Header Ads

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একজন সুবক্তা অত্যন্ত মেধাবী ,সূচতুর রাজনীতিজ্ঞ ,তাঁর মুখে হালকা কথা বার্তা শোভা পায় না

চিত্ত পাল 
রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা নিঃসন্দেহে একজন সুবক্তা, অত্যন্ত মেধাবী ও সুচতুর রাজনীতিজ্ঞ। তিনি পিএইচডি করে ডক্টরেট উপাধিও পেয়েছেন। তাই তাঁর মুখে হালকা কথা বার্তা শুনতে মানুষ পছন্দ করেন না। যে কোন বিষয়ই হোক না কেন, অধ্যয়ন হীন বক্তব্য গুলি তাঁর মুখে বেমানান। আগেও তিনি বলেছেন, প্রয়াত ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ই নাকি ১৯৩৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমিয়া ভাষার বিভাগ খুলেছিলেন? প্রকৃতার্থে, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমিয়া ভাষায় পড়াশোনা আরম্ভ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডঃ শর্মা সম্প্রতি রিপাব্লিক টিভি-তে বলেছেন, "দেশ ভাগের সময়ই হিন্দুদের ভারতে নিয়ে আসা উচিত ছিলো নেহেরুর"। স্বভাবতই এখন প্রশ্ন ওঠে যে বাংলা ভাগ কে করেছিলো?
সিপাহী বিদ্রোহ এর পর ১৮৫৭ সালে শেষ মোঘল বাদশা বাহাদূর শ্বাহ জাফর কে গ্রেপ্তার করে রেঙ্গুন জেলে পাঠানোর পর বৃটিশ সরকার হিন্দু মুসলিম কে দুই সম্প্রদায়ে ভাগ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলো। ফলশ্রুতিতে মুসলিম লীগের জন্ম দিয়েছিলো ১৯০৬ সালে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ধারাবাহিক আন্দোলনের পাশাপাশি "গোল টেবিল বৈঠক" এর ফলস্বরূপে ১৯৩৫ সালে লণ্ডনে বৃটিশ পার্লাম্যান্টে "ইণ্ডিয়ান কনস্টিটিউশেনাল অ্যাক্ট অফ ১৯৩৫" নামে আইন পাশ হয়েছিলো। যার দরুণ, ১৯৩৭ সালে প্রয়াত নেহেরুর নেতৃত্বে কেন্দ্রে  অন্তর্বর্তী মন্ত্রী সভা গঠন করা হয়েছিলো। অবশ্য তার আগে পর্যন্ত বৃটিশ ভারত উপ মহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসন চালাচ্ছিল বৃটিশ। সে বছর সম্ভবত ১৯৩৬-৩৭ সালে হিন্দু মহাসভা "Two Nation Theory" এনে দেশভাগের প্রস্তাব নিয়ে ছিলো। ওদিকে, মুসলিম লীগের সভায়ও ১৯৪০ সালে  দেশভাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো। দেশভাগ ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প পথ নেই বলে মঃ আলী জিন্না মন্তব্য করেছিলেন ।
বলাবাহুল্য, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল কখনও দেশভাগের পক্ষে ছিলেন না। জানা মতে, বীর সাভারকার ছিলেন মারাঠী ব্রাহ্মণ ও জিন্নাহ ছিলেন প্রকৃতপক্ষে গুজরাটি। যদিও জিন্নার জন্ম হয়েছিলো বোম্বাই তে। সাভারকার ও জিন্নাহ দুজনেই বোম্বে হাইকোর্ট প্র্যাকটিস করতেন। তাঁদের একগুঁয়েমির জন্যই দেশটা ভাগ হয়েছিলো বলে অনেকেই মনে করেন।
উল্লেখ্য, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভার দেশভাগের এই তত্বে অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৪৭ সালের ২রা জুন কলকাতা সিঙ্ঘী পার্কে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে দেশভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু কংগ্রেস বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নি। বলা যেতে পারে, বাংলা ভাগের ষড়যন্ত্র থেকে আলাদা অবস্থান নিয়ে ছিলো ভারতীয জাতীয় কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালে "গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস" নামে বাংলার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী হুসেন সূরাবর্দীর সেনা বাহিনী ও মুসলিম লীগের সমর্থকেরা বাংলা ভাগ করার জন্য ভয়ানক সাম্প্রদায়িক  সংঘর্ষ সংঘটিত করেছিলো কলকাতা, ঢাকা ও নোয়াখালিতে। তা সত্বেও বাংলা ভাগের জন্য ১৯৪৭ সালে যখন গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, তখন অবিভক্ত বাংলার মুসলিমেরা বাংলা ভাগ করতে চান নি। বাংলায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী মোট বিধায়ক ছিলেন ১৪১ জন। বাংলা ভাগের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ জন এবং বিপক্ষে দিয়ে ছিলেন ১০৬ জন। বিপরীতে, হিন্দু বিধায়ক ছিলেন ৭৯ জন। তার মধ্যে বাংলা ভাগের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ৫৮ জন ও বিপক্ষে দিয়েছিলেন ২১ জন। অর্থাৎ ২২০ জনের মধ্যে বাংলা ভাগের পক্ষে ৯৩ টি ভোট পড়ার বিপরীতে ১২৭ টি ভোট পড়েছিলো বাংলা ভাগের বিপক্ষে। তা সত্বেও, বাংলার মুসলিম লীগ নেতারা দিল্লিতে গিয়ে মাউন্ট ব্যাটেনের সাথে দেখা করে বাংলা ভাগ করতে দাবি জানিয়ে ছিলেন। এ ছাড়াও, প্রয়াত ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও বাংলার গভর্ণর ফ্রেডরিকের সাথে দেখা করে বাংলা ভাগের দাবিতে অনড় অটল ছিলেন।
দুর্ভাগ্যজনক যে খণ্ডিত দেশের স্বাধীনতার দিন ১৫ই আগষ্ট ১৯৪৭ সালে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু বলেছিলেন, "We think also of our brother's and sister's who have been cut-off from us by political boundaries and who unhappily can not share at present in the freedom that has come. They are of us and will remain us whatever may happen and we shall be sharers in their good and ill fortune alike."
খুব সম্ভবত, ১৯৬৩-৬৪ সালে সংসদে উদ্বাস্ত পুনর্বাসন সংক্রান্তীয় এক প্রশ্নের উত্তর পণ্ডিত নেহেরু বলেছিলেন," The Hon. Member referred to the question of citizenship.
There is no doubt, of course, that those displaced person's who have come to settle in india and bound to have their citizenship. If the law is inadequate in this respect, then the law should be changed."

