Header Ads

কলঙ্কিত 8ডিসেম্বর

-:কলঙ্কিত ৮ই ডিসেম্বর:-
 
                হ্যাঁ ,আমার কাছে ৮ই ডিসেম্বর একটি কলঙ্কিত দিন।কেন দিনটি কলঙ্কিত- সেই কথা ও কাহিনি আজ আপনাদেরকে শোনাব।৮ই ডিসেম্বরের সেই ভয়ানক দিনটির কথা মনে পড়লে আজও শরীরে কাটা দেয়, শিহরিত হই।
                 ১৯৯২ সনের ৮ই ডিসেম্বর, আমার জীবনের স্মরণীয় দিন।তৎকালীন হোজাই মহকুমা বর্তমানের হোজাই জিলার কালো দিন।বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিশোধ স্পৃহায় এক দল উন্মত্ত নরপশু সেই দিন ডবকার গাছতলা, কুরকুট বস্তি, নাহার গাঁও, হোজাই যোগীজানের গোপাল নগর, পূব কান্দুলিমারি, পূব যোগীজান, পশ্চিম যোগীজান অঞ্চলে বেছে বেছে বাঙালি হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ,লুটতরাজ চালিয়ে নরহত্যায় মেতে উঠেছিল।নরঘাতক নরপশুদের বাধা দেবার কেউ ছিল না।প্রশাসন ছিল ঠুঠু জগন্নাথ।অন্য ধর্মাবলম্ভী , ভাষাভাষী প্রতিবেশীরাও নরঘাতকদের তাণ্ডবে -ভয়ে কুঁকরে ছিল।  তাণ্ডবের ব্যাপকতা-ভয়াবহতা পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু নরমেদ যজ্ঞকেও হার মানিয়েছে বলে তৎকালীন অনেক বয়োবৃদ্ধগণ মন্তব্য করেছিলেন।মোট৫৫( পঞ্চান্ন) জন নিরীহ, নিরাপরাধ লোক শুধু হিন্দু হওয়ার জন্যই ঘাতকদের হাতে অসহায় প্রাণীর মত প্রাণ দিয়েছিলেন।তারা কেউই বাবরি মসজিদ ধ্বংস কার্যের শরিক ছিলেন না।বাবরি মসজিদ কোথায় তা ও তাঁরা জানত কি না নিশ্চিত ভাবে বলা মুস্কিল।আমার পাড়ার একই পরিবারের চারজন প্রাপ্ত বয়স্ক(পিতা মাতা ও দুই পুত্র) নর ঘাতকদের হাতে নিধন হন-সূর্য্ তখন পশ্চিম আকাশে সবে ঢলে পড়েছে।
                    দিনটি সোমবার ছিল।ডবকার সাপ্তাহিক হাট বার।দুপুরে ভাত খেয়ে আমি চাইকেলে চেপে শিলিগুড়ি বস্তিতে বন্ধুবর কমরেড সুশীল দাসের বাসায় গিয়েছিলাম।সেখানে, নিখিল ভারত কৃষক সভার হোজাই আঞ্চলিক কমিটির বৈঠক ছিল-আমি ছিলাম কমিটির সম্পাদক।খাবার সময় বড়দা বলছিলেন, দূরে কোথাও না যেতে।"দূরদর্শনে বাবরি মসজিদ ভাঙার দৃশ্য বারবার দেখাচ্ছে।এতে মুসলিমরা ক্ষোভিত হচ্ছে।গণ্ডগোল হতে পারে।শোনা যাচ্ছে ডবকাতে হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়েছে।অনেকে মারা গেছেন।মন কু ডাকছে।" আমি বড়দা কে বল্লাম ,"আমাদের এখানে কিচ্ছু হবে না।"তবু গেলাম, দলীয় দায়িত্ব যে।
                            বৈঠকে অধিকাংশই অনুপস্থিত।ইসলাম নগরের কমরেড আফতাবুদ্দিন, হোজাইর কমরেড অশোক পাল, আমি, কমরেড সুশীল দাস এবং দক্ষিণ রাধানগরের কমরেড হৃদয় বৈষ্ণব ছিলাম।বিকেল প্রায়৩.৩০ মিনিট নাগাদ আমার পাশের বাড়ির ভ্রাতুষ্পুত্রসম গৌতম পাল এবং সেন্টু চক্রবর্তী হাঁপাতে হাঁপাতে এক চাইকেল চড়ে দুজনে  গিয়ে বলল,"কাকা বাড়ি চল।