অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সরকার পুনরায় নিযুক্তি দেবে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা
অমল
গুপ্ত, গুয়াহাটি ঃ অসম
সরকার মাদক চোরাকারবার, মহিলা-শিশু নির্যাতন, গরু
পাচার প্রভৃতি অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে।
ধর্ম-ভাষা-জাতপাতের কোনাে সম্পর্ক নেই। অপরাধী অপরাধীই। কোনাে ক্ষমা নেই। সরকার
শূন্য সহনশীলতার নীতি নিয়ে কোনাে আপােষ না করে রাজ্যে অবৈধ কার্যকলাপকে নির্মূল
করবে। আগামী পাঁচ বছরের পর দেশের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী সুন্দর রাজ্য হিসাবে গড়ে
উঠবে অসম। আজ বিধানসভায় বিরােধী দলপতি দেবব্রত শইকিয়া জিরাে আওয়ারে এক নােটিশের
জবাবে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা দৃঢ়তার সঙ্গে এই বক্তব্য রেখে বলেন,
পুলিশ আইন মেনে কাজ করে। ডিমা হাসাও, কাৰ্বি
আংলঙ জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের এনকাউন্টার হয়েছিল। পুলিশকে আত্মরক্ষার জন্য পালটা
গুলি চালাতে হয়েছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধি সিআরপিসি সেকশন ৪৬-এ পুলিশকে ক্ষমতা
দিয়েছে। পুলিশের ওপর আক্রমণ হলে পুলিশকে বা পুলিশকে হত্যা করার চেষ্টা করা হলে
সেক্ষেত্রে পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে
গিয়ে ৫০৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুষ্কৃতিমূলক কাজ করে পালাবার সময় পুলিশ
আত্মরার জন্য কয়েকজনকে পায়ে গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। অসম সরকারই তাদের চিকিৎসার
ব্যবস্থা করেছে এবং আদালতে তুলেছে। পুলিশের হাতে যে ক্ষমতা আছে, সেই
ক্ষমতাই পুলিশ প্রয়ােগ করেছে। কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা দেবব্রত শইকিয়ার
অভিযােগ খণ্ডন করে বলেন, পাঞ্জাবের সিআরপিএফ-কে হ্যান্ডকাপ পড়া অবস্থায়
বা পুলিশি হেফাজতে গুলি করে হত্যা করা হয়নি। পুলিশকে আক্রমণ করতে উদ্যত হতে পুলিশ
আত্মরক্ষা তাগিদে বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। গৃহ বিভাগের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা মরিগাঁওয়ের এক অমানবিক ঘটনা তুলে ধরে বলেন,
জামের লােভ দেখিয়ে একটি ৯ বছরের মুসলিম শিশুকে গলা টিপে হত্যা করার
পর উপর্যুপরি ধর্ষণ করে মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায় অপরাধী। তার পরেও পুলিশ কিন্তু।
তাকে হত্যা করেনি। পুলিশের হেফাজত থেকে পালাবার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুড়তে
বাধ্য হয়। আইনই পুলিশকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। যদি কোনাে ব্যবস্থা না নেওয়া হত,
তবে অভিযােগ করা হত— পুলিশ টাকা খেয়ে অপরাধীকে ছেড়ে গিয়েছে।
রাজ্য আইনের শাসনে চলছে। আইন ভঙ্গ হলে তা সহ্য করা হবে না। প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি
দেওয়া হয়েছে। কোনাে নিরাপরাধী শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। এমন বার্তাই বিধানসভা
থেকে যায়। তিনি বলেন, গরু পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযােগ চলা কালে
৫০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২৩ জনকে গুলি করা হয়। অধিকাংশের পায়ে গুলি
লাগে। তাই রাজ্যের পুলিশকে অভিনন্দন জানাতেই হবে। এক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের
