Header Ads

জীবনে দিয়ে গেলেন উজাড় করে পেলেন না কিছুই তাদের কথা লিখেছেন ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ



---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

এই বাংলায় এক অভিনেতা ছিলেন তুলসী চক্রবর্তী বলে। সত্যজিৎ রায় বলতেন 'ভারতের মরিস শিভ্যালিয়র'। হলিউডে জন্মালে নাকি ড্রইংরুমে গোটা তিনেক অস্কার সাজানো থাকতো। সেই তুলসী বাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যে দিন মারা যান, সৎকারের খরচ জোগাতেও কালঘাম ছুটে গেছিল স্ত্রীর। চূড়ান্ত দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটতো ভারতের মরিস শিভ্যালিয়র।

সত্যজিৎ এর আরেক অভিনেতা ছিলেন তপেন চট্টোপাধ্যায়৷ আমরা অবশ্য গুপী গাইন হিসেবেই এনাকে চিনতাম। শেষ বয়সে গড়িয়ার অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন ঘেমে নেয়ে। আধময়লা জামা, রুগ্ন, মধ্যবিত্ত৷ কে বলবে ইনিই রাজার জমাই, এই লোকটাই বাঘার সাথে তালি দিয়ে যেখানে খুশী যেতে পারতেন।

আচ্ছা দুর্ধর্ষ দুশমন মন্দার বোসকে মনে আছে? যে আবার  অর্জুন সেজে কাশতে কাশতে জাগলিং ও নাইফ থ্রোইং এর ভেলকি দেখাতো? কামু মুখার্জী। এতো কিছু করে ও কাজ পেতেন না। মারণ রোগ বাসা বেঁধেছিল। খুব বিশেষ সাহায্য ও পাননি। টাকা ও না। অনাদরে অবহেলায় গ্লোব ট্রটারের মৃত্যু হয়েছিল। আমরা ক'জন জানি?

আচ্ছা আমরা তো ফেলুদাকে নিয়ে মেতে আছি, খবর রেখেছিলাম যে মছলিবাবা ভালো ছিলেন না শেষ জীবনে? পাতালঘরের অপয়া ভালো ছিলেন না? গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায় একদিন খুব সাধারন এক ঘরে তারচেয়েও এক সাধারণ মৃত্যু বরণ করেছিলেন। তাঁর কসবার বাড়িতে তিনি কার্যত শয্যাশায়ী ছিলেন।

এভাবে একাধিক কিংবদন্তি বিস্মৃতির কবরে গেছে এ ভূমিতে। সখ করে আমরা যাকে সাংস্কৃতিক রাজধানী বলি। দারিদ্র্য, অবহেলা, অনাদর, কাজ না পাওয়া, স্বীকৃতি না দেওয়ার এক বিশাল দলিল রাখা থাকবে৷ সিনিয়র আর্টিস্টদের ব্যাংক ব্যালেন্স কিন্তু একই থাকবে। 

আমরা পাশ্চাত্য নিয়ে নাকউঁচু কিন্তু পাশ্চাত্য কিন্তু তার ঐতিহ্য, তার ইতিহাসকে গুরুত্ব দিতে জানে। পাশ্চাত্য জানে ঋত্বিক ঘটকের কালজয়ী ছবির নায়িকাকেও সিরিয়াল, লোকাল ব্র‍্যান্ডেড বিজ্ঞাপন করতে হয় এই বয়সে? জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মাধবী মুখার্জির কথা বলছি। অপরজন পদ্মশ্রী ভূষিত অভিনেত্রী। উত্তম কুমারের বহু ছবির নায়িকা, মঞ্চ অভিনেতা। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। তিনিও সিরিয়াল করে চলেছেন এখনো। কাজের জন্য ফোনও করে চলেছেন নানা সময়। 

এদের সিভিতে বা ঝুলিতে যে মাপের কাজ আছে বা যাদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা আছে, হলিউড ছাড়ুন, বলিউড হলে ও সেসব ভাঙিয়ে শেষ জীবন কাটিয়ে দিতেন৷ মাঝেমধ্যে কিছু নস্টালজিয়া উস্কানো সাক্ষাৎকার দিতে হতো। কিন্তু বাস্তবতাটা অন্য যে। 

সত্যি তো, কি হবে কালজয়ী সিনেমা বানিয়ে তারচেয়ে দুটো ভাইরাল ভিডিও বানাই ফ্রেন্ডস! টু'পাইস আসবে ঘরে। "এটা সিনেমা, এটা 70mm" বলে গর্ব করার লোকজনও তো এক এক করে নিভে যাচ্ছে। থেকে যাচ্ছে মোবাইল ফোনে বিশ্ব দর্শন।

বিক্ষুব্ধ সময়ে শিল্প ফিল্প কালচার ফালচার নিয়ে কেই বা ভাবে? ওদের অনাদরে রাখলে কি বা এলো গেলো? দেশ ও দশের সামনে একটা অপুর সংসার, চারুলতা, একটা গলি থেকে রাজপথ, একটা সুবর্ণরেখা, একটা নিশিপদ্ম বা মরুতীর্থ হিংলাজের কিই বা অবদান আছে? 

বাঙালি নিজেকে প্রগতিশীল বলে। কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ, উত্তম আওড়ায়। কিন্তু এবার বাঙালি জীবদ্দশায় আইকনদের নিয়ে আরেকটু বেশী উদযাপন করুক। মরে গেলে তো সবাই অমর হয়ে যান কিন্তু মানুষটাই তো দেখতে পান না সম্মাননার আয়োজন, সকটের সাথে হাঁটতে চাওয়ার ভীড়, চোখের জলে শেষ বিদায়। 

©------- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
#MayukhRanjanGhosh

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.