Header Ads

পেট্রোল ডিজেলের লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের বিক্ষোভ প্রদশর্ন

সংবাদদাতা, শিলচর : গত একবছর ধরে ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বর্তমানে আকাশ ছুঁয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ শিলচর এন এস এভিনিউয়ের একটি  পেট্রোল পাম্প এর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

এদিন ফ্রন্টের সদস্যরা একটি স্কুটারে মালা পরিয়ে তাকে দড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে যান। এই অভিনব প্রতীকি কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করলাম - বলেন ফ্রন্টের সদস্য সমর ভট্টাচার্য। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবাদী পোস্টার হাতে নিয়ে এদিন উপস্থিত সদস্যরা শ্লোগানে শ্লোগানে এলাকা মুখর করে তুলেন।পরে এই ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ এর মূখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে গত একবছর ধরে কেন্দ্র সরকার ক্রমাগত পেট্রোপন্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন যা বর্তমানে অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে এবং এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অবধারিত। তিনি বলেন যে অন্য রাজ্যের সরকার পেট্রোল ডিজেলের উপর কর কমালেও আসাম সরকার এখনও বর্ধিত হারে এই কর আদায় করছে। তাই আসামে পেট্রোপন্যের দাম বেড়েই চলেছে।  সরকারকে অবিলম্বে পেট্রোপন্যের উপর রাজ্যিক কর কমাতে হবে বলে দাবি জানান তিনি। তার বক্তব্য এটা হলে জনগন কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

ফ্রন্টের আরেক আহ্বায়ক জহর তারন বলেন যে ২৮ শে জুনের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান ও শ্রীলঙ্কার নিরিখে ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম সর্বাধিক। এসবের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম নেপালে যা  ৭৯.৩৯ টাকা যেখানে ভারতে গড় দাম ১০০.৫৪ টাকা। তিনি আরো বলেন যে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ২০১৪ তে ছিল ১০৮ ডলার যখন এই দেশে পেট্রোলের দাম ছিল ৭৯.২৬ টাকা। বর্তমানে অশোধিত তেলের দাম ৭৪.৫৩ টাকা যেখানে পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি একশ টাকা ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন যে বর্তমান সরকার আদৌ সাধারণ জনগণের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে ভাবিত নয়। নাহলে অবশ্যই এই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে পেট্রোপন্যের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী যেসব সাফাই দিয়েছেন তার সবটাই ছেঁদো যুক্তি। মন্ত্রী প্রথমে বললেন যে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য টাকা দরকার তাই দাম বেড়ে যাওয়ায় যে রাজস্ব বেড়েছে তা সরকার সঞ্চয় করে রাখছেন। এরপর আবার তিনি বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করলেন। এখন আবার বলছেন যে পূর্বতন কংগ্রেস সরকার যে সব তেলের বন্ড ধার নিয়েছিল তার মূল্য সুদে আসলে চোকাতে গিয়েই নাকি দাম বাড়ানো হয়েছে। জয়দীপ বাবু বলেন যে এসমস্ত যুক্তির কোনটাই ধোপে টেকেনা। জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য যদি জনগনকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলতে হয় তবে তাকে ' গরু মেরে জুতো দান' ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে ? এছাড়া সরকার নিজেই দেশীয় তেলকোম্পানিগুলিকে বিশ্ববাজারের নিরিখে দাম ধার্য্য করার স্বাধীনতা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যে বাড়তে পারে এটাও মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। তিনি বলেন যে পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের পর  দুবার কেন্দ্রে বিজেপি সরকার নির্বাচিত হয়েছেন , এতোদিন কেন এইসব ওয়েল বন্ড এর পরিশোধ হলনা ,কেনই বা এর আগে কখনো এই অভিযোগ শোনা গেলনা? মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক বলেন যে  আসলে এসবই নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি কোষাগারে টান পড়েছে বলেই সরকার পেট্রোপন্যের লাগামছাড়া দাম বাড়িয়ে সেটাকে পুষিয়ে নিতে চাইছেন। জয়দীপ বাবু আরো বলেন যে বর্তমানে পেট্রোপন্যের উপর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ ট্যাক্স আদায় করছেন যার ৩৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় এক্সাইজ ডিউটি ও ২৩ শতাংশ রাজ্যিক কর হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। তার বক্তব্য সাধারণ জনগনের কথা যদি সরকারের মাথায় থাকে তবে অবিলম্বে এই ট্যাক্স কমানো জরুরী। কারণ এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য শুধু যাদের ব্যাক্তিগত যানবাহন আছে তারাই যে সমস্যায় পড়েছেন তা নয়। এরফলে জন পরিবহনের ব্যায় বাড়ছে। তিনি বলেন ইতিমধ্যে লরিমালিক দের সংগঠন পরিবহন শুল্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। ফলে এমন চললে অচিরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হবে, এবং মূদ্রাস্ফীতিও অবধারিত। এবং সেক্ষেত্রে কোভিড জনিত পরিস্থিতির ফলে দেশের অর্থনীতির যে অবনয়ন হয়েছে তাঁর থেকে ঘুরে দাড়ানোও অসম্ভব হয়ে ওঠবে।

বিডিএফ সদস্যরা এদিন মূখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে পেট্রোল ও ডিজেলের উপর রাজ্যের কর কমানোর জন্য দাবি জানান।তারা পেট্রোপন্যকে জিএসটির অধীনে নিয়ে আসার দাবিও জানান।একই সাথে এই সমস্যার সুরাহা না হলে ভবিষ্যতে তারা আরো বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি নেবেন বলে ঘোষণা করেন।

অন্যান্যদের মধ্যে এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পার্থ দাস, হৃষীকেশ দে, সঞ্জয় পুরকায়স্থ ,যুবফ্রন্টের পক্ষ থেকে কল্পার্ণব গুপ্ত, ইকবাল নাসিম চৌধুরী,দেবায়ন দেব,অমিত চৌধুরী,কুনাল নাগ  প্রমূখ।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে।

 


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.