অভিযােগ মেনে নেওয়া যেতে পারে না। রাজ্য সরকার অসম পুলিশের সঙ্গে থাকবে এবং অসম
পুলিশের পাশে থাকবে। সেই কথা তিনি স্পষ্ট করে দেন। তিনি ডিজিপি এডিজিপি সহ রাজ্যের
পদস্থ পুলিশ অফিসারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, তারা
রাজ্যের অপরাধ জনিত কার্যকলাপ প্রতিরােধে উল্লেখযােগ্য কাজ করছে। তিনি আশা প্রকাশ
করেন, আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যে গরু পাচার, মাদকদ্রব্য
ব্যবহার,নারী পাচার সব বন্ধ হয়ে যাবে। বলেন, অরুণাচল
প্রদেশ থেকে বেআইনিভাবে মদ ঢুকছে, সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিধানসভায়
জিরাে আওয়ারে এআইইউডিএফের সিনিয়র বিধায়ক আমিনুল ইসলামের উত্থাপন করা জিরাে
আওয়ারের জবাব দিতে গিয়ে আবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গরু পাচার নিয়ে
সরকারের কড়া অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যের
অপরাধ জনিত ঘটনার তদন্তে এবং আইন শৃঙ্খলা জনিত প্রশ্নে পৃথক দুটি এজেন্সি গঠন করা
হবে। বলেন, রাজ্যে ৩১৯টি থানাকে মৈত্রী প্রকল্পের অধীনে এনে
ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হবে। অবসর প্রাপ্ত ৬০ থেকে ৬৫ বছরের পুলিশ অফিসারদের আবার
নতুন করে নিয়ােগ করে পুলিশের ডিউটির বােঝা হালকা করার প্রচেষ্টা হাতে নেওয়া
হয়েছে। বলেন, থানার একজন পুলিশ অফিসারকে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে
হয়। তাতে তাদের মধ্যে মানসিক শান্তি বজায় থাকে না। তাদেরকে ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি
করার ব্যবস্থা করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে গিয়ে অধিকাংশ পুলিশের মধ্যে অবসাদ
গ্রাস করে। তারা বছরের ৩০০ দিনের প্রাপ্য ছুটিগুলি ভােগ না করে জমিয়ে রাখে
অবসরকালীন আর্থিক সহায়তার জন্য। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাটালিয়নের
প্রতিজন পুলিশকর্মীকে বছরে একমাস ছুটি বাধ্যতামূলক করা হবে। সেই সময় তাদের
বাড়িতে গিয়ে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে যাতে থাকতে পারে এবং যারা ইতি মধ্যে
পরিবারের সঙ্গে থেকে কর্তব্যরত অবস্থায় আছেন তাদের দশ দিন ছুটি বাধ্যতামূলক করা
হয়েছে। শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে অপরাধজনিত কার্যকলাপ চলছে, সেই
কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিধায়কদের দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। তিনি গরু
পাচারের বিরুদ্ধে বলেন, গরু মানুষের অনেক উপকারই করে। প্রতিটি চা বাগানে
একটি করে গােশালা নির্মাণ করে গরুগুলিকে রাখা হবে। তাদের গােবর সার হিসাবে ব্যবহার
করা যাবে। | উপজাতি সম্প্রদায়ের বড়াে, রাভা,
মিছিং, কাৰ্বি, তিওয়া
প্রভৃতি উপজাতি জনগােষ্ঠীর জীবন জীবিকা প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে গড়ে উঠেছে।
তাদের নিজস্ব ধর্মভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি-বিশ্বাস আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সেদিকেই
লক্ষ্য রেখে অসম সরকার খিলঞ্জিয়া উপজাতি গােষ্ঠীর ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি রক্ষার
তাগিদে পৃথক এক বিভাগ খুলেছে। সেই বিভাগকে আসন্ন বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা
হবে। পাঁচ বছরের পাবে পাঁচশাে কোটি টাকা।
কোন মন্তব্য নেই