বরাক দরদী প্রদীপ দত্ত রায়ের তৈল চিত্র আঁকলেন শিল্পী বাচ্চু দাস
নয়া ঠাহর,শিলচর:নাগরিক সভায় বরাক দরদী প্রদীপ দত্তরায়ের তৈলচিত্র তার হাতে তুলে দিয়ে সম্মান জানালেন বিশিষ্ট চিত্রকর বাচ্চু দাস।
শহরের বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্বদের উপস্থিতিতে শিলচর প্রেস ক্লাবে আহুত এক ব্যাতিক্রমী নাগরিক সভায় আকসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়ের একটি তৈলচিত্র তার হাতে তুলে দিয়ে তাকে সম্মাননা জ্ঞাপন করলেন উপত্যাকার বিশিষ্ট চিত্রকর বাচ্চু দাস।
এদিনের সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রদীপ দত্তরায় বাচ্চু দাসের সাথে সবার পরিচয় দিয়ে তার বিগত ৩০ বছরের শিল্প জীবনের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরেন। আকসার ১০ বছরের দীর্ঘ আন্দোলনের সব পোস্টার ও দেওয়াল লিখনে বাচ্চু দাসের অবদানের কথাও তিনি মনে করান। প্রত্যুত্বরে বাচ্চু দাস বরাকের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রদীপ বাবুর নিরন্তর প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে তৈলচিত্রটি তাঁর হাতে তুলে দেন। তার কাজের কথা জানাতে গিয়ে শিলচরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইন্টেরিয়র ডিজাইন সহ কিশোরকুমারের প্রতিকৃতি , রাজীব ভবন ও বঙ্গভবনে বিভিন্ন ম্যুরালের কথাও উল্লেখ করেন। শুধু বর্ণনা শুনে ডিমাসা রাজা গোবিন্দচন্দ্রের প্রতিকৃতি বা বিশিষ্ট চিত্রকর বীরেন্দ্রলাল ভৌমিকের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার তৈলচিত্রও তৈরি করেছিলেন বলে এদিন জানান বাচ্চু দাস।
সভায় আমন্ত্রিত অতিথি 'আমরা বাঙালি ' দলের আসামের সভাপতি সাধন পুরকায়স্থ বাচ্চু দাসের সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের সখ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে সরকারি আনুকুল্য না থাকায় বরাকের অনেক শিল্পীই যোগ্য স্বীকৃতি ও সম্মান থেকে বঞ্চিত হন। বাচ্চু দাসের সৃষ্টিকর্মের স্বীকৃতি দিতে বিভিন্ন সংগঠন সহ বরাকের জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আবেদন জানান তিনি। আকসার উপদেষ্টা রূপম নন্দীপুরকায়স্থ আকসার আন্দোলনে বাচ্চু দাসের দীর্ঘ অবদানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন যে প্রচার এর আড়ালে থেকে যাওয়া এই শিল্পীকে রাজ্যের সংস্কৃতি দপ্তর থেকে শিল্পী পেনশন দিয়ে সম্মানিত করতে হবে বলে দাবি জানান।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর দে এদিন বলেন যে প্রকৃত শিল্পীরা অনেকেই জনচক্ষুর আড়ালে থেকে তাদের সাধনা চালিয়ে যান। বাচ্চু দাসও তার ব্যাতিক্রম নন। কিন্তু আজকের উদাহরণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা তিনি ভুলে যাননি। শঙ্কর বাবু বলেন যে কিছুদিন আগে বাংলাভাষার নাহ্য অধিকার রক্ষায় প্রদীপ দত্তরায়ের অকুতোভয় ভুমিকা হয়তো সর্বস্তরে আলোচিত হয়েছে কিন্তু আজ অব্দি একটি নাগরিক সম্বর্থনাও দেওয়া হয়নি,যা তার প্রাপ্য ছিল। সেখানে বাচ্চু দাস যেভাবে তাঁর তৈলচিত্র এঁকে তাকে সম্মান জানালেন তা থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া কর্তব্য।
এদিনের অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি তথা বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক অতীন দাস এদিন তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাচ্চু দাসের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন যে এতে দাতা ও গ্রহীতা দুজনেই সম্মানিত হলেন। পুরোনো শিলচরের চিত্রকলার ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন যে যে কোন শিল্পী সৃষ্টি করতে গিয়ে যে সুখানুভুতি অনুভব করেন সেটাই তার আসল প্রাপ্তি। তবে বেঁচে থাকার জন্য জাগতিক প্রাপ্তিও দরকার এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আজকের এই অনুষ্ঠান শিল্পীকে জনসমক্ষে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ফলপ্রসু হবে। একই সাথে বরাকের স্বার্থে প্রদীপ দত্তরায়ের নিরন্তর প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন যে হয়তো ব্যাক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সবাই তাঁর অবদানের প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাবোধ করেন। কিন্তু বাচ্চু দাস তার বিপরীতে গিয়ে যেভাবে তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী এই সম্মাননা দিলেন তা সবার মনকে ছুঁয়ে গেল।
এছাড়া শিলচর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তনু দাসও এদিন শিল্পীর সাথে তাঁর দীর্ঘ যোগাযোগের কথা স্মরণ করেন এবং তাঁর ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রথম সাইনবোর্ড লেখার ব্যাপারে শিল্পীর ভুমিকাকে মনে করিয়ে।
অনান্যদের মধ্যে এদিনের অনুষ্ঠানে কল্পার্ণব গুপ্ত, হৃষীকেশ দে, জয়দীপ ভট্টাচার্য ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই