শিলচর ভাষা শহীদ স্টেশন হল না, শুধুই দিসপুরের উপেক্ষা, গনদাবীকে পদ দলিত
নয়া ঠাহর প্রতিবেদন, শিলচর : বিগত দেড় দশক কালের সময় সীমা অতিক্রম করেও একটি নায্য গণদাবী বাস্তবায়িত না হওয়ার দুঃখ বর্ণনা করার কোন নান্দনিক সুশ্রাব্য এবং সুসাংস্কৃতিক ভাষা আদৌ হয় কিনা বরাক উপত্যকার মানুষের জানা নেই। পুঞ্জিভূত ক্ষোভ, বেদনা এবং অপমান সহ্য করে পঞ্চদশ শহিদের আত্মবলিদানকে সম্মান জানাতে গত দেড় দশক কালের সুবিস্তির্ন সময়কালে গণ অভিবর্তন, মিছিল, সভা,গণ সাক্ষর, দিশপুর-দিল্লি যাতায়াত থেকে একাধিক নিয়মের আনুষ্ঠানিকতার শেষ দরজা পার করে যখন জানা গেল দাবী বাস্তবায়িত হবে না তখন ধৈর্য্যের শেষ বাঁধ টুকু ভেঙ্গে খানখান হয়। ভাষা শহিদ স্টেশন স্মরণ সমিতির সদস্য –সদস্যা থেকে শুরু করে এই দাবীর সমর্থক আপামর জনসাধারণের হয়েছে। কিন্তু থেমে থাকলে চলবে না। ১৯শে মে’র ঐতিহ্য বুকে নিয়ে যেদিন প্রথম পথ হাঁটা শুরু করেছিল এই সমিতি, সেদিন থেকে কন্ঠকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করতে করতে এক অদম্য জেদ চেতনে-অবচেতনে, দেহ-মনে বাসা বেঁধেছে । নগর, মহানগর, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন কত কিছুর নামের পরিবর্তন হলেও সব গেরো কি শিলচরের জন্যই? এই অদ্ভুত নিরুত্তর প্রশ্নে এই উপত্যকার শহিদদের আত্মবলিদানকেই শুধু হেয় করছে না, এই উপত্যকার ভাষার প্রশ্নে সংবেদনশীল নাগরিকদের সংগ্রামী চেতনাকেও প্রত্যাহ্বান জানাচ্ছে। চার দশকের সময়কালে মাতৃভাষার অধিকার অর্জনের চারটি সফল গণআন্দোলন এবং পঞ্চদশ শহিদের আত্মবলিদানের অন্তর্নিহিত অদম্য শক্তিকে তুচ্ছ ভাবা যে ভুল হয়েছিল, একদিন ইতিহাসে এই কথা প্রমাণিত হবে।
বহুভাষিক বরাক উপত্যকার ঐতিহ্যে সমন্বয়ের সুর প্রতিধ্বনিত হয় সবসময়। ১৯৬১ সালের আন্দোলন থেকে এই ঐতিহ্য উজ্বল থেকে উজ্বলতর হয়েছে । ডিমাছাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে এই উপত্যকার গণদাবীকে রাজনৈতিক কুচালে উপেক্ষা করা যাবে না। কেননা ডিমাছা সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলা সংস্কৃতির মেলামেশা বিগত কয়েক শতকের। বরাক উপত্যকায় কোন ভাষিক গোষ্ঠীর সাথে অন্য ভাষিক গোষ্ঠীর কোন সংকট বা সংঘাত নেই। - যার সত্যতা চিরন্তন। -এই কথাগুলো উচ্চারিত হল আজকের নাগরিক সভায়। সভা পরিচালনা করার জন্য যে সভাপতিমণ্ডলী তৈরি করা হয় তাতে ছিলেন সর্বশ্রী বাবুল হোড়, নিখিল পাল এবং ইমাদ উদ্দিন বুলবুল। সভাপতি মণ্ডলীকে সহযোগিতা করার জন্য তিন জনের একটি টিম মঞ্চে আসন নেয় যাদের মধ্যে শ্রী দীপক সেন গুপ্ত, জয়ন্ত পাল এবং নিলয় পাল ছিলেন। রেল স্টেশনের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কার্যালয়ে আহুত আজকের সভায় বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, অসম সাহিত্য সভা, মণিপুরী, হিন্দিভাষী এবং নেপালী সাহিত্য সভার প্রতিনিধি সহ ত্রিশটি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত থেকে মত ব্যক্ত করেন। কোভিড প্রোটোকলের সরকারি নিয়ম ও নির্দেশ মেনে আহূত এই সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা: রাজীব কর প্রারম্ভিক বক্তব্যে সভার সুর বেঁধে দেন। বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বীর সৈনিক সম্বোধন ফাঙলো একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। আমাদের অহংকার এর এবং আমাদের সম্মানের। খুব স্বাভাবিকভাবে ডিমাসা ভাষিক মানুষেরা তার নামের প্রশ্নে সম্মান প্রদর্শনের দাবি করছেন। যদিও ঐতিহাসিক ভাবে এই নামের সাথে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনের কোন সংযোগ নেই। তাইবলে বিষয়টাকে খাটো করে দেখাও চলবে না। বীর সম্বোধন ফাঙলোর নামে তার বাড়ির অদূরে নিউ হাফলং স্টেশনের নামকরণ হতে পারে, প্রচুর ডিমাসা মানুষ যেখানে থাকেন বিহারা বা ডিফু স্টেশনের নাম হতে পারে, এমনকি সরকার চাইলে শিলচরের আয়ুক্ত ভবন বা কাছাড় জেলা উপায়ুক্তের ভবনের এর নাম বীর সম্বোধন ফাঙলোর নামে হতেই পারে। আলোচনা করে সরকার সেরকমটাই ভাবুন। ভাষা শহিদের রক্তস্নাত রেলওয়ে স্টেশনের নাম উপত্যকার দীর্ঘদিনের গণদাবি 'ভাষাশহীদ স্টেশন, শিলচর' ই হবে। বরাক উপত্যকার বসবাসকারী প্রত্যেকটি ভাষিক মানুষের সাথে তাদের প্রত্যেকের অটল সম্প্রীতি আর ভালোবাসা বহুকালের। তাকে ভাঙচুর করার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে এবং সম্মান প্রদর্শন করতে হবে প্রতিভাসিত মানুষদের মেলবন্ধন কে।
সেই সুরেই বিভিন্ন বক্তারা বক্তব্য রেখেছেন। রাজীবের পরেই বক্তব্য রাখতে উঠেন ‘আকসা’ ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন উপদেষ্টা, বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতা প্রদীপ দত্ত রায়। প্রদীপ বাবু তাঁর বক্তব্যে ডিমাছাদের সঙ্গে বৈঠক করে পারস্পরিক মতবিনিময়ের মধ্যে সমস্ত মতান্তর দূর করে অল্প সময়ের মধ্যেই ঐক্যমতে পৌঁছে, একযোগে সরকারের কাছে আবেদন জানানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মতপ্রকাশ করেন । প্রদীপবাবুর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সমর্থনসূচক বক্তব্য রেখে শ্রী সুব্রত ভট্টাচার্য, শ্রীমতী কুসুম কলিতা, শ্রী শান্তি কুমার সিংহ, শ্রী কমল চক্রবর্তী, শ্রী বিপ্লব দেবনাথ, সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত, সীমান্ত ভট্টাচার্য এবং সন্তোষ লোহার প্রমুখরা।
সভায় আলোচনার বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন শ্রী কার্তিক দে
কোন মন্তব্য নেই