ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে সরকার বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা পেতে পারে, তাতে সংখ্যালঘুর উন্নয়ন সম্ভব
অমল
গুপ্ত, গুয়াহাটি : অসম
দারিদ্র পীড়িত রাজ্য। আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে চলে। এই প্রেক্ষাপটে আজ বিধানসভার
দ্বিতীয় দিনে প্রাইভেট মেম্বারদের জন্য নির্দিষ্ট সংকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করে
কংগ্রেসের শেরমান আলী এবং জাকির হুসেইন শিকদার রাজ্যের আর্থিক বিকাশের পথের সন্ধান
দেন। শেরমান আলী রাজ্যের মুসলিম জনগােষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অর্থের উৎস
সন্ধানের পথ দেখান। তিনি মুসলিমদের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে গঠিত ওয়াকফ বাের্ডের
বিশাল সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেন। বিস্তারিতভাবে জানালেন, ১৪
হাজার ৯০৭টি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে যার মূল্য লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্ৰী
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার জনসংখ্যা নীতির কথা উল্লেখ করে স্বীকার করেন, মুসলিম
জনগােষ্ঠীর মধ্যে সন্তানের সংখ্যা বেশি। তা উদ্বেগের ব্যাপার। গুয়াহাটি, শিলচর,
ধুবড়ি, তেজপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
সম্পত্তি শনাক্ত করে দখল করে যদি একশােটি কমার্শিয়াল প্রােজেক্ট তৈরি করা হয় তা
থেকে বছরে দশ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসবে। সেই টাকাতে সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠীর
শিক্ষা-দীক্ষা সহ সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় করা যেতে পারে। সরকারকে এর জন্য এক
পয়সাও ব্যয় করতে হবে না। তিনি শুধু গুয়াহাটি এবং শিলচর শহরের ওয়াকফ সম্পত্তির
হিসাব তুলে ধরে বলেন, গুয়াহাটির ফ্যান্সিবাজার, পানবাজার
অভিজাত এলাকায় ১৪ বিঘারও বেশি সম্পত্তি আছে। শিলচরের মালুগ্রামে তিন কোটি টাকারও
বেশি সম্পত্তি আছে। কিন্তু শিলচরের এই সম্পত্তি থেকে সরকারের ঘরে রাজস্ব আসে বছরে
মাত্র ২০০/৩০০ টাকা। তার বক্তব্য রাখার সময় মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সদনে
ছিলেন না। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী চন্দ্রমােহন পাটোয়ারী, তথ্য ও
জনসংযােগ মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা, বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য খুব মন দিয়ে
শুনছিলেন। তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন এআইইউডিএফের সিরাজুল আজমল। তিনি সারা
দেশের ওয়াকফ সম্পত্তির এক রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, দেশে
অধিকাংশ ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদ, মাটির
দালাল তার ভােগ করে আসছে। অসমে ওয়াকফ বাের্ডের চেয়ারম্যান পর্যন্ত নেই।
কংগ্রেসের জাকির হুসেইন এই সংকল্প প্রস্তাবকে সমর্থন করে সরকারকে বিহিত ব্যবস্থা
গ্রহণের দাবি জানান। সংকল্প প্রস্তাবের শেরমান আলী বলেন, ধর্মের
সঙ্গে সম্পর্ক আছে ভেবে সরকার ওয়াকফ বাের্ড নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেন না। কিন্তু
ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সরকার হাউস কমিটি গঠন করে রাজ্যের
ওয়াকফ সম্পত্তি শনাক্ত করে হাজার হাজার কোটি টাকা সদ্ব্যবহার করলে রাজ্যের
অবহেলিত সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। শিক্ষার প্রসার
হলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। আজ
বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগ জানান, মাইক্রো
ফাইনান্স থেকে ঋণ গ্রহণ করা ঋণের পরিমাণ ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৩২ টাকা ঋণ
বকেয়া আছে। এই ঋণ মুকুব করার ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুয়াহাটি উন্নয়ন
বিভাগের চেয়ারম্যান অশােক সিংহলের নেতৃত্বে এক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সেই
কমিটি ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলাের সঙ্গে আলােচনা চালাচ্ছেন। এই প্রশ্ন উত্থাপন করে
উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
সরকার নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিন ১২৫০০ কোটি টাকা নেওয়া
হিতাধিকারীদের ঋণ সরকার মিটিয়ে দেবে। কিন্তু সরকার এখন লুকোচুরি খেলছে। এখন
মুখ্যমন্ত্রী অন্য মন্ত্রীদের দ্বারে দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে প্রতিশ্রুতি থেকে
সরে আসতে চাইছেন। চরণ বড়াের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, রাজ্যে
৩১ মার্চ ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৭,৩৪,০৬৮ জন হিতাধিকারীকে অরুণােদয় প্রকল্পে
অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। বিটিএডি এলাকার জেলা সমূহের ষষ্ঠ তপশিল এলাকাতেও এই
সুবিধার সম্প্রসারণ ঘটানাে হবে। ছাপাগুরি, বরমা,
তামুলপুর, বিজনি, সিদলী,
কোকরাঝাড় পশ্চিম-পূর্ব, গোঁসাইগাঁও, পানেরি,
ওদালগুড়ি, মাজবাট।
কোন মন্তব্য নেই