Header Ads

পশ্চিমবঙ্গে বিধানপরিষদের প্রস্তাব বিনা বাধায় পাশ

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা : বিধান পরিষদের প্রস্তাব ধ্বনি ভোটে পাশ হল। সরকার পক্ষের ১৯৬ জনের সমর্থনে, বিরোধী পক্ষের ৬৯-এর বিরোধিতায়। 

পাশ তো হল। লাভ কি হল? বিধান পরিষদের সদস্য থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ৯৮ জন।

মমতা এটা কেন করলেনএটাকে আসলে একটা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার করলেন। ধরুন প্রণব পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে দলে নিলেন। লোকটিকে কাছ থেকে দেখেছি। অপদার্থ বললে কম বলা হয়। কোন কাজে লাগবে না। লোকসভা, রাজ্যসভায় তৃণমূল পাঠালে তাদের ক্ষতি। কিন্তু প্রণব পুত্র বলে কথা। বাবার নামে আলোকিত। মমতা একে হয়তো বিধান পরিষদের একটা সদস্য পদ দিয়ে দেবেন। ব্যাস আর দেখে কে! নীল আলো জ্বালানো গাড়ি নিয়ে ঘুরবেন। পেছনে দুটো পুলিশ জীপ, সামনে দুটো এসকর্ট ভ্যান। ভালো মাইনে, বড় অফিস, ট্রাভেলিং এলাউএন্স, ১২ জন দিবা রাত্র সিকিওরিটি, দেখে কে?

কি যজ্ঞে লাগবেন এঁরা? বিধান পরিষদ আসলে একটা সো কেস। এঁদের না থাকবে কোন আইন পাশ করানোর ক্ষমতা, না থাকবে এক্সিকিউটিভ পাওয়ার। যা থাকবে তা হল মুকুট পরে আলো করে বসে থাকার ক্ষমতা।

এঁদের পুষতে কিরকম খরচা হবে? আমার পরিচিত এক প্রাক্তন আমলা বলছিলেন প্রত্যেকের পেছনে মাসে প্রায় ২৫ লাখের গল্প থাকবে। কি ভাবে?   এঁদের সুযোগ সুবিধে থাকবে রাজার মত। এঁদের জন্য যে অফিস থাকবে তার ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে এঁদের বিমান সফর, হেলিকপ্টার সফর, চিকিৎসা খরচ সব মিলিয়ে বছরে ন্যূনতম ১২০০ কোটির ইনভেস্টমেন্ট। 

খুব দরকার ছিল? রাজ্যের এখন আর্থিক অবস্থাটা কি?

পশ্চিমবঙ্গে এখন সাড়ে পাঁচ লক্ষ সরকারি পদ অবলুপ্ত।  স্কুল শিক্ষকের পদ ৮৭ হাজার অপূর্ণ। কলকাতা পুলিশে ভেকেন্সি ৪৫ হাজার, রাজ্য পুলিশে সংখ্যাটা ৭৫ হাজার। তিন হাজার ৭০০ টি লাইব্রেরিয়ান পোস্ট ভেকেন্ট। দমকলে ভেকেন্সি প্রায় ৬ হাজার ৩০০ জন। অধিকাংশ সরকারি অফিসে কনট্র্যাক্টচুয়ালে ভর্তি। প্রাপ্য ডি এ  থেকে বঞ্চিত সরকারি কর্মীরা। স্কুলে কলেজে লাইব্রেরিয়ান পদ খালি পড়ে রয়েছে। গ্রুপ ডি তে ১ লক্ষ ৩০ হাজার পদ ফাঁকা। কনস্টেবল না নিয়ে বিনা এপয়েন্টমেন্ট লেটারে ১ লাখ ৩৯ হাজার সিভিক পুলিশকে দিয়ে গতরে খাটানো হচ্ছে। খাদ্য দফতরে বারো হাজার পদে লোক নেই। হাসপাতাল গুলোতে প্রায় ২৩ হাজার স্থায়ী নার্সিং স্টাফ নেই।

এই এত নেইয়ের কারণ আসলে সরকারের হাতে টাকা নেই। বাজারে এই মুহূর্তে চার লক্ষ ৮০ হাজার কোটির দেনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। এ রাজ্যে প্রত্যেক নবজাতক জন্মাচ্ছে মাথায় ৬০ হাজারের দেনা নিয়ে।

তবু বিধান পরিষদটা ভীষণ দরকার। কারণ তাঁর "ইচ্ছে হয়েছে"  একটা রিহ্যাবিলিটেশন কেন্দ্র খোলার। তাই খুলছেন। তাতে বাংলার বেকাররা কেমন থাকল তার বয়েই গেল।

আমার মেসেঞ্জারে এক চাষীর ছেলে সম্প্রতি লিখেছে - স্কলারশিপ নিয়ে এম এস সি ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে শেষ করলাম। গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলাম চাকরি নেই বলে। বাবার বয়স হয়েছে। আর সংসার টানতে পারছেন না। চাষ বাসে বাবাকে সাহায্য করব। আমিও এখন থেকে মাঠে যাব। চাষ বাস শিখে সংসারটা চালাতে চাই, বৃদ্ধ বাবাকে একটু বিশ্রাম দেব।

এই চাষীর ছেলের কাছে এই বিধান পরিষদ কি বার্তা পাঠাবে কেউ ভেবেছেন?

 

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

 


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.