Header Ads

১৯শে মে ভাষা শহীদ কে কেবল বরাক বাসী স্মরণ করবে , পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি রা কি চুপ থাকবেন

১৯শে মে। বরাক উপত্যকায় ভাষা দিবস পালিত হয় । ১৯৬১সালের এই দিনে, ১১ জন  বাংলা ভাষার জন্য লড়াইয়ে শহীদ  হন এবং বরাক অঞ্চলে ১৯৬০ থেকে যে ভাষা আন্দোলন শুরু হয় তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ভাষা দিবসও কিছু বাঙ্গালী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। 
পশ্চিম বঙ্গের মানুষের চোখের ওপর দিয়ে হুশ হুশ করে প্রতিবছর এই দিনটা পেরিয়ে যায়। আমরা বিশেষ খেয়ালও করি না যে এই দেশেই আরও কয়েকটি রাজ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঙালিদের বাস - তাঁরা সবাই ছিন্নমূল নন( আসানসোলের কোন এক লেখিকা ৮০- র দশকে তাঁর লেখায় migrated শব্দের এই অনুবাদ ব্যবহার করেছিলেন বলে মনে আছে।" পরিযায়ী" শব্দটি আমার পছন্দ নয়। পাখি পাখি লাগে্)। 
আসলে দ্বিধা - বিভক্ত পশ্চিমবঙ্গে বসে আমরা ভাবি, এবং আমাদের সঙ্গে সঙ্গে বেশীরভাগ অহমীয়ারাও - যে আসামের বাঙ্গালিরা বোধহয় ( এবং কেউ কেউ ভাবেন, "বোধ হয় " কেন? "নিশ্চয়" ) সব্বাই দেশভাগ বা তৎপরবর্তী ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ, বাংলাদেশ গঠনের সময় - ইত্যাদি কালে আসামে পালিয়ে এসেছেন। সুতরাং বর্তমান আসামে বাঙ্গালীদের আবার অধিকার কি! বস্তুত, ইতিহাস এমন কথা বলে না।
প্রাচীন বঙ্গ দেশের আকার, প্রকৃতি, সীমা- পরিসীমা নিয়ে প্রভুত তর্ক বিতর্ক থাকতে পা্রে, কিন্তু একথা খেয়াল রাখতে বাধা নেই  যে সিলেট বা প্রাচীন শ্রীহট্ট, বাঙ্গালীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিকতা এবং বিশেষত রন্ধন ( ব্রিটেনের সর্ব প্রথম ভারতীয়  রেস্তরাঁ সিলেট বাসীর করা, এবং আজও গ্রেট ব্রিটেনের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভারতীয় রেস্তরাঁর মালিক তারাই), তথা, চা , সুগন্ধ শিল্প ( অগুরু বা Oud এই অঞ্চলের উৎপাদ এবং পৃথিবী খ্যাত) ইত্যাদির কারণে বঙ্গ জীবনে সর্বদা স্মরণীয়। মহাভারতের রাজা দুর্যোধনের সঙ্গে নাকি শ্রীহট্টের এক কন্যার(হবিগঞ্জ)বিবাহ হয়! আরও কথা হল “গৌড়” শব্দটি নাকি এক সময়ে শ্রীহট্ট সম্পর্কেও প্রযোজ্য ছিল!     
আরও একজনের কথাই বা ভুলি কী করে- গত ৬০০ বছরে বঙ্গ জীবনে সব চেয়ে প্রভাব ফেলা নাম - শ্রীচৈতন্যদেব। তাঁর সঙ্গে যে সিলেটের অঙ্গাঙ্গী যোগ ! রয়েছেন, হজরত শাহ জালাল, যিনি শ্রীচৈতন্যেরও আগে, চতুর্দশ শতকে সিলেটে এসে ইসলামের প্রচার করেন। কে ছিলেন না এখানে! আধুনিক ভারতের অনেক বিখ্যাত নাম যেমন সৈদ মুজতবা আলীও এই সিলেটেরই মানুষ।
 
এখন কথা হচ্ছে, বরাক উপত্যকায় ভাষা-আন্দোলন নিয়ে বলতে গিয়ে সিলেট সম্বন্ধে এত কথা কেন? তার কারণ সিলেট তো আসলে পাহাড় ঘেরা সমতল – সুরমা-বরাক উপত্যকায় যার ব্যপ্তি। ভারতীয় অংশে পড়েছে তার কাছাড়, হাইলাকান্দি আর করিমগঞ্জ জেলা। আর বাকি বাংলাদেশে। একসময় সমগ্র সিলেটই আসামের প্রশাসনিক আওতায় ছিল – সময়টা ১৮৭৪ থেকে ১৯৪৭। বরাক উপত্যকার ঐতিহাসিকেরা একে বাংলার প্রথম-বিভাজন বলেছেন। যদিও পশ্চিমবঙ্গের কেউ তাতে কান দেয় নি। 
 এরপর এল ১৯৪৭ সালের পার্টিশন। ভারত ভাগ হল আর তার সঙ্গে সিলেটও। বরাক উপত্যকার উৎস অঞ্চল পরিণত হল আসাম প্রদেশের এক জেলায়। যা শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক referendum এর মধ্যে দিয়ে, তা বদলে গেল আত্মরক্ষা আর অস্তিত্ব রক্ষার লড়ায়ে।

 ১৯৬০ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আসাম প্রদেশের সরকারী ভাষা হবে অহমীয়া। বাংলার কথা কেউ ভাবলই না – অথচ নিম্ন আসামের এক বিপুল অংশ এই ভাষায় কথা বলেন। এমন কি সিলেটীদের তো এক স্বতন্ত্র লিপি (script)ও রয়েছে!   বরাক উপত্যকায় প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হল - বাঁচাতে হবে সিলেটের ভাষাকে, তার সংস্কৃতিকে, সমাজে – অর্থনীতিতে নিজের মৌলিক অধিকারকে। ১৯৬১ সালে এই দিনেই প্রতিরোধ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মারা গেলেন ১১ জন আন্দোলন কারী। শেষে অসমে সরকারী কাজে স্বীকৃতি পেল বাংলা ভাষা – “ মোদের গরব মোদের আশা”। যারা মারা গেলেন তাঁদের কথা অবশ্য বরাক উপত্যকার বাইরে কেউ মনেই রাখল না। ঐ মানুষ গুলোও কিন্তু ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.