- রবিঠাকুরকেই জীবনের ধ্রুবতারা করলেন রবীন্দ্র গবেষক, শিল্পী সুজাতা
বিপ্লব বৈদ্য : শ্রীরামপুর : একসময় ফ্রেডরিকস নগর নামেই পরিচিত ছিল শ্রীরামপুর। সময়টা ছিল ১৭৫৫–১৮৪৫। হুগলি নদীর পশ্চিম পাড়ে তখন ছিল ডেনিসদের বাস। কালের পরিবর্তনে শহরকে ঘিরে ছোট–বড় একাধিক শিল্প গড়ে উঠতে থাকে। ভারতের দ্বিতীয় চটকল গড়ে ওঠে এই শহরেই। হুগলি জেলার অন্যতম উন্নত শহর হিসেবে দ্রুত পরিচিতি লাভ করে শ্রীরামপুর। এখনও বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই শহর। এশিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের দ্বিতীয় কলেজ। শ্রীরামপুর মিশনের প্রথম কাগজকল এবং ছাপাখানা। প্রথম বাংলা পত্রিকা–সহ এমনই একাধিক ইতিহাসসমৃদ্ধ শহর শ্রীরামপুর। এই শহরের বিখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত বাড়ির মেয়ে উঠতি রবীন্দ্র শিল্পী ড. সুজাতা ভর্ট্রাচার্য্য। শ্রীরামপুর কলেজের একসময়ের সংস্কৃত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান,শ্রীরামপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম কেরী মাশম্যানকে সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষাদান কারী সংস্কৃত শাস্ত্রের দিকপাল পন্ডিত পঞ্চানন কাব্যতীর্থ ছিলেন সুজাতার প্রপিতামহের পিতা।ছোটবেলায় মায়ের কাছেই গানের হাতখড়ি সুজাতার। রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ ও দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের গানে স্বর্নপদক জেতা মা পরিবারের রক্ষণশীলতা দরুন গানের জগতে বেশিদূর এগুতে পারেননি।মায়ের একান্ত ইচ্ছে ছিলো মেয়ে গান নিয়ে বহুদূর এগিয়ে যাক।মায়ের ইচ্ছেতেই গানকে আঁকড়ে ধরা ধন্যি মেয়ে টুম্পা ১৯৯৯ সালে সংগীত নিয়ে ভর্তি হন রবীন্দ্রনাথের গড়া বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার দিনটাই সুজাতার জীবনের সবচেয়ে বেশি আনন্দের দিন।সংগীত ভবন থেকে মাস্টার ডিগ্রি লাভের পর অধ্যাপক মানস দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে বিশ্বভারতী থেকেই লাভ করেন ডক্টরিট উপাধি। প্রবাদ প্রতীম সংগীত শিল্পী কণিকা বন্দোপ্যাধায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুভাষ চৌধুরী, রাজেশ্বর ভট্রাচার্য্য এবং ড. চিত্রলেখা চৌধুরীর মত গুণী শিল্পীদের কাছে তালিম নেন রবীন্দ্র সংগীতে। পন্ডিত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য এবং মোহন সিং খাংগুড়ার কাছ থেকে উচ্চাঙ্গ সংগীত এবং ওস্তাদ ফৈমুদ্দিন খান ডাগর সাহেবের কাছ লাভ করেন ধ্রুপদ শিক্ষা। বাংলার গৌরব, গ্লোবাল একাডেমীর পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার, সন্মানে সন্মানিত সুজাতার ২০১৯ সালে উত্তর আমেরিকার বঙ্গ সম্মেলনে - মন ও মননে রবীন্দ্রনাথ, পরিবেশনা দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো। বেতার, সরকারি - বেসরকারি টেলিভিশন, নানান সংগঠনের ফেসবুক লাইভের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র গানে দর্শকদের তৃপ্ত করছেন সুজাতা। ২০০৬ সালে বাবা সুধাংশু ভট্টাচার্য্য এবং ২০১৭ সালে মা প্রীতি ভট্টাচার্য্যকেও হারালেও রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়ে ধরে চলতে অবিচল সুজাতা। রবীন্দ্র দর্শনে আবিষ্ট সুজাতা পশ্চিমবঙ্গ সংগীত একাডেমী সহ বহু গানের প্রতিযোগিতায় ছিলেন বিচারকের ভূমিকায়।বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সুজাতার গানের ভূয়সী প্রশংসা করে দিয়েছেন শংসাপত্র।শ্রীরামপুরের গানের তরী মিউজিক একাডেমির অধ্যক্ষা সুজাতার কথায় যেদিন থেকে একটু বুঝতে শিখেছি, একটু জ্ঞান হয়েছে বলে মনে হয়েছে সেদিন থেকেই আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি রবীন্দ্রনাথকে। সুখ-দুঃখ, ভালোলাগা, খারাপলাগা সব সিচুয়েশনের মধ্যেই সুজাতা খুঁজে পায় রবীন্দ্রনাথকে।বোধিবৃক্ষ তলে বোধিসত্ত্ব লাভ করার পর ধ্যানরত বৌদ্ধদেবকে পায়েশ নিবেদন করে বৌদ্ধদেবের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সেদিনের সুজাতা। রবীন্দ্র গানের চর্চা, রবীন্দ্র গবেষণা ও রবীন্দ্র গানের প্রশিক্ষনে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে দেশ - বিদেশে রবীন্দ্র চর্চার প্রসার ঘটিয়ে অগনিত মানুষের মনে মননে দিনে দিনে ঠাঁই করে নিচ্ছেন এ যুগের আধুনিকা সুজাতা.
কোন মন্তব্য নেই