মোদি সরকারের সফল বিদেশ নীতির ফলে উত্তরপূর্বে জঙ্গি মদত কমেছে বাংলাদেশের অভিমত
কিশোর সরকার, ঢাকা, ১২ জুলাই : বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে বহু রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসলেও স্থল সীমান্ত চুক্তি (ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্ট)-র মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনও চুক্তি হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি বিশ্বের কাছে একটি অনন্য উদাহরণ। এছাড়া ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমাও নির্ধারণ হয়েছে। রেল, সড়ক ও নৌ যোগাযোগ সহ দু’দেশের সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মোদী সরকারের সফল বিদেশনীতির সুবাদেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সেভেন সিস্টার্স) জঙ্গি মদত বন্ধ হয়েছে এবং বাংলাদেশে আশ্রিত ভারতীয় জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে। জঙ্গিদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
যাবতীয় বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এই সুসম্পর্ককে মোদী
সরকারের সফল বিদেশনীতির বিজয় হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিরা।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান সম্পর্কের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের
অর্থনীতিবিদ-সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে কথা বলেছেন বহুভাষী সংবাদ
সংস্থা 'হিন্দুস্থান সমাচার'-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি কিশোর সরকার।
সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিদের মতামত, বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের একটি আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা বাংলাদেশের দ্য ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, "ভারতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পারস্পরিক বিশ্বাসের একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতেই দু’দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্ট ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন লোকসভায় তা পাশ না হওয়ায় এটা সাংবিধানিক রূপ পায়নি। নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেওয়ায় লোকসভায় তা পাশ করা সম্ভব হয়েছে। সব দল এই বিলকে সমর্থন করেছে। সমুদ্রসীমাও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রেও রেল, সড়ক ও নৌ-ক্ষেত্রে একাধিক রুট চালুর প্রক্রিয়া রয়েছে। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ-সব ক্ষেত্রে বড় সাফল্য এসেছে। যার সুফল হিসেবে সবচেয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের নাগরিকরা দীর্ঘমেয়াদি উপকৃত হবেন।"
তিনি আরও বলেন,
"ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২০ লক্ষ টিকা
দিয়েছেন। চলতি মাসে ২৯০ মেট্রিকটন জীবনদায়ী অক্সিজেনও পাঠিয়েছেন। এটাও মোদীর
আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। তবে চুক্তি সম্পাদিত বাকি টিকা দ্রুত বাংলাদেশকে দেওয়ার
ব্যবস্থা করা দরকার।" ইকবাল সোবহান বলেন, "বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০
বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই করোনাকালীন অতিমারির মধ্যে বাংলাদেশে আসাও নরেন্দ্র মোদীর
ব্যক্তিগত প্রয়াসের অংশ বলে সচেতন মানুষ মনে করেন। বিজেপি সরকার ১৫ আগস্ট তাদের
স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার কুচকাওয়াজে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটি দল অংশ গ্রহণ
করার সুযোগ দিয়েছে। ভারতের ইতিহাসে বাইরের কোনও দেশের সেনাবাহিনী তাঁদের রাষ্ট্রীয়
কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ এটাই প্রথম। এটি একটি বিরল ঘটনা। মোদী সরকার এর মাধ্যমে দু’দেশের কুটনৈতিক সম্পর্কে
নতুন মাত্র দিয়েছেন। একই ভাবে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আশার পর
থেকেই বাংলাদেশে ভারতের জঙ্গিদের যে ক্যাম্প ছিল তার মূল উৎপাটন করছেন। বাংলাদেশের
মাটি ব্যবহার করে সেভেন সিস্টার্সে জঙ্গিবাদ পরিচালনা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি
কার্যকর করেছেন। এমন-কি বাংলাদেশের ৫০-তম স্বাধীনতা দিবস পালনকালে মোদীর বিরুদ্ধে
যারা কুৎসা রটিয়েছে তাদের কঠোর ভাবে দমন করেছেন হাসিনা।
সেভেন সিস্টার্সের যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে
করিডোর হিসেবে ব্যবহারে সুযোগ দেওয়াটা মোদীর বড় কূটনৈতিক সাফল্য, বলেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট
বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর প্রফেসর
ড. আতিউর রহমান। যোগাযোগ ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের
প্রধানের ভূমিকাকে কেমন ভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ
ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান বলেন, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে
সেভেন সিস্টার্সের যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারের
সুযোগ দেওয়াটা মোদী সরকারের একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা স্বীকার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
আন্তরিকতা কতটা, তা ত্রিপুরার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য যোগাযোগ
সহজ করার লক্ষ্যে ফেণী নদীর উপর সেতু উদ্বোধন করার সময় প্রকাশ করেছেন।
আতিউর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশের
সিমেন্ট সহ কৃষিপণ্যের রফতানি বহুলাংশে বেড়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিজার
ক্ষেত্রে মোদী সরকার অনেক সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে। এছাড়া ভুটান ও নেপালের ট্রেড
ফেসিলেশনের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য ২০১৫ সালে
বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা ও নরেদ্র মোদীর সময় সীমান্তে বর্ডার হাট করা হয়েছে। এতে দুই দেশের
সীমান্তের মানুষের মধ্যে আরও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের রফতানিও বৃদ্ধি
পেয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়াতে বাংলাদেশের বন্দরগুলো ব্যবহারের জন্য
আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর বিশেষ প্রতিনিধি লায়েকুজ্জামান বলেন, যুদ্ধ ছাড়াও সীমান্ত চুক্তি
যে সম্ভব, বাংলাদেশ-ভারত ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমন্ট তারই উদাহরণ।
ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে লায়েকুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধ ছাড়া
সীমান্ত চুক্তি সম্ভব যে তা ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্টের মধ্য
দিয়েই মনে হয় প্রথম প্রমাণিত হয়েছে। তবে প্রচারের অভাবে ভারতের অবদানের বিষয়
বাংলাদেশের নাগরিকরা জানতে পারে না বললেই চলে। ভারতের অবদানের বিষয়টা বাংলাদেশের
গণমাধ্যমে সঠিক ভাবে তুলে ধরার জন্য ভারতের পক্ষ থেকেও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় না। আর
১৯৪৭ সালের পর থেকে এই দেশের মানুষকে ভারত-বিদ্বেষী করার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর জাসদ এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত তা আরও উস্কে দিয়ে
ভারত-বিরোধিতার রাজনীতি করছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, যমুনা টিভির বিজনেস এডিটর সাজ্জাম আলম খান তপুর মতে নেতিবাচক প্রচার সব দেশের গণমাধ্যমের চরিত্র। গণমাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের ভালো দিকগুলি তুলে না ধরে নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে সাজ্জাম আলম খান তপু এভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নেতিবাচক প্রচার সব দেশের গণমাধ্যমের চরিত্র। আমরা চেষ্টা করছি যাতে দু’দেশের সম্পর্কের বিষয় নিয়ে সঠিক তথ্য গণমাধ্যমে আসে। তবে টিকা নিয়েও যারা অপপ্রচার করছে তারা অনেকেই আবার ভরতের পাঠানো টিকা নিয়েছেন। এখন আবার না পাওয়ায় আফশোসও করছেন।
সৌজন্য : হিন্দুস্থান সমাচার
কোন মন্তব্য নেই