Header Ads

গ্রীন ফিল্ড বিমান বন্দর শিলচর

গ্রীণ ফিল্ড বিমান বন্দর
     অধ্যাপক দিলীপ কুমার দে, শিলচর-৫
     ফোন :৮৬৩৮৪৯৪২৬৮

পুরোনো কোন বিমানবন্দর থাকলে তার বোঝা কমানোর জন্য আশে পাশে কিংবা খুব বেশি দূরে নয় এমন জায়গায় নতুন আরেকটি বিমানবন্দর গড়লে টেকনিক্যাল ইংরেজি শব্দবন্ধ 'গ্রীণফিল্ড এয়ারপোর্ট' বলা হয়। আর পুরোনোটাকে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে সম্প্রসারণ করলে তাকে 'ব্রাউনফিল্ড এয়ারপোর্ট' বলা হয়। গুগল খুলে মিলিয়ে দেখতে পারেন, আমি ঠিক বলছি কি না। 

পেলব সবুজ ঘাসের উপর বিমান দৌড়ে নামতে পারে না, এমনকি হেলিকপ্টারের জন্য শক্তপোক্ত পাকা একখন্ড পাটাতন প্রয়োজন হয়। আমি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ, অনেক দেশের বিমান বন্দরে নেমেছি,উঠেছি, দেখেছি। সবুজ ঘাসের গালিচা দিয়ে মোড়া কোন বিমানবন্দর আজ পর্যন্ত দেখিনি। জানি না যারা 'গ্রীনফিল্ড বিমানবন্দর' বলে তারস্বরে চিৎকার করছেন তারা দেখেছেন কি না। 
তবে সুন্দর গোছানো সবুজ চায়ের গাছগুলো কচি পাতা তোলার মরসুমে যন্ত্রদানব দিয়ে উপড়ে ফেলার মধ্যে, কিংবা তড়িঘড়ি জবরদস্তি করে সেই উপড়ে ফেলার সমর্থনে কোন মাহাত্ম্য আছে কি না তা জানি না। 
ধরে নেওয়া গেল - সব চা শ্রমিকদের নিজ নিজ চাকরি থাকবে, সবাইকে টাকা দিয়ে বা ঘর বানিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, আর শ্রমিকরা তাতে সন্তুষ্ট হবে।ধরে নিন শ্রমিকদের নেতারাও তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন। কিন্তু শ্যামল পরিবেশ, বিস্তৃত সুন্দর লাভজনক একটি চা-বাগান , একটি এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রি, কি বিনষ্ট হল না? নতুন জায়গায় চায়ের চারা লাগালেই কি পরের বছর থেকে বা তার পরের বছর থেকে পাতা তুলে উন্নত মানের চা তৈরি করা যাবে? পরিবেশ আগের মত সবুজ সুন্দর নয়নাভিরাম শ্রমিক- বান্ধব হয়ে উঠবে? 
        কারা যেন বলছে বিশেষজ্ঞরা ঐ ফলনশীল জমিটাকে নতুন বিমানবন্দর ( যদিও এর প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন আছে) তৈরীর একমাত্র যোগ্য জমি বলে সুপারিশ করেছেন, আর অনেক দিনের বন্ধ পরিত্যক্ত 'খরিল' বাগানকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন। সেই বিশেষজ্ঞরা নাকি কুম্ভিরগ্রাম বিমানবন্দরের লাগোয়া শুধু জলাশয় দেখেছেন।  
এই 'বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আবহাওয়াবিদ, ভূতত্ববিদ, পরিবেশবিদ ছিলেন তো? তা নাহলে তো আরেক পাহাড় লাইন, আরেক মহাসড়কের মত অবস্থা হবে? অবশ্য আজকাল রাজনৈতিক নেতারাই নাকি নিজেরা বিশেষজ্ঞ। তাইতো অর্থনীতি র কুশলীকে বাদ দিয়ে ইতিহাসের লোককে ভারতের মত বিশাল দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর করা হয়েছে। কোনদিন শুনবো ট্রাক্টর ড্রাইভারকে ( তাকে ছোট করছি না, কারণ তিনি তাঁর কাজ ভাল জানেন) বিমান চালাবার জন্য নিয়োগ করবেন। গরিব জনগণকে ঠকাবার জন্য যেরকম কিছু গ্রামীণ হাসপাতালে লেব এসিস্ট্যান্টকে দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করানো হয়, নার্স এসিস্ট্যান্টকে দিয়ে মায়েদের প্রসব করানো হয়। 
     খোঁজ খবর রাখেন এমন কিছু লোকের ধারণা যে, ডলু চা-বাগানের মালিক গুজরাট প্রদেশের কোন এক প্যাটেল পদবীর, আর সেখানে উত্তরাধীকারীরা একমত হয়ে এত বড় বাগানে একজন ম্যানেজার পর্যন্ত নিয়োগ করতে পারছেন না। একজন সিনিয়র কর্মী ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কাজকর্ম সামলাচ্ছেন বলে জানা যায়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে 'দিয়ে - থুয়ে' আর্থিক ডিল ( দেনাপাওনার মতৈক্য) সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে। অবশ্য আমি নিশ্চিত নই। 
       তবে এটি নতুন কোন শিল্প নয়। ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প ছিল পা৺চগ্রামের কাগজ কল। যাকে বা৺চানো গেল না। 
         শ্রমিকরা তাদের স্বার্থ বুঝবেন, প্রয়োজনে তাদের সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করবেন। বিমানে তারা চড়েন না।চায়ের ক্ষেতের মালিক অন্য হলেও সে ক্ষেতের গাছগুলোর সাথে তাদের ভালবাসার সম্পর্ক, পেটেরও সম্পর্ক। 
 দেশের অন্যান্য নাগরিকদের অনেকে সমর্থন করবেন, অনেকে সমর্থন করবেন না। আবার অনেকে শুধু কুম্ভিরগ্রামের পরিবর্তে শ্রমিকদের বুকচেরা 'গ্রীনফিল্ড' থেকে উড়ান ধরার স্বপ্ন দেখছেন। এখন সেখানে লাল মাটি বেরিয়ে পড়েছে। সেখানে যারা কা৺দছে তারা কেউ 'দেশদ্রোহী' নয়। তবে যারা শত জে-সি-বি নিয়ে সশস্ত্র পাহারায় একটা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি নির্মমভাবে ধ্বংস করছে তাদের কোন অভিধায় উল্লেখ করব তা আমি খুজেঁ পাচ্ছি না। ৫ই জুন তাদেরকে কি নেতারা 'পরিবেশ বান্ধব' পুরস্কারে ভূষিত করবেন?

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.