Header Ads

গাফ্ফার চৌধুরী কে শেষ বিদায়

গাফফার চৌধুরীকে বিনম্র শ্রদ্ধায় শেষ বিদায়
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা,২৮ মে : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি - এই কালজয়ী গানের রচয়িতা, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও ভাষাসৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরীকে বিনম্র শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানাল বাংলাদেশ।শনিবার  দুপুর সোয়া ১টায় বাংলাদেশের  জাতীয় পতাকা মোড়া কফিন এনে শায়িত রাখা হয় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে। প্রথমে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়েছে এই ভাষা সৈনিককে।শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে গাফফার চৌধুরীর কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দিন।  প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহমেদ।  মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।  আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে গাফফার চৌধুরীর কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রমুখ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ন্যাশনাল পার্টি (ন্যাপ), ঐক্য ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ গাফফার চৌধুরীর কফিনে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এই জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে গাফফার চৌধুরীর সৃষ্টিকর্ম, রাজনৈতিক সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা স্মরণ করবে।
প্রয়াত  আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরী সবচেয়ে বড় বটবৃক্ষ। দেশ বরেণ্য লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কলামিস্ট আবুদল গাফফার চৌধুরীর তুলনা তিনি নিজেই। মরে গেলেও উনি বেঁচে থাকবেন একুশের 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানের মধ্যদিয়ে। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। তিনি দু:সময়ে এবং সংকটে পরামর্শ দিতেন। আজকের চলমান এই বিশ্বের সংকটে তাঁর পরামর্শ জাতির জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছিলো।     কিন্তু তিনি চলে গেলেন!
 কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অসাধারণ কলামিস্ট এবং একজন দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শ- বাঙালির অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য তিনি সারাজীবন লিখেছেন। লড়াই ও সংগ্রাম করছেন এবং সারা জাতিকে উজ্জীবিত করেছেন।আবদুল গাফফার চৌধুরী একজন ক্ষণজন্মা মানুষ ছিলেন মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, তাকে আমরা হারালাম। তার এই যাওয়াটাকে আমরা সহজভাবে নিতে পারি না। অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে তার মাপের কলামিস্ট ও সাংবাদিক খুবই কম। আর তার মাপের সাংবাদিক আরো দরকার। তার আদর্শকে আমরা অনুসরণ করবো। কারণ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন এবং জাতির পাশে থেকে জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তার অকাল মৃত্যুতে আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।বাংলাদেশের 
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আমাদের সকল আন্দোলন ও সংগ্রামে সাহস জুগিয়েছেন। কখনো মনে হয়নি তিনি দীর্ঘকাল প্রবাস জীবন-যাপন করছেন। সেটা মনে হয়নি। কারণ তিনি আমাদের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সব কিছু নিয়েই কিন্তু তিনি তার কলাম লিখে গেছেন। তার কলাম যে আজকে থেমে গেলো, এটা দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিকেল ৩টা পর্যন্ত মরহেদ শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখান থেকে জানাজার জন্য প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নেয়া হয়।পরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।  শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হন।এদিন সকাল ১১টায় গাফফার চৌধুরীর মরদেহ বিমানবন্দরে নামে। সেখান থেকে মরদেহ সরাসরি শহীদ মিনারে আনা হয়। দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। প্রসঙ্গত,  ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে মারা যান গাফফার চৌধুরী। ২০ মে পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইন মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ মে পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন এক মিলাদ মাহফিল ও শোকসভার আয়োজন করে গাফফার চৌধুরীর স্মরণে। পূর্ব লন্ডনের ঐতিহাসিক শহীদ আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রয়াত
গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা বাঁক বদলের সাক্ষী ছিলেন। তিনি একাত্তরের মুজিবনগর সরকারের মুখপাত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছিলেন তিনি।  লন্ডনে বসবাস করলেও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তার কলম সোচ্চার ছিল বরাবর। সেখানে থেকেও ঢাকার পত্রিকাগুলোতে তিনি সমকালীন বিষয় নিয়ে একের পর এক নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারও।এছাড়াও গাফফার চৌধুরী গল্প, কবিতা, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, নাটক এবং অনেকগুলি প্রবন্ধও লিখেছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.