ত্রিপুরায় মানুষের ক্ষোভ আড়াল করতে চেয়ে ও লাভ হবে না বিজেপির :মানিক সরকার
নয়া ঠাহর প্রতিনিধি,
আগরতলা,২৮ মে : মুখ বদল করে মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভকে আড়াল করে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে বিজেপি। পায়ের তলার মাটি সরে গেছে, দাঁড়াবার জায়গা পাচ্ছে না। মুখ পাল্টে লাভ হবে না। রাজ্যের মানুষ বুঝে গেছেন ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি ছিল প্রতারণার ফাঁদ। শনিবার আগরতলায় সিটুর সমাবেশে কড়া মেজাজে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। বাহারী শ্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে বিশাল মিছিল শহরের নানা পথ ঘুরে শামিল হয় সমাবেশে। মিছিলের সামনে নরেন্দ্রপুর চা - বাগানের খুঁদে শিল্পীদের ঝুমুর গানের তালে তালে নৃত্য মিছিলে আনে অন্য মাত্রা। মানুষের জীবন যন্ত্রণা ও সরকারের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তোলা নানা আঙ্গিকের শ্লোগান জ্যেষ্ঠের তপ্ত দুপুরে বিপন্ন মানুষের মনে চাগিয়ে তোলে নতুন আশা৷ রাজপথ কাঁপানো মিছিলের কথা তুলে মানিক সরকার বলেন, মিছিল থেকে বাড়ি ফিরে চুপচাপ বসে থাকবেন না। বাড়ির আশপাশের মানুষদের সমস্যাগুলি নিয়ে মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামুন। পতাকা হাতে নিতে না পারলে পতাকা ছাড়াই মানুষকে সংগঠিত করুন৷ত্রিপুরার প্রতিটি কোনায় কোনায় জন জাগরন সৃষ্টি করতে পারলে যে পরিবর্তনের আশায় লড়াইকে তীব্র তীক্ষ্ণ করতে চাইছেন তার বাস্তব রুপ পাবে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বদলের পর প্রথম রাজনৈতিক সভায় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার বলেন, ২০১৮ সালে মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার হরনের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া আক্রমণ এখন মানুষের বাঁচাবাড়ার অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধাগুলিও কেড়ে নিচ্ছে। ২০৪৭ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন দেখা ভদ্রলোককে ৫০ মাসে চেয়ার ছেড়ে দিতে হয়েছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৩ বার প্রধানমন্ত্রী ও ২ বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যে উড়ে এসে যে মুখ্যমন্ত্রীর এত প্রশংসা করলেন তাকে কেন মে মাসের মাঝামাঝি ছুঁড়ে ফেলে দিতে হল? সরকারের ৮/৯ মাস বয়স থাকতে কেন তাকে সরিয়ে দিলেন? তিনি কি শয্যাশায়ী! চলাফেরা করতে পারেন না? নিজের তোলা প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়ে বললেন, গনতন্ত্র সংহার, মানুষের ভোটাধিকার লুট সহ বহু দুর্নীতি অন্যায়ের কারনে মানুষের মনে ক্ষোভ বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারন করেছে। দিল্লির বিজেপি নেতারা খবর নিয়ে দেখেছেন এখন ভোট হলে ৫/৭ টার বেশি আসন তারা পাবেন না। এজন্য মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বদল করলেই কি মানুষের সমস্যাগুলির সমাধান হবে? রেগার কাজ বাড়বে? ১০৩২৩ কাজ ফিরে পাবেন? নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসব কাজগুলি করার সময় কোথায়? এই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বদল হয়েছে বলে মোহগ্রস্ত না হয়ে শ্রমিক শ্রমজীবী ও গনতান্ত্রিক মানুষের দুর্ভেদ্য ঐক্য তোলার ডাক দেন বিরোধী নেতা৷ দেশে রাজনৈতিক অবস্হার পরিবর্তন হচ্ছে বলে দাবি করে মানিক সরকার বলেন,২০২৪ সালে মোদিকে আর ফিরতে না দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কেন্দ্রের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ক্ষোভ সামাল দিতে ব্রিটিশের কায়দায় মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দমাতে ব্রিটিশরা যেমন ব্যর্থ হয়েছে তেমনি তাদের দালালরাও পরাস্ত হবে। সমাবেশে সিটুর সর্বভারতীয় সম্পাদক তপন সেন বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশের যা সম্পদ গড়ে উঠেছিলো সব বিক্রি করে দিচ্ছে বিজেপি। গোটা দেশেই বর্বরতা চালাচ্ছে বিজেপি। ভয় পেলে চলবে না৷ মানুষকে সংগঠিত করে সামনাসামনি মোকাবিলা করতে হবে। দেশের মানুষ কখনো এই বর্বর শক্তির পাশে দাঁড়ায়নি। বিজেপি ভোট দিয়ে মানুষ বুঝতে পারছে মানুষ আগুন হজম করেছে, এখন কয়লা প্রসব করছে৷ সিটুর রাজ্য সভাপতি মানিক দে ও সম্পাদক শংকর প্রসাদ দত্তও বক্তব্য রাখেন সমাবেশে।
কোন মন্তব্য নেই