আজব সাপুড়ের গল্প শোনালেন সায়ন গুপ্ত,, সেও ধুলো পায়ে হাঁটেন
আজকে একটা সাপুড়ের গল্প শোনায়। এইযে হাসিমুখের যুবক ছবিতে দেখা যাচ্ছে যাকে তার নাম ভোলা পটুয়া বয়স উনোচললিশ
সাপ ধরে খেলা দেখায় আর লোকজনকে বলে তাবিজ-কবজ বলে কিছু হয়না, আমিও সব বুজরুকি করিনা, পায়ে হেঁটে ঘুড়ি, সাপের ফিসফিসানি শুনি। আরো কত কি বলে গেলো একনাগাড়ে।
আমার সবথেকে যে ব্যাপারটা শুনে ভোলা পটুয়া কে অন্যরকম লেগেছে সেটা হল ভোলা বর্ধমানের কাজরা বলে একটা গ্রামে থাকে প্রতিদিন একশো কিলোমিটারের ওপর ঘুরে বেড়ায়। আগে থেকে কন্ট্রাক্টরকে ভাড়া দিতে পারবে না বলে যদি বাসে জায়গা হয় তাহলে এ রকমই ভ্রমণ চলে একটা করে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পায়ে হেঁটে সেই গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাড়ি ঘুরে ঘুরে তারপরে আবার আর একটা গ্রাম এইভাবে দীর্ঘ তেইশ বছর সাপের খেলা দেখায়,সাপ ধরে ভোলা।
ভোলারা জাতিতে পটুয়া ,পটুয়ারা ঈদ দুর্গা পুজো দুই পালন করে। কয়েক হাজার বছর ধরে এই পটুয়া সম্প্রদায় ছবি আঁকা কে সমৃদ্ধ করেছে পটে এঁকে।
ভোলার বাবা পট খেলা দেখাত,আর মাকালীর ভক্ত ছিল। ভোলার যখন সতেরো বছর বয়স তখন ভোলার বাবা ভোলাকে নিয়ে কামাখ্যা যান, তারপর ভোলা বাবার সাথে আর ফিরে আসেননি এগারো বছর কামরুপে থেকে, সাপের খেলা দেখানো শিখে,সাপ ধরা শিখে - এক বুক ভ্রমণ তৃষ্ণা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে জীবন সংগ্রামে।
ভোলার মধ্যে কি অদম্য প্রাণশক্তি। আমাদের তো মাথার ওপর ছাদ আছে, ইচ্ছে করলে ঘুরতে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। কিছু না করেও কয়েকটা দিন খেয়ে পড়ে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবার আছে।তবুও আমরা কত হতাশ।
ভোলার কিছুই নেই ঘর নেই কিন্তু মাথার উপর আকাশ আছে
পরিবার নেই কিন্তু ওই ঝুড়িতে সাপের ফিসফিসানি ওর কানে সব সময় বাজে সেই অনুভূতি আছে।
ভোলার সামর্থ্য নেই ঘুরতে যাওয়ার কিন্তু পথ চলার জন্য ধুলোমাখা দুটো পা আছে।
বৈচিত্র্য স্বতন্ত্রতা এই শব্দগুলোর অর্থ পরিষ্কার হয়ে যায় ভোলা পটুয়ার মতন মানুষের সাথে দেখা হলে...
কোন মন্তব্য নেই