Header Ads

বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি সাংবাদিকের জীবনসাথীকে

 



- রত্নজ্যোতি দত্ত -

বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে একটি প্রথা আছে।সে প্রথাটির কথা জেনেছিলাম রয়টার্স-এ কাজ করাকালীন।তা দিয়েই এ শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখাটি শুরু করছি। 

সাধারণত, একজন সাংবাদিকের পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রীর লোকচক্ষুর আড়ালের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দেশীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠানে সেভাবে বছরে কোনো একটি দিনকে 'পারিবারিক দিবস' হিসাবে পালন করার রীতি আছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু রয়টার্স-এ বছরের একটি দিনকে 'পারিবারিক দিবস' হিসাবে পালন করার এক বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্য রয়েছে। একজন সাংবাদিক পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে বহু সময় প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন কাজের দায়বদ্ধতার জন্যে। পরিবার পরিজনসহ ও স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা ছাড়া একজন সাংবাদিকের পক্ষে সমাজ সেবার গুরুদায়িত্ব পালন করা সত্যিই এক দুরূহ কাজ। একজন কর্মজীবী সাংবাদিকের জীবনের এই দিকটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাও এই শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখাটির এক উদ্দেশ্য।

প্রথা মেনে এই শ্রদ্ধাঞ্জলিটি লিখছিনা সবাইকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। এই লেখার মাধ্যমে জানাচ্ছি এক সাংবাদিকের পাঠক তথা সমাজের প্রতি থাকা দায়িত্ব সুচারুভাবে পালনে নেপথ্যে থাকা সহধর্মিনীর বা জীবনসাথীর ভূমিকার কথা। যার সম্পর্কে শ্রদ্ধা জানাতে লিখছি তিনি একজন প্রবীণ সাংবাদিককে তাঁর সংগ্রাম যাত্রায় নীরবে লোক চক্ষুর আড়ালে সমাজসেবা করার জন্য ভালোবাসা মিশ্রিত অকুন্ঠ সমর্থন করেছিলেন।

সান্ত্বনা গুপ্ত এমনি একজন ব্যাক্তিত্ব যাকে আমরা কিছুদিন আগে হারিয়েছি। তিনি ছিলেন একজন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা যিনি অসমের রাজধানী দিসপুরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতেন। গুয়াহাটি এবং কলকাতার মতো শহরে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নিজ জন্মভূমি বহরমপুরে গত ২৯ এপ্ৰিল। তাঁর স্বামী গুয়াহাটির সুপরিচিত সাংবাদিক, অমল গুপ্ত। যিনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন 'অমলদা' বলে পরিচিত। অর্ধাঙ্গিনীকে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা অমলদা করেছেন। প্রিয় স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য এই পৃথিবীতে সম্ভাব্য সমস্ত কিছু চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এই দম্পতি তাদের হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতেন।

অমলদা জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল নয়া ঠাহরের প্রধান সম্পাদক। পোর্টালটি প্রায়  ২৪.৫ লাখ পাঠকের কাছে আজ অবধি সারা বিশ্বে পৌঁছেছে। পোর্টালটি সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বের স্থানীয় জনগণ এবং বিশেষ করে অসমের বহু ভাষিক জনগোষ্ঠীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাঙালি জনগোষ্ঠীর আশা আকাঙ্খাকে প্রতিদিন প্রতিফলিত করার বিগত বেশ কিছু বছর ধরে বলিষ্ঠ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সত্যি বলতে অমলদা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে এই পোর্টালটি চালাচ্ছেন। তিনি অনেক মহল থেকে সমর্থন যদিওবা  পেয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে কার্য্যকরী ও প্রভাবশালী সমর্থন এসেছে বিদেহী আত্মার কাছ থেকে।

উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতাকে পূর্ণকালীন পেশা হিসাবে নেওয়া এক সহজ কাজ নয়। সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পোর্টালের পাঠকদের প্রতি থাকা দায়বদ্ধতা আমলদা দিনের পর দিন পূরণ করতে পেরেছেন সান্ত্বনা বৌদির লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা ভালোবাসা মিশ্রিত নীরব সক্রিয় সহায়তার জন্যে। অমলদা একজন সাংবাদিক ও সম্পাদকের দায়িত্ব সার্থকভাবে পালনে বৌদির ভূমিকা অনস্বীকার্য্য। অমলদার পাঠক সমাজের প্রতি থাকা প্রতিশ্রুতি পূরণ করার প্রেরণা ছিলেন সান্ত্বনা বৌদি।

একজন সাংবাদিকের জীবনে অর্ধাঙ্গিনীর ও পরিবারের ত্যাগ ও অকুন্ঠ সমর্থনের কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুচ্চারিত রয়ে যায়। "সান্ত্বনা কোনো দিন লিখতে বসলে নুন আনার কথাও বলেনি," জানান অমলদা। সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজসেবা করার জন্য আমাদের প্রিয় দাদাকে বৌদি যে নীরব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তার প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করাতেই এই শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখাটা লিখছি। নয়া ঠাহর-এর সকল পাঠকের পক্ষ থেকে অমলদার সাংবাদিকতার জীবনকে নীরবে প্রতিদিন সক্রিয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিদেহী আত্মার প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

এই দম্পতি দৈনন্দিন জীবনের অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও পাঠকদের যৌথভাবে বিনম্র সেবা করেছেন। বিদেহী আত্মার আজ এগারো দিনের শ্রাদ্ধ কাজ। আর, দিনটি হল পঁচিশে বৈশাখ  - বিশ্বকবির বীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম দিবস। এক পূণ্যতিথি।

[লেখক দিল্লিস্থিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও নয়া ঠাহর গোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতা সম্পাদক।]

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.