পশ্চিমবঙ্গের লাভ জনক সংস্থার উপর কোপ পড়তে চলেছে, "বাংলা থেকে প্রধানমন্ত্রীর" দাবি বাঙালি ছাত্র যুব সমাজের
কলকাতা : বাঙলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী লাভজনক দুটি কেন্দ্রীয়
সংস্থার উপর কোপ পড়তে চলেছে। একটি উঠে যাচ্ছে এবং অপরটি স্থানান্তরিত হচ্ছে।
অ্যান্ড্রু উইল অ্যান্ড কোম্পানির ইলেকট্রিকাল ডিভিশন উঠে যাচ্ছে এবং স্টিল অথরিটি
অব ইন্ডিয়া লিমিটেড বা সেইলের কাঁচামাল সরবরাহকারী বিভাগ-র মেটিরিয়াল ডিভিশন (RMD) কলকাতা শাখাটি
স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। স্বভাবতই কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
শতাধিক কর্মীদের। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে "বাঙালি ছাত্র-যুব সমাজ"।
সংগঠনের কেন্দ্রীয়
সচিব তপোময় বিশ্বাস বলেন, কেন্দ্রের হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী সরকারের বাঙলার সম্পদকে
লুঠ করার পরিকল্পনা বহুদিনের। সেইলের কাঁচামাল সরবরাহকারী বিভাগ আর.এম.ডি
অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করা হলে
এরাজ্যের শিল্পগুলির উপর
তার কু প্রভাব অবশ্যই পরবে, বিশেষ করে বার্নপুরের ইস্কো এবং দুর্গাপুরের ডি
এস পি। ফলস্বরূপ শিল্প গুলি ধুঁকে, অলাভজনক শিল্পে
পরিণত হবে । এ আসলে লাভজনক শিল্পকে অলাভজনক শিল্পে পরিণত
করে পুঁজিপতিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার কৌশল মাত্র। ৩২ বছর ধরে কলকাতায় চালু থাকা
সংস্থা সেইল বাজারের থেকে প্রায় পাঁচগুণ কম দামে সেইলের অধীনস্থ কোম্পানিগুলিকে
কাঁচামাল সরবরাহ করে। সেলের অধীনস্থ কোম্পানি এবং খনিগুলি সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে।
আর এম ডি কলকাতা থেকে তুলে দেওয়া হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী একটি চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই
নয়।
অপর দিকে দেখুন অ্যান্ড্রু ইউল কোম্পানির
ইলেকট্রিকাল ডিভিশনের অবশ্যই লাভজনক। বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে নানান ধরনের
সুইচ তৈরির ভালোরকমই বরাত পাচ্ছে তারা। এই রকম একটি লাভ জনক সংস্থাতকে উঠিয়ে
দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা এবং নিন্দা করি। মোদী
সরকারকে "জনগণের সরকার"-এর পরিবর্তে পুঁজিপতির সরকার বলা উচিত।
তপোময় বাবু আরও জানান, গত ১৩ জুন ২০২১
জলপাইগুড়িতে বিজেপির এক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গকে ভাগ করে পৃথক কেন্দ্র শাসিত
অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিজেপির নীতিই বিভেদ নীতি। হিন্দু-মুসলিম বিভেদ, বাঙলা ভাগের বিভেদ প্রভৃতি নীতিতে বিজেপি চলে।
নির্বাচনের প্রাককালে বর্তমান রাজ্য সরকারের তৎকালীন বিভিন্ন মন্ত্রী-বিধায়ক ভাঙিয়ে, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা নেতাদের দেইলি প্যাসেঞ্জারি, কোটি কোটি টাকা
খরচ করে মোদীজীর নির্বাচনী জন সভা করে,
২০০ সংখ্যা পারের
গ্যারান্টির পরেও বিধানসভায় ৭৭ এবং তারপরে সর্বভারতীয়
নেতা সহ বিভিন্ন ভাঙানো বিধায়কদের পুরোনো দলে প্রত্যাবর্তন সব কিছু মিলিয়ে বিজেপির
জ্বালা তথা প্রতিশোধ মেটাতে এবার প্রকাশ্যে বাঙলা ভাগের ডাক এবং লাভজনক
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বিক্রি করে দেওয়ার কুচক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে তারা। অতীতে
ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে ব্রিটিশরা যেমন বাঙালিদের
মধ্যে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ এবং সুবা বাঙলাকে কেটে টুকরো টুকরো করে অর্থকরী খনিজ
সম্পদপূর্ণ অঞ্চল অবাঙালি অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে বাঙালিদের ঐক্য, চেতনা, বিপ্লব মুখরতাকে নষ্ট
করেছে, বিজেপি ঠিক সেই
একই বিভেদ নীতিতে চলছে। বিজেপি বুঝেছে ২০২৪কে লোকসভা নির্বাচন, ইতিমধ্যে
"বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই,
বাঙালি প্রধানমন্ত্রী
চাই" রব উঠেছে, প্রসঙ্গত বলা ভাল যার উদ্দেশ্যে 'বাঙালি
প্রধানমন্ত্রী' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তিনি কতখানি বাঙালির
কথা ভেবেছেন সেখানে প্রশ্ন এসে যায়, হ্যাঁ বাঙালি ভাবাবেগ দিয়ে ভোট ব্যাংক ভর্তি করেছেন। যাই হোক এই সব "বাঙালি" "বাঙালি"
আওয়াজে ভীত সন্ত্রস্ত বিজেপি ঠিক ব্রিটিশের ন্যায় বাঙলাকে পুনরায় ভাগের চক্রান্ত
এবং বাঙলার শিল্প ব্যবস্থার কোমর ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। কোভিড
অতিমারি পরিস্থিতি এবং গোদের উপর বিষফোঁড়ার ন্যায় যশ ঘূর্ণিঝড়ে
দুর্ভোগা, সম্বলহীন মানুষদের পাশে না দাঁড়িয়ে বিজেপি এখন
প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে, আমরা এই প্রতিহিংসা বাঙলার মাটিতে হতে দেব না।
পরিষ্কারভাবে আমরা বলে দিচ্ছি, কোন অবস্থাতেই আমরা এই বাঙলা ভাগ মানবো না
মানবো না। আপমর বাঙালিদের কাছে "বাঙালি ছাত্র-যুব সমাজ" আহ্বান রাখছে-
বাঙলার অখন্ডতা বজায় রাখতে এবং বাঙলার শিল্পকে বাঁচাতে সেইলকে স্থানান্তরিত করা
এবং উত্তরবঙ্গকে বাঙলা থেকে পৃথক করার কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলমত, ধর্মমত, বর্ণমত নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি গর্জে উঠুন।
বিজেপি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিচ্ছে- সেইলের স্থানান্তর এবং
উত্তরবঙ্গকে পৃথক করার চক্রান্ত অবিলম্বে পরিত্যাগ না করলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে
নামতে বাধ্য হবো।
কোন মন্তব্য নেই