ওদিকে, পণ্ডিত নেহেরু পূর্ব পাকিস্থান থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের বলি হয়ে যে সব ছিন্নমূল হিন্দু বাঙালিরা অসমে এসেছেন, তাঁদের রাজনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সংসদে  একটি আইন প্রণয়ন করেছিলেন। ইমিগ্র্যান্টস এক্সপালশান অ্যাক্ট, ১৯৫০। এই আইনের ২(খ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, যাঁরা ধর্মীয় নির্যাতনে বাধ্য হয়ে ভারত/ অসমে এসেছেন, তাঁরা এই আইনের আওতায় অসমে নাগরিকত্ব পাবেন। প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল মুহিব মজুমদার যখন ১৯৮৩ সালে আইএমডিটি আইনের ড্রাফট প্রস্তুত করেন, তখন ইমিগ্র্যান্টস এক্সপালশান অ্যাক্ট টি তুলে দিয়ে বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমের জন্য একই আইন প্রস্তুত করেন। যদিও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের আইএমডিটি আইন বাতিল করতে মামলা করার প্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্টের রায়ে আইএমডিটি আইন টি  বাতিল হয়ে যায়। শোনা মতে, ইমিগ্র্যান্টস এক্সপালশান অ্যাক্ট টি পুনরায় বাহাল করেছে ২০০৫ সালে। কিন্তু এই আইন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সর্বা-হিমন্ত মুখ্যমন্ত্রী দুজনেই নিজ নিজ কার্যকালে হিন্দু বাঙালিদের ওপর লাগামহীন ভাবে বিদেশি নোটিশ দিয়েছে এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য হিন্দু বাঙালি কে ডিটেনশন ক্যাম্পে ভরে দিয়েছে। অগণিত বাঙালি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। তবুও সর্বা হিমন্ত ইমিগ্র্যান্টস এক্সপালশান আইন টিকে কার্যকরী করেন নি। মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা নিজে রাজধর্ম পালন করার পরিবর্তে এখন নেহেরুর সমালোচনা করাটা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
আগামি পয়লা নভেম্বর সুপ্রীমকোর্টে নাগরিকত্ব ও ভিত্তিবর্ষ  সম্পর্কীয় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে সাংবিধানিক বেঞ্চে। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাগ্য নির্ধারিত হবে সেদিন, একাংশের বক্তব্য ।

বাঙালির দ্বিজাতি তত্বের অদূরদর্শি ফৰ্মূলা যে কতো বড় সর্বনাশ করেছে, তা উপলব্ধি করতে হয় তো অসমের বাঙালিদের আরও কয়েক দশক লাগবে। অগুণিত বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত  স্বাধীন রাষ্ট্রে আজ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হিসেবে ভারতে শুধুই হিন্দী  সাম্রাজ্যবাদীর সঙ্গে লড়াই করে কোনও ভাবে বেঁচে রয়েছে। অথচ ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করে বর্তমান বাংলাদেশ সারা বিশ্বে বাংলাভাষী এক রাষ্ট্র বানাতে সক্ষম হয়েছে। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের দরুণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালিরা আজও  শাপমোচন করে যাচ্ছেন বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.