Header Ads

একাংশ দুর্নীতিগ্রস্থ ডাক্তার টাকা ছাড়া কিছু বুঝতে চাইনা ,তাদের কাছে চিকিৎসা তা গৌণ ব্যপার

অর্ক চক্রবর্তী -

চিকিৎসায় গাফিলতি এবং আমার ভাই এর মৃত্যু:

গতকাল ছিল চিকিৎসক দিবস, সেইকারনে আমার এই পোস্ট, যদিও অনেক আগেই আমার এই লেখাটি পোস্ট করা উচিত ছিল,পোস্টটি একটু বড়,তাই কেউ চাইলে নাও পড়তে পারেন, বিশেষ করে ডাক্তাররা । 
        গত ৮ই নভেম্বর ২০২১, আমার পরিবার মানে আমি, বাবা,আমার বউ আর আমার ২২ বছর বয়সী কলেজ স্টুডেন্ট ছোট ভাই ব্যাঙগালোর গিয়ে পৌছালাম , পরিকল্পনা ছিল ডাঃ দেবী শেঠি র কাছে ভাই কে একবার চেক-আপ করাবো তারপর আমরা মাইসোর, উটি ঘুরে বাড়ি ফিরবো। হ্যা আমার ভাইয়ের জন্ম থেকেই হার্টে একটা ছিদ্র ছিল আর তারজন্য ওর মাত্র ৪২ দিন বয়সে একটি সার্জারি হয়েছিল চেন্নাই তে। হার্টের সমস্যা পুরোপুরি ঠিক না হলেও ও কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। 
        নারায়ণা রুদয়ালয়া তে গিয়ে নাম লিখিয়ে সমস্ত পরীক্ষা করে একজন ডাক্তার এর কাছে পাঠানো হল,সে  রিপোর্ট দেখে একজন হার্ট সার্জেন এর কাছে পাঠালেন, নাম ডঃ সূদেশ প্রভু, ও সব দেখে শুরু করলো আমাদের ভয় পাওয়ানো,তাড়াতাড়ি অপারেশন না করলে ভাই নাকি বাঁচবে না বেশিদিন। আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম, ভাই বরং আমাকে ভরসা দিয়ে বলল -"আরে দাদাভাই এতো ভয় পাস না, আমার শরীর ঠিকই আছে,ডাক্তারগুলো বেকার ভয় পাওয়াচ্ছে"। ভয় পাবোনাই বা কেনো? ওর থেকে আমি ১০ বছরের বড় তার উপর ৮ বছর আগে মাকেও হারিয়েছি, খুব আদরে বড় করেছিলাম ওকে। লজ এ ফিরে বাবাকে আর বউ কে সব জানালাম,আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম দেবী শেঠি র সাথে দেখা করতে হবে, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তারপর নেওয়া যাবে। উটি,মাইসোর ততক্ষণে মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে। ৯দিন অপেক্ষার পর দেবী শেঠি র দেখা পেলাম, যথারীতি অনেক আশা নিয়ে বেরোলাম ওর চেম্বার থুড়ি ঝা চকচকে নিখুঁত অফিস থেকে ,তখনও বুঝতে পারিনি ডাক্তার নয় একজন শিল্পপতির সাথে দেখা করে এলাম। ২৬শে নভেম্বর ভর্তি করালাম ভাইকে(অনেক টাকার প্যাকেজে)সূদেশ প্রভু র অধীনে । ৬ই ডিসেম্বর অপারেশন হলো(কথা ছিলো ডাঃ শেঠি থাকবে, কিন্তু সে ছিলো না) ,এবং তাদের কথা অনুযায়ী অপারেশন সফল। পরের দিন সকাল বেলা ওর জ্ঞান ফিরে এলো, আমরা খুব খুশি ।১১ই ডিসেম্বর ভাইকে ওয়ার্ড এ নিয়ে এলো,কোভিড টেস্ট করিয়ে আমিও চলে গেলাম ওয়ার্ডে ওর সাথে থাকতে।সেই দিন থেকে আমি ওর মধ্যে দুর্বলতা বাদ দিয়ে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ খেয়াল করিনি, দিব্যি মোবাইলে কথা বলছিল,গেম খেলা, খাবার খাওয়া, বাথরুমে যাওয়া (আমার সাহায্য নিয়ে) সব ঠিকই চলছিল, ১৩ই ডিসেম্বর ডাঃ প্রভু এক্সরে ইকো ইসিজি দেখে বলল আর কোনো সমস্যা নেই, সব ঠিকই আছে। কিন্তু পরের দিন হটাৎ ডাঃ প্রভু র একটা জুনিয়র এসে বলে, হার্টে একটু জল জমেছে ১-২ দিনের জন্য আইসিউ তে নিয়ে যেতে হবে, ডাঃ প্রভু কে জিজ্ঞেস করায় বলে চিন্তার কোনো কারণ নেই এটা খুব মাইনর একটা জিনিস, আমরাও সবাই নিশ্চিত হলাম। ৩দিন সব ঠিকই ছিলো, ডাঃ এর কথা অনুযায়ী আর হয়তো ১দিন আইসিউ তে থাকতে হবে। ও কিন্তু ভালোই ছিলো। 