মুসলিমরা পূব যোগীজানে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।অনেক রক্তাক্ত লোক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।সবাই তোমাকে খুঁজছে।ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, আকাশে ছাই উড়ছে। দেখলামও তাই। ঘটনার গভীরতা বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি বাড়িতে চলে এলাম9।সুশীল দাসকে বল্লাম আফতাব দাকে ভূঁঞা পট্টি পর্যন্ত পৌঁছে দেবার জন্য এবং অশোক দাকে নতুন বাজার পর্যন্ত।বাড়িতে এসে দেখলাম রক্তাক্ত দেহের মিছিলে আছড়ে পড়ছে যোগীজান হাসপাতালে, সঙ্গে গগণভেদী কান্না।নিরাপত্তাহীন যোগীজান, প্রশাসন বলতে কিছু নেই, আছে শুধু বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার ও বুক ফাটা কান্না।ভয়ার্ত মানুষের প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য জীবনে প্রথম দেখলাম।
               যোগীজান বাজারের রেলের উত্তর পারে শত শত হিন্দু যুবক হাতে লাঠি ঝাঁটা নিয়ে সমবেত হচ্ছিল, কিছু একটা করবে।বাজারের দোকান বন্ধ হতে লাগল।আমি ছুঁটলাম পোস্ট অফিসে।যোগাযোগের সবেধন নীলমণি টেলিফোনের একমাত্র কেন্দ্র।ফোন করলাম হোজাই থানাতে -পুলিশ, CRP পাঠাবার জন্য।ওপার থেকে OCর গলায় ভেসে আসলো ,"আমি নিরুপায়, পুলিশ নেই, CRP নেই, থানায় আমি একা, নিধিরাম সর্দার।আপনারা প্রতিরোধ গড়ুন না হলে পালিয়ে যান।" OC র কথাশুনে সমবেত জনগণকে বল্লাম, এখানে না থেকে চলুন পূব যোগীজান যাই।মানুষকে বাঁচাই।তখন সেখানে আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন হোজাই কংগ্রেসের প্রধান শ্রী কৃষ্ণ কুমার সিংহ, ক্ষিরোদ সমাদ্দার, AGP কর্মী দ্বিজমনি সিংহ ও অন্যান্য কয়েকজন ও বন্ধুবর হিরণ চৌধুরী ও পঞ্চানন ভৌমিক।যতসময় যাচ্ছে তত উত্তেজনার পারদ চড়চড় করে উঠছে।সন্ধ্যা ঘনিয়েছে মাত্র এমন সময় আমলি পুখুরি গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক তথা কংগ্রেস নেতা জনাব রহমত আলী, বিশিষ্ট আগর ব্যবসায়ী হাজী আফতাব আলী, মজ্জামিল আলী মাজর ভূঁঞা, যোগীজান বাজারের ব্যবসায়ী শামসুদ্দিন, যোগীজান আঞ্চলিক পঞ্চায়েতের সদস্য সফিকুর রহমান পরিস্থিতি বুঝে নিতে বাজারে আসেন।তাঁদেরকে দেখামাত্র সমবেত যুব মন্ডলীর ধৈৰ্যের পারদ শেষ সীমা অতিক্রম করল বলে।তাঁরা আমাদের সাথে কথা বলতে চাইলে সমবেত জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা তাঁদেরকে এই বহ্নি উৎসব ও হত্যা লীলা বন্ধের কাতর অনুরোধ জানিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বল্লাম। কিন্তু মসজিদে সন্ধ্যার আজান হওয়ায় তাঁরা যোগীজান বাজার মসজিদে নামাজ আদায় করতে ঢুকলেন।তখনই দু একটি উত্তেজিত যুবক দিয়াশলাই কাঠি মেরে মসজিদের খড়ের চালে ফেলে দিলে আগুন ধরে যায়। তৎক্ষনাৎ ক্ষিপ্রগতিতে ক্ষিরোধ সমাদ্দার খালি হাতে চালের খর টেনে নামিয়ে দেয়ার জন্য আগুন নিভে যায়, রক্ষা পায় মসজিদ ও ভিতরে থাকা নামাজি।সমাদ্দারের হাত খানিকটা আগুনে পুড়ে যায়।
