বরিহাট, নিরোলপুর অসমের সবুজ ঘেরা গ্রামে আমার কন্যা ঝুনুমনি থাকে,সান্তনার স্মৃতি বুকে নিয়ে
অমল গুপ্ত ,গুয়াহাটি:তিন দশকের বেশি সময় অসম আমার কর্মজীবনের ক্ষেত্র, বহু পথ ঘাট বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছি, দুটি নিরালপুর, বরিহাট আর পেলাম না। জালুক বাড়ি মির্জ্জা হয়ে গ্রামের পথ পাকা সড়ক,দুইদিকে সবুজ গাছ গাছালি, নিরালপুর সবুজে ঢাকা ,গুয়াহাটি থেকে ৫০কিলোমিটার দূরের গ্রামকে ঘিরে রেখেছে শাল সেগুন , চালতা, বাঁশ ,সুপারি ,কাঁঠাল , ঝোপঝাড় আর অজানা পাখির ডাক, সবুজ স্নিগ্ধ ছায়া ৩৪,৩৫ডিগ্রি গরমেও ঠান্ডা বাতাস মনোরম পরিবেশ ঘেরা, টিন বাঁশের বেড়ার ঘর মাটির দাওয়া চান মাই দাস এর পারলৌকিক কাজ চলছে। মারুতি নিয়ে গেটে দাঁড়াতেই আমার কন্যা ঝুনুমনি ছুটে এল।আমার পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করলো। ভেতরে গিয়ে বসলাম বাবা সুকলেস্বর ও এলেন। হবু বর মিলন ,আর এক ঝুনুমনি মিলনের বোন সবাই আমাদের সাদর অভ্যাথনা জানাবার জন্যে ,ভুল ত্রুটি যাতে না হয় তার জন্যে উদগ্রীব। আমাকে আর ভাতৃ প্রতিম ডান্ডি রাজ ডাহাল কে লেবুর শরবত, চিড়ে দই মিস্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হল। দুপরে খাওয়ার আগে আমরা গায়ে লেগে থাকা সেগুন বনের পাশে সবাই বসলাম। দারিদ্র পীড়িত গ্রাম গরিব মানুষ গুলো তাদের সুখ দুঃখের কথা বললেন। ধান ,চাল জমি জমা, ,,ডাক্তার অসুখ, পানীয় জল আর মানসিক যন্ত্রনা সবাই ভাগ করে নিচ্ছে। ""আমরা কন্যা "" ঝুনুমুনির যন্ত্রনার ভাগ নিয়ে সমব্যথী হওয়ার চেষ্টা করলাম। বাড়িতে বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা ছাড়া কেউ নেই ,মাকে নিয়ে পাঁচ মাস গুয়াহাটি সিঙ্গিমারী হাসপাতালে গিয়ে মায়ের ডায়লেসিস করেও হেরে গেল।50 টি ডায়ালেসি স করা হয়েছিল। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমার পত্নী সান্তনা গুপ্তের ডায়ালিসিস চলছিল।সেই সূত্রে ঝুনুমনি কে পাশে পেলাম সুখ দুঃখের কথা ভাগ করে নিতাম। অজান্তে ও আমার মেয়ে হয়ে গেল।সান্তনা হল মা।কোলকাতা চলে যাবার পরও ঝুনুমনি প্রায় প্রতিদিন মায়ের খবর নিত বলতো,""বাবা মা ভাল আছে নে".। আমিও জবাব দিতাম। 29 এপ্রিল সান্তনা বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়ার আগে আমাদের বিবাহ বিবাহ বার্ষিকীর দিন ঝুনুমনি র রিং সেরিমনি হল সেইদিন সান্তনার কোনো জ্ঞান ছিল না , যন্ত্রনা তে কাতরাচ্ছিল।সবুজ গ্রাম থেকে ফোন এল "বাবা আমাকে আর্শীবাদ করবেন। আমি যন্ত্রনা বুকে নিয়েও প্রানভরে আশির্বাদ করলাম"। সেই যন্ত্রনা আজও প্রশমিত হয় নি। সবুজ গামে গিয়ে ঝুনুমনি আমাকে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করল। আমি সবুজ বাঁশ বন সুপারি গাছের মাথায় মেঘমুক্ত সোনালী আকাশের দিকে তাকালাম। বলার কিছু ছিল না।
(ওপরে টিন বাঁশ বেড়ার সবুজ ঘরটি আমার কন্যা ঝুনুমনির)
কোন মন্তব্য নেই