             সমস্যাটা শুরু হলো পরের দিন অর্থাৎ ১৭ই ডিসেম্বর, দুপুর ১২-১২.৩০ টা নাগাদ আইসিউ তে ভাই কে দেখতে গিয়ে, যে ছেলে আগের দিন নার্স এর ফোন থেকে আমাদের ফোন করে ভালো ভাবে কথা বললো,ISL এর খেলার খবর নিচ্ছে, সে ছেলে পরের দিন ১০বার কিছু  জিজ্ঞাসা করলে একবার উত্তর দিচ্ছে তাও ঠিক করে না, অসাভাবিক লাগছিল ওকে দেখে। সামনে সকালের খাবার, অসুধ পরে, একটা নতুন নার্স বেডের পাশে দাড়িয়ে ছিল , ওনাকে জিজ্ঞেস করায় বলে ওতো সকাল থেকেই কোনো কথা বলছে না। আমার ধমকে ২টো জুনিয়র  ডাক্তার এলো, এসে বলে ও কিছু না সামান্য দুর্বলতা,ওকে এখন ঘুমাতে দিন। আমাকে চলে যেতে বলে ওরা।
            রাতে ভাইয়ের ফোন না আসায় আমি ফোন করি হাসপাতালে, আমাকে বলা হয় পেশেন্ট ঠিক আছে এখন ঘুমাচ্ছে(পরে জানতে পারি ও তখন ভেন্টিলেশনে অচৈতন্য অবস্থায় আছে,আমরা কিছুই জানিনা), পরের দিন ১১.৩০ টা নাগাদ আমাদের ফোনে জানানো হচ্ছে পেশেন্টের ব্রেন MRI করতে হবে ওর খিঁচুনি(Fits) এসেছে। 
            এই ঘটনার ২৩ দিন পর ওরা জানতে পারলেন যে ওদের গাফিলতির কারণে আমার ভাই এর গুরুতর ব্রেন ইনজুরি হয়ে গেছে। এর মাঝে প্রভু, শেঠি আর তাদের চেলা চামচা গুলো আমাকে ভুল তথ্য দিয়ে যায়।বার বার জিজ্ঞেস করি যে কেন এমন ঘটনা আমার ভাই এর সাথে ঘটলো? এর কোনো সঠিক তথ্য ওরা আজ অবধি দিয়ে উঠতে পারেনি। দেবী শেঠি র সাথে দেখা করার জন্য বার-বার  appointment চাইলেও কোনো লাভ হয়নি (আমরা বাঙালিরাই ওকে ভগবান করে রেখেছি,সাউথের লোক ওর কাছে কেউ খুব একটা যায় না আজকাল, তার কাছে পেশেন্টের প্রানের থেকেও Narayana Health এর শেয়ার দর এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ)
             প্রায় ৩ মাস ওখানে কাটানোর পর আমরা হাসপাতাল বদল করার সিদ্ধান্ত নিলাম, কারণ সেরকম আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছিল না আমার ভাইয়ের। ২৪শে February  নিউরো সার্জেন Dr. Sharan Shrinivasan এর তত্বাবধানে ভগবান মহাবীর জৈন হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ৩-৪ দিনের মধ্যে রিহ্যাবের সাহায্যে ওর একটু একটু করে উন্নতি চোখে পড়ছিল,আমরাও ভরসা পাচ্ছিলাম। কিছু সপ্তাহের মধ্যে ভাই আগের থেকে অনেক উননতি করতে লাগলো কিন্তু সমস্যা হলো March মাস থেকে ওর অপারেশনের যায়গার উপরিভাগে একটু পূঁজ আসছিল। আর এখানেই আবির্ভাব হল আর এক অপদার্থ ডাক্তারের, Dr.Satish Kini (cardio vascular surgeon), ও দেখে বলল sternal wire টা অর্থাৎ যে তার দিয়ে ওপেন হার্টের পর পাঁজড়ের হাড় জোড়া হয়, সেটির জন্যই পূঁজ আসছে, চাইলে ওটা বার করা যেতে পারে অথবা রোজ dressing করে ঘা ঠিক করা যেতে পারে, আমরা dressing এর সিদ্ধান্ত নিলাম। কারণ আমরা আর সার্জারীর দিকে যেতে চাইছিলাম না। ভাইও অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আস্তে আস্তে উন্নতি করছিল। মুখ দিয়ে খাবার খাওয়া, কথা বলা, একবারে উত্তর দেওয়া সব ঠিকই ছিলো।