করোনা আক্রান্ত মরদেহ জ্বালাতে লাখ লাখ গাছ কাটা হয়েছে
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : দুবছর হতে চলল বিশ্বের সঙ্গে দেশকে করোনা সংক্রমণ গ্রাস করেছে। দেশে দু-কোটির বেশি আক্রান্ত হয়েছে, তিন লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। মরদেহ সমাধিস্থ করার জমির অভাব ঘটেছে। জ্বালাবার কাঠ নেই। আড়াই হাজার কিলোমিটার পবিত্র গঙ্গার বুকে হাজার হাজার মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়েছে। কলিফরম জীবাণুতে ভরা পবিত্র গঙ্গা আগেই দূষিত হয়ে গেছে। আজ মরদেহ পচে গলে গঙ্গার পবিত্র জলকে বিষাক্ত করে তুলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার আগেই গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র সহ দেশের ৪৫টি নদীর জল ব্যবহারের অনুপযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। নীতি আয়োগ ঘোষণা করেছে আগামী ২০৩০ সালে দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষ তীব্র পানীয় জলের সংকটে ভুগবে। ভূগর্ভস্থ জলের আকাল দেখা দেবে। বিশ্বে এত বড় সাগর কিন্তু মাত্র ৩ শতাংশ জল ব্যবহারের উপুযুক্ত। বাকি জল লবণাক্ত, এই তিন শতাংশ জল ব্যবহার করছে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ আর ভারতের ১৪০ কোটি মানুষ। জল জীবনের ওপর নাম। সেই জল না থাকলে গাছ-পালা, পশু-পাখি, নদ-নদী, পাহাড় -পর্বত কিছুই বাঁচবে না। আর মানুষ তাদের বেঁচে থাকার প্রশ্নই নেই। গাছ ছায়া দেয়, যথেষ্ট অক্সিজেন দেয়, বিনা জলে গাছ বাঁচে না। কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের কোটি কোটি গাছ কাটা পড়েছে। কোটি কোটি পি পি কিট, হ্যান্ড গ্লাভস ডাস্ট বিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সবই প্লাস্টিকের। যা কোনোদিন বিনষ্ট হয় না। ৪০০ বছর অক্ষত থাকে মানুষের শরীরের ক্ষতি করে। জীবাণু যুক্ত মাস্ক ফেলে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে শব দাহর জন্যে ২০০টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে দিল্লি প্রশাসন। দিল্লিতে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন সংসদ ভবন সহ সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প গড়তে ৬০টির মত প্রাচীন গাছ কাটা পড়েছে বলে সংবাদ সূত্রে জানা গেছে। শুধু দিল্লীতেই গত এক মাসে ১০ হাজার কুইন্টাল কাঠের ব্যবহার হয়েছে। প্রতিটি চিতা জ্বালানোর জন্যে ৩/৪ কুইন্টাল কাঠের দরকার হয়। দেশে তিন লাখের বেশি মানুষ শুধু করোনাতে মারা গেছে। অন্য রোগে মৃত্যু তো আছেই। কত গাছ কাটা পড়েছে তার হিসাব কি আছে সরকারের কাছে। এক সংবাদসূত্র মতে, ভারতে প্রতিদিন করোনা টেস্ট করতে ১৪.৫ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। আরও ১০১ টন বর্জ্য কোভিড চিকিৎসা সংক্রান্ত। প্লাস্টিক মাটিকে বিষাক্ত করে। সরকারের প্লাস্টিক মুক্ত স্লোগান আজ শুধু গাল ভরা স্লোগান হয়েই থেকে গেল। আজ বিশ্ব জুড়ে পরিবেশ দিবস পালন করা হচ্ছে। গাল ভরা বৃক্ষরোপণ কর্মসুচি হবে। মন্ত্রীর চোখ থাকবে ক্যামেরার দিকে। কাগজে প্রথম পাতায় খবর চাই। অনুষ্ঠান শেষ গাছ ও শেষ একটু জল দেওয়ার কেউ থাকে না। আবার আগামী বছর। পরিবেশ প্রকৃতি এই ভাবেই ধ্বংস হতে থাকবে। সদ্য চলে গেলেন গাছ বন্ধু সুন্দর লাল বহুগুনা, তিনি দেশের রাষ্ট্রপতিকে এক চিঠি লিখে প্রশ্ন করেছিলেন দেশের গাছ-গাছালিরা কি দেশের নাগরিক নয়। নাগরিক হিসাবে রাজ নৈতিক দলের ইস্তাহারে ঠাঁই পেতে পারে না? সুবিচার পেতে পারে না?
কোন মন্তব্য নেই