Header Ads

পশ্চিমবঙ্গ র সমাজকে আজ সার্বিক অবক্ষয় গ্রাস করেছে, বিহার ,উড়িষ্যা ক্রমশ উন্নতি র দিকে

  অধ্যাপক সুজয় পালিত : মনে পড়ে, পশ্চিমবঙ্গে সেই মজার গল্পটা, বেশ চালু ছিল একটা সময়ে !...
কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়ার জবরদস্ত হুমকিতে নাছোড়বান্দা পাকিস্তান চোখ রাঙিয়ে থাকায়, জহরলাল নেহেরুর যোগ্য কন্যা - সেই সময়ের প্রচন্ড বুদ্ধিমতী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অফার দিলো, কাশ্মীর তো দিয়ে দেবো, সাথে কিন্তু 'ফ্রি' - 'বিহার'কেও নিতে হবে ! ব্যাস, পাকিস্তানের কাশ্মীর নেওয়ার একগুঁয়েমি হম্বিতম্বি কিছুটা হাল্কা হলো !

হ্যাঁ, পাশের রাজ্য 'বিহার' সেই সময়ে এতটাই তাচ্ছিল্যের ছিল ! তাচ্ছিল্যের অবশ্যই কারণও ছিল - লালুর মেয়ে বিহারে ডাক্তারি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে দিল্লিতে পড়তে গিয়ে ফেল করলো ! সেই সময়ে সারা দেশ হাসতো 'বিহার' নিয়ে, লোক হাসতো 'লালু' নিয়ে !

বিহারের নবজাগরণ শুরু হলো 'নীতিশ কুমারের' হাত ধরে ! পরীক্ষায় টোকাটুকি বন্ধ করতে পাশের হার অনেক কমে গেল ! তাতেও তিনি অটল রইলেন - "কোয়ান্টিটি নয়, জোর দিয়েছিলেন কোয়ালিটির ওপর'' ! যে মদ থেকে রাজ্যের প্রচুর রাজস্ব আসতো, রাজ্যের যুবসমাজকে বাঁচানোর জন্য বিপুল ক্ষতি সহ্য করেও সেই মদ বন্ধ করলেন ! 

নিতিশ কুমারকে বিহারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হতে হয়নি ! তাতেও পরিবর্তন এলো বিহারের মানসিকতায় ! হাতে-পায়ে-গাজোয়ারি করে নয়,  মেধা-ধীশক্তি অর্জন করে নিজের যোগ্যতায় সর্বভারতীয় স্তরে চাকরি অর্জন করতে শিখল 'বিহার' !

বিহারের সাসারাম প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন বিকেলে জড়ো হতে শুরু করলো কয়েকশো ছেলেমেয়ে, গ্রামে তাদের কারেন্ট ছিলো না। প্ল্যাটফর্মে ইন্টারনেটের সুবিধা আর কারেন্ট দুই'ই পাওয়া যায়, সেই সুবিধা নিয়েই তারা স্টাডি করতো জি.আই, জি.কে, কারেন্ট টপিক, অঙ্ক,ইংরাজি। লক্ষ্য একটাই জাতীয় স্তরে সরকারি চাকরি পেতে হবে। সারা ভারত অবাক হয়ে দেখেছিল সেই ছবি - বিহারের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যুব সমাজ !

কিছুদিন আগে ভাইরাল হয়েছে আরও একটি ছবি। পাটনায় গঙ্গা তীরে সপ্তাহের শেষে জমায়েত বহু যুবকের - রেলের চাকরির ফ্রি কোচিং আর টিপস দেওয়া হচ্ছে সেখানে ! সেই কোচিং নিতে গঙ্গার ঘাট ভরে গেছে !

এবার 'মাউরা-গুঠখাখোর-খোট্টাগুলো আমাদের সব লুঠ করে নিল' - প্রাদেশিকতার জিগির তোলা কূপমন্ডুক পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকানো যাক ! স্বাধীনতার সময়কালীন মনীষী সমৃদ্ধ বাংলার স্বর্ণযুগের গর্বে গর্বিত বাঙালি জাতি এখন ক্লাব, মদ - তোলাবাজি রাজনীতির অন্ধ গলিতে আবদ্ধ ! নেট পেলে পাবজি খেলে, রিল বানিয়ে, ভিড় করছে বেকার ভাতা, লক্ষী ভান্ডার, কোথাও কিছু ফ্রি দেওয়া হচ্ছে কিনা, সেই লাইনে ! 
বাকিরা ভিন রাজ্যে পরিযায়ী !

মাটি কুপিয়ে ১০০ দিনের কাজে এখন 'পশ্চিমবঙ্গ' সেরা হচ্ছে, আর দেশকে আইএএস, আইপিএস দিয়ে 'এখনকার বিহার' সেরা হচ্ছে !

একটা পিছিয়ে পরা রাজ্য কিভাবে নিজের চেষ্টায় উঠে দাঁড়াচ্ছে ! জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে যাচ্ছে ! আর বাঙালিরা ? মাউরা, গুঠখাখোর খোট্টা বলে গালি দিয়ে, বাঙালি বাঙালি করে আজও শূন্যগর্ভ আত্মগরিমায় মেকী তৃপ্তির চোঁয়া-ঢেঁকুর তুলে যাচ্ছে !!

পাশের রাজ্য নিতিশ কুমারের বিহার, নবীন পট্টনায়কের ওড়িশা - ওখানেও সব ধর্মের লোকেদের বাস - 'দুধেলদের লাথি খেতে ব্যস্ত' না হয়ে, এরা কেউই কিন্তু উন্নয়নে 'গুজরাট-মহারাষ্ট্রের থেকে পিছিয়ে নেই !

পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন 'শ্রী' ভিক্ষা দিয়ে, প্রদেশিকতার জিগির তুলে, লাথি খাওয়ার দুধেল তোষণ রাজনীতিতে সামাজিক অবক্ষয় আর কতোদিন ? 
একটুও ভাবায় না বাঙালিকে -- এই জড়ত্বের বেড়াজাল কতদিনে ছিড়বে বাঙালি.... ??
                              অধ্যাপক (ডাঃ) সুজয় পালিত

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.