          নামাজিরা ভিতরে থাকা কালীন  সময়ে এক শ্রেণির লোক মসজিদ জ্বালিয়ে প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হলে আমি রুখে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম আমাকে না মেরে মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া যাবে না।তখন কোনো একজন একটি গাজা বন্দুক তাক করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে শ্রী কৃষ্ণ কুমার সিংহ আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে আমাকে বাঁচান, গুলি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়।পরক্ষণেই অপর একজন রাম দা উঁচিয়ে আসলে ক্ষিরোদ সমাদ্দার দা ধারীকে ঠেলে ফেলে দেন বেঁচে যাই আমি।এরই মধ্যে নামাজ শেষ হয়।সকলের নজরে পড়ে বাজারের উত্তরে থাকা খড়ের কালী মন্দির ধাও ধাও করে জ্বলছে।সমবেত মানুষের ধৈৰ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়,আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।ঠিক তখনই হোজাই থেকে ধনীরাম থাউসেন ( কংগ্রেস নেতা) জীপ গাড়ী চালিয়ে যোগীজান আসেন।আমরা তখন জনাব রহমত আলী ও তাঁর সঙ্গে আসা সকলকে বলি আমরা মসজিদ বাঁচাচ্ছি কিন্তু অন্যদিকে সামান্য মন্দিরটি আপনারা বাঁচাতে পারলেন না।তখন সকলে মিলে মন্দিরের আগুন নেভাতে যই।আমি এবং দ্বিজমনি সিং  ধনীরাম থাউসেনের জীপে যাই।সেখানে গিয়ে দেখি আশপাশের অনেক হিন্দু বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।বর্ধন বাড়ির উঠানে( এই চার জনের কথা আগে বলেছি)হীরালাল বর্ধন, তাঁর স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে।অদূরে মিলের মাঠে অনেক লোক জড়ো হয়ে আল্লাহুআকবর ধ্বনি দিয়ে আমাদেরকে দা, বল্লম লাঠি দেখাচ্ছে।বীভৎস দৃশ্য দেখে দ্বিজমনি সিং ও ধনীরাম থাউসেন চলে যান।আমার সাথে থাকা জনাব রহমত আলী ও তাঁর সঙ্গীদেরকে আমি বল্লাম, দেখুন ওদের দৌরাত্ম্য ,ওদেরকে থামান।আমার মনের মনি কোঠায় আজও সবুজ হয়ে আছে সেই দৃশ্য ও( সফিকদার ) সফিকুর রহমান সাহেবের সাহসিকতা। সে দিন তিনি চিৎকার করে অশ্লীল ভাষায় ওদেরকে গালি দিতে দিতে নর পিশাচদের  দিকে দৌড়ে যাচ্ছিলেন।তাদের মধ্যে পৌঁছে অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি আমাকে চিৎকার করে বলতে থাকেন,"লক্ষ্মী পালিয়ে যাও, মিলিটারি নামাও, এরা মানুষ নয়, পশু।আমি তাদেরকে আটকাতে পাড়ছি না।তারা তোমাকে মারতে চায়।তুমি এখান থেকে চলে যাও।"
