কলকাতায় ফাদার দ্যাতিয়ানের প্রাক জন্ম শত বর্ষ উদযাপন
কলকাতায় বঙ্গ-পথিক ফাদার দ্যতিয়েনের প্রাক-জন্মশতবর্ষ উদযাপন
সেখ আব্দুল মান্নান, কলকাতা: কলকাতা মহানগরীর সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি-সম্প্রীতির পীঠস্থান 'সম্প্রীতি আকাদেমি' গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ কলেজ স্কোয়ার বেঙ্গল থিওসফিক্যাল সোসাইটির হলে সাড়ম্বরে উদযাপন করল বঙ্গ-পথিক ফাদার দ্যতিয়েনের প্রাক্ জন্মশতবর্ষ। আলোচনা, সম্মাননা ও গ্রন্থ প্রকাশে সাজানো ছিল এদিনের অনুষ্ঠান।
আকাদেমির সম্পাদক তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার বিভাগীয় সাবেক প্রধান প্রফেসর ড. সুরঞ্জন মিদ্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয় ছিল ' বাংলা গদ্য ও মিশনারি'। বাংলা গদ্য-সাহিত্যে মিশনারি পন্ডিতদের অবদান নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ওই আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি অধ্যাপক সিদ্ধেশ্বর ব্যানার্জী, অধ্যাপক বিভাস ভট্টাচার্য ও অধ্যাপিকা কাকলী ধারা মন্ডল।
তাঁদের প্রত্যেকের আলোচনায় উইলিয়াম কেরি,বঙ্গ পথিক ফাদার দ্যতিয়েন ও দোম আন্তোনিওর বাংলা গদ্যচর্চা সবিস্তারে উঠে আসে। দোম আন্তোনিও বাংলা গদ্যের রূপকার হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছেন। বিশেষ করে ফাদার দ্যতিয়েনের ' ডাইরির ছেঁড়া পাতা' বাংলা গদ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। যেটি ধারাবাহিক ভাবে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে বিদ্যৎসমাজে সমাদৃত হয়ে আছে। তাঁকে বাংলা রম্যগদ্যের রূপকারও বলা হয়।
বাংলা লোক সংস্কৃতি চর্চায় মিশনারিদের অবদান নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন অধ্যাপিকা কাকলী ধারা মন্ডল। তিনি আলোচনা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় বেলজিয়ামবাসী ফাদার দ্যতিয়েনের সংস্রবলাভের একটি মধুর স্মৃতি রোমন্থন করে ফাদার দ্যতিয়েনের কয়েকটি মূল্যবান কথাও তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় সভামুখ্য ড. সুরঞ্জন মিদ্দে সভাপতির ভাষণে বলেন ফাদার দ্যতিয়েন মানুষের মাঝে সাকার-নিরাকারের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন ফাদার দ্যতিয়েনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অদূর ভবিষ্যতে সম্প্রীতি আকাদেমির তরফে প্রকাশ পেতে চলেছে একটি বিশেষ সঙ্কলন।
সম্প্রীতি আকাদেমি প্রতিবছর কয়েকজন কৃতিকে বিশেষভাব সংবর্ধনা জানায় । সেই ধারাবাহিকতাকে সামনে রেখেই এদিন তিনজন কৃতিকে সংবর্ধিত করে। সম্প্রীতি আকাদেমির মূল্যবান সম্মান লাভ করেন এই সময়ের সাড়া জাগানো বাংলা উপন্যাস 'তালাশনামা'র লেখক ইসমাইল দরবেশ , অনুবাদক সম্পাদক প্রসুন ধর ও কথাশিল্পী কাবেরী ধর।
সম্মানিত হয়ে ঔপন্যাসিক ইসমাইল দরবেশ তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন 'এই প্রথম কোনো সংস্থা ঔপন্যাসিককে নয় উপন্যাসকে (তালাশনামা) সংবর্ধিত করায় আমি অভিভূত।'
আকাদেমির সভাপতি সুমন পাল ভিক্ষুর সভাপতিত্বে ওই সম্মাননা অনুষ্ঠানে উপরোক্ত ত্রয়ীকৃতিকে মানপত্র ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রীতে সম্মানিত করা হয়।
এদিন বিভিন্ন বিষয়ের তিন গবেষক ছাত্রকেও আকাদেমির তরফে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন পুণ্য বাস্কি, ফেডরিক মান্ডি ও মহ: হাবিবুল্লাহ।
এদিন অনুষ্ঠানে অন্য আকর্ষণীয় দিক ছিল গ্রন্থ প্রকাশ। ড. সুরঞ্জন মিদ্দের ' সাঁওতাল ও মিশনারি' গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের যৌথভাবে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটান অধ্যাপক সুশীল সাহা, পীযূষ গায়েন ও অধ্যাপিকা কাকলি ধারা মন্ডল।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গুণিজনকে সংবর্ধিত করেন ক্রমে সুমন পাল ভিক্ষু, পীযূষ গায়েন, সেখ ইবাদুল ইসলাম, মহ: তাজ উদ্দিন,জিএম আবুবকর, গোবিন্দ সরকার, অধ্যাপক গণেশ হেমব্রম, নন্দিনী মন্ডল ও হাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে একমাত্র শিল্পী নাসরীন নাজমা সংগীত পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ করে দেন।
__________________________________
কোন মন্তব্য নেই