Header Ads

বিশ্ব বিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়েছেন ভাড়া বাড়িতে থাকতেন

লীলা মজুমদার একবার বলেছিলেন, 
"মনে করলে মানিক কোটিপতি হতে পারত। 
কিন্তু অনেক অনুরোধ স্বত্ত্বেও সে বাংলা সিনেমার বাইরে পা রাখেনি। সত্যিই তো সারাজীবন থাকলেন ভাড়া বাড়িতে ..." 

''আমি মনে করি ভারতবর্ষে ছবির মাধ্যমটাকে যদি কেউ বোঝে তবে, তিনি হচ্ছেন সত্যজিৎ রায়। দেখুন, মেজে - ঘষে পড়াশোনা করে একটা স্তর পর্যন্ত রগড়াতে রগড়াতে পৌঁছানো যায়, এমনকি হয়তো প্রবন্ধকার বা ইসকুল মাষ্টারের স্তর ছাড়িয়ে এক ধরণের শিল্পীতেও পরিণত হওয়া যায়। কিন্তু জাতশিল্পী হতে গেলে অন্য আরএকটা এলেম লাগে।'' পথের পাঁচালি ছবি দেখার পর বলেছিলেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। 
এই ছবির মানবিক বক্তব্য, ছন্দময় দৃশ্য, স্বাভাবিক সংলাপ চিন্তাশীল ও রুচিশীল দর্শককে কীরকম স্তম্ভিত করেছিল, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাহাত্তর বছর বয়সে যখন অসুস্থ শরীরে আগন্তুক তৈরি করছেন, প্রথম দিনের মতোই সেই প্রখর কান্ডজ্ঞান। দীর্ঘ সময় ধরে একটু একটু করে নিজেকে তৈরি করে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গেছেন সত্যজিৎ। তিনি বাঙালির সাত রাজার ধন এক মানিক।

অথচ এটাও আশ্চর্যজনকভাবে সত্যি, আমরা যে দুজনকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাতামাতি করি, সেই রবীন্দ্রনাথ এবং সত্যজিৎ দুজনই গড় বাঙালি চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করতেন। ডি জে কীমার কোম্পানির বড়ো অঙ্কের বেতনের চাকরি ছেড়ে, স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে আড়াই বছর ধরে ছবি তৈরির ঝুঁকি, আর যাইহোক শান্তিপ্রিয়, ভবিষ্যৎ সচেতন বাঙালি কখনোই নিতনা। বিশেষ করে, দেনার দায় সত্ত্বেও কজনই বা স্পর্ধিত কণ্ঠে বিধান রায়ের সামনে বলতে পারতেন, "শিল্পীর স্বাধীনতা মতো ছবি করতে না পারলে তার প্রয়োজন নেই অর্থ সাহায্যের।" হয়তো গড় চরিত্রের বিপরীত মেরুর বলেই আমরা তাঁদের নিয়ে এতটা আপ্লুত হই ! 

লীলা মজুমদার একবার বলেছিলেন, "মনে করলে মানিক কোটিপতি হতে পারত। কিন্তু অনেক অনুরোধ স্বত্ত্বেও সে বাংলা সিনেমার বাইরে পা রাখেনি। সত্যিই তো সারাজীবন থাকলেন ভাড়া বাড়িতে, ছবি পরিচালনার সাথে সাথে চিত্রনাট্য, সঙ্গীত সমস্ত বিষয়ই  নিজে সামলাতেন অথচ প্রযোজকের কাছ থেকে টাকা নিতেন শুধু ছবি পরিচালনার জন্য। শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর সংসার চলত বইয়ের রয়ালটির টাকায়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বাইপাসের ধারে সরকারী বাংলো দিতে চেয়েছিলেন, নেননি। এই সংযম বর্তমান সময়ে অলৌকিক মনে হয়, বিশেষ করে বর্তমান বঙ্গের বুদ্ধিবিভাষিত দার্শনিকদের দেখার পর।" 

নিজের অবস্থা নিয়ে কোনোদিন কোনো আফশোষ ছিলনা সত্যজিতের। বছরে একটা ছবি করতেন। চলচ্চিত্র থেকে চিত্র, চিত্র থেকে সাহিত্য, সম্পাদনা,  ক্যালিগ্রাফি, কোরিওগ্রাফির বিশাল পরিসরে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করতেন না। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতে এত ব্যুৎপত্তি তাঁর মতো কজনেরই বা ছিল?  সৃষ্টিশীলতার কোনো ভান তাঁর ছিলনা, বরং শিল্পের মাঝে নিজেকে বিকীর্ণ করেছিলেন অসামান্য দক্ষতায়। শিল্পী সত্যজিৎ জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ কিন্তু  আরো মহৎ এই ঋজু মানুষটার মনুষ্যত্ববোধ। সত্যকে জয় করেই তিনি সত্যজিৎ। সব যুগের রায়ে। 

 'মহারাজা -- তোমাকে সেলাম'।

(পুন:প্রকাশিত হল)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.