     আমাকে দেখে বর্ধনদের পাশের বাড়ির নির্মল নাহা বাঁশ ঝড়ের মধ্য থেকে বের হয়ে আসেন।তিনি প্রাণ বাঁচাতে সেখানে লুকিয়ে ছিলেন।শঙ্করদেব নগর আদালতের উকিল কালিপদ চৌধুরীর স্ত্রী কন্যারাও বের হয়ে আসে।তাঁরা প্রাণভয়ে লুকিয়ে ছিল।তাঁদের বাড়ি লুট হয়েছিল।তখনই একটি অগ্নি নির্বাপক গাড়ি সেখানে এসে উপস্থিত হয়।।আমার মনে হয়েছিল যেন স্বর্গ থেকে ভগবান উদ্ধারযান পাঠিয়েছেন ত্রাণের জন্য।সেই গাড়ির চালক ছিলেন রাধানগরের সন্তোষ রায় ও ফায়ার মেন ছিলেন সাঁওতাল বস্তির সুখময় ধর।আমি তাঁদেরকে বলেছিলাম ,একজন লোক একগাড়ি জল দিয়ে কত আগুন নেভাবেন, তারচেয়ে বরং আমাকে নিয়ে হোজাই থানায় চলুন, দেখি কি করতে পারি।আমার কথায় তাঁরা রাজি হয়ে গেলো।গাড়িতে যা জল ছিল ধূমধুম তা ফেলে দিয়ে আমাকে নিয়ে হোজাই থানায় ছুঁটলো।হোজাই থানায় রওয়ানা হওয়ার আগে নির্মল নাহাকে বর্ধনদের রক্তাক্ত দেহ ঠেলা গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ব্যবস্থা করার কথা বলে আমি অগ্নি নির্বাপক গাড়িতে করে থানার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
       ডিসেম্বরের ঘন কুয়াশার চাদর অন্ধকারকে নিঝুম অন্ধকার করে দিয়েছিল।হোজাইর রাস্তাঘাট জনমানবহীন সুনশান-পুলিশ বিহীন কারফিউ।থানার অবস্থা তারচেয়েও ভয়ানক।আছেন শুধু OC, একজন লাঠি ওয়ালা পুলিশ, টেলিফোনে অন্য একজন পুলিশ।থানায় দেখা হলো আসামের তৎকালীন মন্ত্রী ,হোজাইর বিধায়ক ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে মহাশয়ের ডান হাত বলে খ্যাত দেশবন্ধু বিদ্যাপীঠের শিক্ষক শ্রী প্রমোদ রঞ্জন দাস মহাশয় ও অর্ধেন্দু কুমার দে মহাশয়ের তৎকালীন যুব বাহিনীর প্রধান ভাতৃ প্রতিম রাখাল দাসের সঙ্গে।আমি তাঁদেরকে আর্জি জানালাম কিছু করার জন্য।তারাও নিরুপায়।হোজাইতে পুলিশ, মিলিটারি,CRP কিছুই নেই।OC অসহায়।আমি OC র রুমে ঢুকে দেখি তিনি একটি বই পড়ছেন।আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম বাহ বাহ, চমৎকার,রোম পুড়ছে ,সম্রাট নীরু পিয়ানো বাজাচ্ছে। OC মুখ তুলে চেয়ে ধমকের সুরে আমায় বলল, কি চাই?আমি আমার কথা বললে তিনি বললেন আমি কি করব?আমার ঢাল নেই তরোয়াল নেই, আমি নিধিরাম সর্দার।আমি বললাম তাহলে চাকরি ছেড়ে দিন।তিনি ক্ষেপে গিয়ে বললেন, পালিয়ে আসছেন কেন?হাতে চুড়ি পড়ুন।যতসব কাপুরুষ।আমিও অশ্লীল ভাষায় বলেছিলাম, বউয়ের শাড়ির তলায় লুকিয়ে থাকুন, আপনার পিস্তলটা আমাকে দিন।আমি দেখে নেব।এই ভাবেই দীর্ঘক্ষণ তর্কাতর্কি হলো, কাজের কাজ কিছুই হল না।
