসলে সব হিসেব, পূর্বানুমান উল্টেও দিতে পারে।
  কংগ্রেস চা শ্রমিকদের ভোট ঘুরিয়ে আনার জন্য বাগানে বাগানে কংগ্রেস, জনজাতী ভোটের জন্য চাঙ্গে চাঙ্গে কংগ্রেস, মুসলমান ভোটের জন্য চরে চরে কংগ্রেস এবং মূল অসমীয়া ভোটের জন্য উগ্র CAA বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি রূপে দাড়িয়েছে। কিন্তু বাঙালি হিন্দুর ভোট ঘুরিয়ে আনার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাঁদেরকে বিজেপির দিকে ঠেলে দিয়ে কার লাভ করলো? সময় বলবে।
                                 ইতি
                            প্রতি বেদক
                          বিজয় চক্রবর্তী।  
                           হোজাই , অসম

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.