শিক্ষার প্রসার হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, শেরমান আলীর এই প্রস্তাব মেনে নিলেন
অমল
গুপ্ত, গুয়াহাটি : অসমের
হিন্দু-মুসলিম জনগােষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক এক অবিশ্বাসের বাতাবরণ বিদ্যমান। এই
প্রেক্ষাপটে আজ বিধানসভায় বিরােধী কংগ্রেস দলের সদস্য শেরমান আলী আহমেদের
উত্থাপিত এক প্রস্তাব নিয়ে এক সদর্থক আলােচনা হয়। এই আলােচনায় দুই জনগােষ্ঠীর
মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণ কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। আজ বিধাসভার
নিয়ম-নীতির অধীন রুল পঞ্চাশ অনুযায়ী এই প্রস্তাবকে মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব
শর্মা প্রশংসা করে তাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। শেরমান আলীর বিধানসভায় উত্থাপিত
তার প্রস্তাব- ‘অসমে বসবাসকারী মুসলিম জনগােষ্ঠী বিশেষ করে
চরচাপরি অঞ্চলে বসবাস করা মুসলমান সমাজের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
স্থাপন, শিক্ষক নিয়ােগ করে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে বাল্য
বিবাহ রােধ করতে হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যাতায়াত
প্রভৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করে জনসংখ্যানুপাতে সরকারি এবং বেসরকারির
ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়ােগের ব্যবস্থা করে জন্ম নিরােধক ব্যবস্থাকে
সুলভ করতে হবে। কঠোরভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে চরচাপরি অঞ্চলে
বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হােক। মুখ্যমন্ত্রী
এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে বলেন, জনসংখ্যানুপাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে
নিয়ােগের দাবি ছাড়া বাকি সব ব্যাপারেই সরকার এই প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পােষণ
করে। তিনি বলেন, দু’য়েকটি সংশােধনী ছাড়া এই প্রস্তাবটি
সরকার গ্রহণ করতে পারে। তিনি রাজ্যবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন, বিজেপি
মুসলিম বিরােধী নয়, দ্রারিদ্রতা বিরােধী। তিনি নিম্ন অসমের বরপেটা সহ
বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে চরচাপরি অঞ্চলের তুলনা করেন উজান অসমের সঙ্গে। বলেন,
নিম্ন অসমের হতদরিদ্র মুসলিম পরিবারগুলির মধ্যে সন্তান-সন্ততির সংখ্যা
বেশি। সার্বিকভাবে স্বচ্ছলতার মুখ তারা দেখেনি। উজান অসমে যে পরিবারের সন্তানের
সংখ্যা কম, সেই পরিবারগুলােতে স্বচ্ছলতার ছবি ধরা পড়েছে।
২০১১ সালের জনসংখ্যার প্রতিবেদন তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন,
২০১১-তে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ। এবং হিন্দু জনগােষ্ঠীর
বৃদ্ধির হার মাত্র ১০ শতাংশ। বাঘবর, চেঙ্গা, জলেশ্বরে
মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের দ্রারিদ্রপীড়িত মানুষ সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি পাওয়ায়
খালি জমির খোঁজে সরকারি জমি, বনবিভাগের জমি গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। নানা
অপরাধ বেড়েছে, নারী পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার | কেরালা,
ত্রিবান্দ্রম থেকে নয় জন মুসলিম কিশােরীকে অসম পুলিশ উদ্ধার করেছে।
দেহ ব্যবসার জন্য তাদেরকে বিক্রি করার ষড়যন্ত্র চলছিল। তিনি বলেন, এই
ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মুসলিমদের জনগােষ্ঠীর মধ্যে সরকার পর্যাপ্তহারে
শিক্ষা, ব্যাপক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পরিকাঠামাে
উন্নয়ন প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি আরােপ করেছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনাে
সম্পর্ক নেই। দ্রারিদ্রতা থেকে উত্তরণের জন্যই জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সরকার ১৮ বছরের তলে বাল্য বিবাহ প্রতিরােধে এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে
ব্যাপকহারে প্রচার করার লক্ষ্যে সরকার আশাকর্মীদের ছাড়াও বিশেষ করে চরচাপরি
অঞ্চলের জন্য এক হাজার কর্মীর পিপলস আর্মি তৈরি করবে, যারা
গ্রামগঞ্জে ঘরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ, বাল্য বিবাহ প্রভৃতি কসংস্কারের ক্ষেত্রে
দিক নির্দেশ করবে। মুখ্যমন্ত্রী উজান অসমের বিধায়কদের নিম্ন অসমের বিশেষ করে চর
অঞ্চলের দ্রারিদ্র পীড়িত মানুষদের দুরবস্থা দেখে আসার পরামর্শ দেন। উপাধ্যক্ষ ডা.
নুমল মােমিন সরকারের এই প্রস্তাব গ্রহণ করে জানান, সাত
দিনের জন্য উজান অসমের বিধায়করা যাবে নিম্ন অসমে এবং নিম্ন অসমের বিধায়করা যাবে
উজান অসমে। তার ব্যবস্থা তিনি করবেন। চর অঞ্চলের বিস্ফোরক জনসংখ্যা বৃদ্ধির
প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একবার বরপেটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
ঘুরে আসুন। সেখানে দেখবেন নার্সরা ডেলিভারি রুমে আসছে আর যাচ্ছে। একদম বিশ্রাম পান
না। এইসব। দেখার জন্য সমীক্ষার প্রয়ােজন নেই। এটাই বাস্তব। মন্ত্রী চন্দ্রমােহন পাটোয়ারী এই প্রস্তাবের জবাবে
বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, কংগ্রেস, এআইইউডিএফ
অভিযােগ করেছে, ৩৪
শতাংশ মুসলিম জনগােষ্ঠীকে বাদ দিয়ে সরকার ‘খিলঞ্জীয়া
মুসলিমদের নিয়ে বৈঠক করল। চরচাপরি অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমকে বাদ দেওয়া হল।
এর জবাবে পাটোয়ারি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুসলিম জনগােষ্ঠীর সার্বিক
বিকাশের কথা বলেন, চরচাপরি অঞ্চলের মুসলিম প্রতিনিধিদের নিয়ে পৃথক
এক বৈঠক ডাকবেন। তিনি বলেন, চরচাপরি অঞ্চলে শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ
দৃষ্টি দিয়েছে। ২১টি আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রত্যেকটিতে ৩৩ কোটি ৪২ হাজার
টাকা করে বরাদ্দ করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু অঞ্চলে মহিলা মডেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে।
চর অঞ্চলের রাস্তাঘাট বিদ্যুৎ প্রভৃতি উন্নয়নে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রস্তাবের আলােচনায় অংশগ্রহণ করেন এআইইউডিএফের জুনিয়র আমিনুল ইসলাম, সিনিয়র
আমিনুল ইসলাম, বিজেপির মৃণাল শইকিয়া, অগপর
প্রদীপ হাজরিকা প্রমুখ। বিজেপি ও অগপ বিধায়করা অভিযােগ করেন, রাজ্যের
যে সব জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা কম, সেই সব জেলাগুলােতে মুসলিম জনগােষ্ঠীর
মানুষকে নিয়ে এসে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে জনবিন্যাসে চিড় ধরে।
কোন মন্তব্য নেই