     পিপাসায় আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল।থানার সম্মুখে থাকা ASEB র ক্যাম্পাসে আমার পরিচিত  শর্মাদার কোয়াটারে গেলাম পিপাসা মেটাতে।তিনিও CPI (M)দলের কর্মী ছিলেন।তখন রাত সাতটা হবে।আমাকে পাগলের মত দেখে তিনি জিজ্ঞেস করে ছিলেন কি হয়েছে, এমন দেখাচ্ছে কেন?আমি সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে বললাম, দাদা আমাকে জল দিন পিপাসায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।পারলে এক কাপ চাও দিন।তিনি ও তাঁর স্ত্রী খুব যত্ন করে চা জলখাবার দিলেন।পিপাসা মিটল ,খানিকটা শক্তিও সঞ্চয় হলো।রাত আনুমানিক সাতটা হবে।এমন সময় সাইরেন বাজতে লাগল।শর্মা দার বিশেষ ভাবে সক্ষম পুত্র অঞ্জন শর্মা ,সে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, মাস্টার করছিল ঘরে ঢুকে বলল, বিরাট কনভয় থানাতে ঢুকছে।শুনা মাত্র আমি তাঁদের ঘর ছেড়ে থানায় পুনরায় আসি।বিরাট কনভয় নিয়ে থানায় এসেছেন DC,SP অন্যান্য পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিক এবং বিরাট সামরিক বাহিনী।এসেই তাঁরা OC রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।দরজার সামনে সামরিক ও পুলিশের লোকজন দাঁড়িয়ে।আমি OC রুমে ঢুকতে চাইলে তাঁরা বাধা দেয়।তৎসত্ত্বেও আমি দরজার সামনে গিয়ে পা দিয়ে বার বার দরজার সজোরে আঘাত করতে থাকি।OC দরজা খুলে বের হয়ে আসেন এবং আমাকে ধমকাতে থাকেন।আমি তাঁকে ধাক্কা মেরে ভিতরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে যোগীজানের কথা বলতে শুরু করতেই একজন আমাকে বের করে দিতে OC কে আদেশ দেন।আমি তখন ক্ষেপে উঠে বলতে শুরু করলাম, মানুষ অসহায়ের মত মুসলিম নর ঘাতকদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিচ্ছে, আর আপনারা মিটিংয়ের নামে ভুরি ভোজ খাচ্ছেন?আপনারা নির্লজ্জ্ব।হয় আমাকে গুলি করে মারুন না হলে আমার সাথে যোগীজানে চলুন।মানুষকে বাঁচান।আমার কথা শুনে একজন সামরিক বাহিনীর অফিসার আমাকে নিয়ে বের হয়ে আসেন এবং বলেন ওঁরা মিটিং করতে থাকুক, তুমি আমার সাথে চলো বলেই তাঁর জীপে উঠে অন্য একজন সামরিক বাহিনীর লোককে বলেন নিজের নিজের হাতিয়ার নিয়ে এক গাড়ির সবাই আমার সাথে চলো।আমরা চললাম যোগীজানের অভিমুখে।এসেই পুড়ে যাওয়া কালী মন্দিরের এখানে থামালাম।তখনো আগুন জ্বলছে।দেখলাম নির্মল নাহা ও উকিল কালীপদ চৌধুরীর স্ত্রী প্রভা দি কি যেন  কাকে খুঁজে চলেছেন।জিজ্ঞেস করতেই বললেন দুলুর দেহ পাচ্ছি না।সাথে সাথে আমাদের সাথে আসা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা গাড়ি থেকে নেমে খুঁজতে শুরু করেন।অল্প ক্ষনের মধ্যেই পাওয়া গেল ধান ক্ষেতের মধ্যে- অচৈতন্য রক্তাক্ত।তাকে নিয়ে আমরা হাসপাতাল পৌছালাম। ছোট্ট হাসপাতাল, লোকে লোকারণ্য-অনেকে কাঁদছেন।একজন চিকিৎসক ডাঃ সুভাষ দাস, ফার্মাশিষ্ট নিবারণ দাস, দুই জন নার্স, সাফাই কর্মী কানাই, চৌকিদার বৈশ্য কে নিয়ে ডাঃ দাস একটার পর একটা ক্ষত বিক্ষত দেহকে ড্রেসিং, সেলাই, সেলাইন, ইনজেকশন নিরলস ভাবে দিয়ে চলেছেন আবার রেফার স্লিপও লিখছেন।তখন রাত আনুমানিক নয়টা হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.