৷ Dr.Sharan এর কথা মতো আর কিছু  সপ্তাহের মধ্যে ভাই কে ওরা discharge করে দেবে কারণ ওর  brain ভালোভাবে কাজ করছে, রিহ্যাবে ও অসম্ভব ভালো সাড়া দিছিল, কিন্ত সব ই আমাদের কপাল!!! আবার উদয় হলো সেই  Dr.Kini র, আমাদের বোঝাতে লাগলো অর্নব(আমার ভাই এর নাম) এখন ভালোই আছে এবার ওর sternal wire টা বের করানোর ব্যাবসথা করতে হবে,আমাদেরকে বোঝানো হল এটা একটা ছোটো সার্জারী, জীবনহানি তো দূর ৫-৬ ঘন্টা বাদেই আবার ওকে ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হবে,এবং আমরা আবার ডাক্তারদের পাতা ফাদে পা দিলাম,কোনো দরকার ই ছিলো না অপারেশনটা করার,সামান্য কটা টাকার জন্য!!!!!আমার কাছে বেশ কিছুদিন ধরেই সেই স্বভাবসিধ্য আবদার apple iphone 12pro এর,বাড়ি ফিরেই সিমলা যাবে তাও প্লেনে,আরসালানের বিরিয়ানি খাওয়ার বায়না, IPL match দেখা,mobile এ Ott দেখা,video call এ বাড়ির লোক, বন্ধুদের সাথে কথা সব ই করছিল, ও সত্যিই উন্নতি করছিল। ২৬শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল থেকে ও কানে হেডফোন লাগিয়ে অরিজিত সিং এর গান শুনছে আর আপন মনে সেই গান গেয়ে চলেছে, তখনও জানতাম না যে এটাই ওর জীবনের শেষ গান শোনা,অপদার্থ ডাক্তার রূপি খুনি টা ওটি তে ওর জন্যে ওত্ পেতেছে, আমার ভাই টাকে গিনিপিগ বানাবে বলে।অপারেশন হলো আবার নাকি successful!!!!!কিন্ত তার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার আদরের ছোটো ভাইটা না পাওয়ার দেশে পারি দিল। মৃত্যুর কারণ septicemia in shock,অর্থাৎ রক্তে ইনফেকশন মিশে গেছে।রাতেই অবস্থার অবনতি হতে লাগলো, ডাক্তাররা বলছে antibiotics কাজ করছে না!!!মানে টা কি?? তাহলে তোরা সার্জারী কেন করলি ইনফেকশন চেক না করে?? যে ছেলে সার্জারীর আগে ভালোই ছিলো তার সার্জারীর পর হটাৎ করে এরকম শারীরিক অবনতি কিভাবে হতে পারে?? তাহলে কিভাবে তোরা বললি যে এই অপারেশন এ কোনো Life risk নেই?? কারন তোরা বুঝতে পেরেছিলি যে এরা ৬মাস ধরে বাইরে এসে আটকে পড়েছে,এতো তাড়াতাড়ি এই টাকা কামানোর মেশিন কে ছাড়া যাবে না, যেভাবেই হোক এদেরকে এত তাড়াতাড়ি ছাড়া যাবে না,তাই এই পরিকল্পনা। কিন্তু ওরা বুঝতে পারিনি যে আমার ভাইটার আর লড়াই করার মতো শারীরিক জোর ছিলো না।
             ২৭শে এপ্রিল ২০২২, সকাল ৯.২৭ ভাই চলে গেল। আমাদের এতো দিনের লড়াই এক নিমিষে শেষ।কিছু মেডিক্যাল মাফিয়াদের হাতে শেষ হলো একটা তরতাজা ছেলের প্রাণ। কিন্তু ও রেখে গেল কিছু প্রশ্ন, 
এই ডাক্তাররা কি কোনদিন শাস্তি পাবে না? এদের ভুল এর খেসারত কতদিন আমাদের মতন পরিবারগুলো দেবে??আমাদের মতন অসংখ্য  পরিবারের চোখের জলের  বিনিময়ে গড়ে তোলা দেবীপ্রসাদ শেঠি র মত ডাক্তারের হাজার হাজার কোটির সাম্রাজ্যের কি পতন হবে না?? 
             আমি লড়াই করবো এদের বিরুদ্ধে, জানি এসব মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াইটা সহজ হবে না, জানি লড়াই করেও দাদাভাই ডাক টা আর শুনতে পাবো না তোর মুখে, তাও তোর কাছে আজ কথা দিলাম ভাই, যতদিন বেচে আছি তোর ন্যায়বিচারের জন্য আপ্রান চেষ্টা করব যাতে আর কোনো দাদা তার ভাইকে অকালে না হারায়,আর কোনো পিতা কে যেন সন্তান শোকে কাতর না হতে হয় এই Sudesh Prabhu, Devi Shetty, Satish kini র মতো ডাক্তারের হাতে পড়ে। 
আপনারা যারা আমার পোস্ট টা এত ধৈর্য্য ধরে পড়লেন  তাদের কাছে অনুরোধ দয়া করে এটি শেয়ার করবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.