
সংবাদদাতা,
তিনসুকিয়া : ফোরামের সভাপতি আইনজীবী বিনোদ লাল চক্রবর্তী ও সম্পাদক আইনজীবী সুব্রত
কুমার পাল এক বিবৃতিতর
মাধ্যমের জানিয়েছেন, আসামের আপামর জনগণ, বিশেষতঃ ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায়
উপযুক্ত প্রামাণ্য নথিপত্র দাখিল করে এবং বারবার দূরদূরান্তে ভেরিফিকেশনে উপস্থিত
থেকে অনেক শ্রম, অর্থ ব্যয় করে এবং হেনস্থার শিকার হয়ে নিজেদের
নাম চূড়ান্ত এনআরসিতে অর্ন্তভুক্ত করতে কতৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা করেছেন। এনার্সির
জন্য সরকারের ও প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় ছাড়াও শিক্ষক সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের
কর্মকর্তাদের শ্রমদিবস অনুমানিক ছয় বছর ধরে ব্যয় হচ্ছে। এতে স্কুলে শিক্ষা প্রদান সহ রাজ্যের উন্নয়নের কাজ ব্যহত
হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের আদেশে চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয় ২০১৯-এর ৩১ আগষ্ট।
সেই চূড়ান্ত এনআরসি থেকে ১৯ লক্ষাধিক মানুষ বাদ পড়েছেন যার প্রায় সসকলেই ভারতীয় নাগরিক। প্রক্রিয়াগত নানা কারণে, আমলাতান্ত্রিক গাফিলতির ফলে এবং কতৃপক্ষের পক্ষপাতমূলক নিয়ম ও
মানসিকতার জন্য অনেক স্থায়ী বাসিন্দা, প্রকৃত ভোটার
তথা প্রকৃত নাগরিক এনার্সির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। প্রকাশিত এনআরসিতে বিদেশিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমতাবস্থায়
কুড়ি মাস পর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ও তত্বাবধানে চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের পর সেই গোটা প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতে পারেন
না বর্তমান রাজ্যসমন্বয়ক, হিতেশ দেব শর্মা, এটা তার এক্তিয়ারের বাইরে। আর জি আই, বা কেন্দ্রীয় সরকার, এমনকি রাজ্য
সরকারের বিনা অনুমতিতে সুপ্রিম কোর্টে এমন আবেদন তিনি করতেই পারেন না। উল্লেখ্য যে
আগের রাজ্যসমন্বয়ক প্রতীক হাজেলাকে নোডেল অপিসার হিসাবে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান
করেছিল সুপ্রিম কোর্ট, চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়ার পর তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট ও আর আগের মত ডে-টু-ডে তত্বাবধান করছে না। অতি সামান্য কিছু উদাহরণ,
কিছু অনুমান ভিত্তিক সন্দেহ, কিছু প্রক্রিয়াগত ত্রুটির (তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিগত ধারনায়) উল্লেখ করে
হীতেশ যে আবেদন করেছেন মহামান্য আদালত সেই আবেদন খারিজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মনে রাখা উচিত, আসাম রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার ড্রাফট এনআরসি পুনরায় ভেরিফিকেশন করার দাবি জানিয়েছিলেন, সেই দাবি খারিজ হয়ার পর চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়েছে।
হীতেশ দেবশর্মাও কিন্তু এমন কোন
প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, যার মাধ্যমে তিনি নির্ভুল এনআরসি করতে চান। তাঁর নির্ভুল এনআরসির অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে মূলত আরও বেশি লোককে বাদ
দেওয়া। সারাদেশের জন্য প্রযোজ্য সরল প্রক্রিয়ার বিপরীতে আসামের জন্য কঠিন তথা বৈষম্যমূলক
প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়েছে এনআরসি প্রস্তুত করণের কাজ। যে ফেমিলি ট্রি ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে অনেক
আবেদনকারীর নাম বাদ পড়েছে, সেই ফেমিলি ট্রির বিষয়টি এনআরসি রুলেই নেই।
যারা ড্রাফট এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন কিন্তু অন্তর্ভুক্তির দাবি পত্র জমা দেননি তাদেরকেও
ড্রাফট থেকে নাম বাদ পড়ার কারণ উল্লেখ করে, দাবিপত্র দাখিল না করার কারনে চূড়ান্ত এনআরসিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য পুনর্বিবেচনা করা যায়নি লিখে রিজেক্সন অর্ডার
দেওয়া উচিত যাতে তারাও বিদেশি আদালতে আপিলের সুযোগ পায়। এমনকি যারা ২০১৫ থেকে আসামে স্থায়ীভাবে থাকেন কিন্তু এনআরসিতে আবেদন করেননি বা করতে পারেননি, তাদেরকে আবেদনের এক সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করা দরকার। নাহলে এই এনআরসি অসম্পূর্ণ থেকেই যাবে।
১৯ লক্ষাধিক নাম বাদপড়াদের দ্রুত নাম
অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা না করে, তাদের ঝুলিয়ে
রাখা হয়েছে, তারা আধার বানাতে পারছেন না। পাসপোর্টের জন্য বা অন্য কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশনে হেনস্থা ভোগ করতে
হচ্ছে। ডিভোটারদের ও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত তাদের বিরুদ্ধে মামলা
নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
ডি-ভোটার, এনআরসি ইত্যাদির মাধ্যমে বারবার ভাষিক সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ
অধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা হচ্ছে। তদুপরি, আসামের ভাষিক
সংখ্যালঘুদের বিভিন্নভাবে যেমন স্কুলের পাঠ্যবিষয় সূচিতে পরিবর্তন এনে ভাষিক
অধিকারের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। ফোরাম ফর সিভিল রাইটস, করিমগঞ্জ এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছে।
ফোরামের সভাপতি আইনজীবী বিনোদ লাল
চক্রবর্তী ও সম্পাদক আইনজীবী সুব্রত কুমার পাল এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে
ফোরামের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরেন।
কোন মন্তব্য নেই