সীমান্ত সুরক্ষা করতে সরকার ব্যাটালিয়ন গড়বে
অমল
গুপ্ত, গুয়াহাটি : অসম-নাগাল্যান্ড, অসম-মিজোরাম
সীমান্তে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। বাকের ধলাই সীমান্তের খুলিছড়ায় গ্রেনেড
বিস্ফোরণে সীমান্ত কেঁপে উঠেছে। অসম পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এদিকে,
নাগাল্যান্ড সীমান্তে মরিয়নির তিরুহিলসের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নাগাদের
দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। এই অভিযোগ পেয়ে
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা আজ বিধানসভায় বলেন, সাংবিধানিক
নিয়ম-নীতি মেনেই নিজস্ব ভৌগোলিক এলাকায় তাদের গতিবিধি সীমাবদ্ধ আছে। অসমের
জমি কেউ কজা করেনি। বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে ভবিষ্যতে দশটি ব্যাটালিয়ন
গড়ে সীমান্ত বনাঞ্চল সুরক্ষা এবং সীমান্ত অভিযান চালানো হবে। বিরোধী
দলপতি দেবব্রত শইকিয়ার এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, অরুণাচল
প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর,
মিজোরাম এমনকি পশ্চিমবঙ্গ তাদের জমি দখলের চেষ্টা করে সংঘর্ষে
জড়িয়েছে। ২০১৬ থেকে এই ধরনের ২০৯টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত ১২৭ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অসম সরকার নাগাল্যান্ড,
মিজোরাম প্রভৃতি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কাজ
করছে। তিনি নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিওকে এক পত্র যোগে তাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেদখল নিয়ে
অভিলম্বে ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, আজ বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বরাষ্ট্র
বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব জানান, রাজ্যে
এপর্যন্ত দুটি নিষিদ্ধ উগ্রপন্থী সংগঠন আছে। আলফা এবং এনডিএফবি। আর একটি
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে তার নাম- কে এল ও। তিনি জানান, ২০১৬
সাল থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে সর্বমোট
৩৪৪৯জন উগ্রপন্থী আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের কাছ থেকে ১৩০৬ টি বিভিন্ন মারণাস্ত্র,
২০৭২২টি বিভিন্ন গুলি, ৮৯টি বোমা, ৫৯৯টি গ্রেনেড এবং ১২১.৭২৫ কে.জি. বিস্ফোরক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও পরবর্তী সময়ে আত্মসমর্পণকারী উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো ৭৪৮টি বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র এবং ১৯২৯৯টি
গুলি সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। আত্মসমর্পণ করার পর উগ্রপন্থী সদস্যদের পুনরবাসনের
জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ১৫০৩জন বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনের
আত্মসমর্পণকারীদের মাসে ৬ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া ব্যবস্থা করেছে।
তাছাড়া, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে
৪ লক্ষ টাকার ব্যাংকে ফিক্স ডিপোজিটের
ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন এনডিএফবি সংগঠনের ১৭১৭ জন ক্যাডারকে অসম
পুলিশের বিশেষ শাখার সহযােগে রাজ্যিক পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন বিভাগের অধীনে দক্ষতা বিকাশে এক প্রশিক্ষণ
দেওয়া ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। বিটিএডি জেলাতে এই প্রশিক্ষণ চলছে। ২০২১ সালের
আত্মসমর্পণকারী ৪৬৩ জন প্রাক্তন উগ্রপন্থী ক্যাডারকে অসম পুলিশের সশস্ত্র শাখর
সিপাহি হিসাবে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে ১১টি উগ্রপন্থী সংগঠনের
সঙ্গে আলোচনা
প্রক্রিয়া চলছে। আলফা, কেএলএনএলএফ(কার্বি লাংরি, এন সি
হিলস লিবারেশন ফ্রন্ট), এসিএমএ (আদিবাসী কোবরা মিলিটান্ট আসাম), বিসিএফ
(বিরসা কমান্ডো ফোর্স),
কেআরএ (কুকি রিভিউলেশনারি আর্মি), ইউকেডিএ
(ইউনাইটেড কুকিজাম ডিফেন্স আর্মি), কেএলও/কেএলএ (কুকি লিবারেশন
অর্গানাইজেশন/কুকি লিবারেশন আর্মি), এইচপিসি(ডি) (হামার পিপলস কনভেনশন ডেমোক্রেটিক), এপিএ(আদিবাসী
পিপলস আর্মি), এএএনএলএ (অল আদিবাসী ন্যাশনাল আর্মি) এবং
এসটিএফ(সাওতাল টাইগার ফোর্স)। বিশ্বজিৎ ফুকনের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দায়িত্ব প্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা একথা জানান।
কোন মন্তব্য নেই