Header Ads

প্রমাণ হল বাংলা দখলের যোগ্যতা বিজেপি’র নেই !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

আমি বার বার বলেছি--আমি জ্যোতিষী বা দৈবজ্ঞ নই। যুক্তি-তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষিত পর্যবেক্ষণ করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছুবার চেষ্টা করি। বিগত বছরগুলিতে এইভাবেই আমি যে সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়েছি তার সঙ্গে বাস্তব ফলাফলের খুবই সামান্য পার্থক্য থাকতো বা ১০০%-ই সত্যি হতো। এবারে হয় নি। অন্ততঃ এই সাড়ে ১২-টা পর্যন্ত যে ট্রেণ্ড দেখা যাচ্ছে তা যদি কমবেশি বজায় থাকে তাহলে বিজেপি’র বাংলা দখলের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। আমার পূর্বাভাস মেলে নি বলে আমি একেবারেই হতাশ নই। খুবই বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে কাটছিল আমার দিনগুলো। তৃণমূল ফের ক্ষমতাসীন হচ্ছে জেনেও আমি এখনো বলছি--আমি এবারে তৃণমূলকে ক্ষমতায় ফিরতে দেখতে চাই নি। কেন--তা বার বার বিশদে ব্যাখ্যা করেছি। এবারেও ক্ষমতায় বসে যদি তৃণমূল একই স্টাইলে শাসন করতে চায় তাহলে আমাদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হতে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। এ বিষয়ে পরে যা বলার বলবো।

কিন্তু তৃণমূলকে না চাইলেও বিজেপিকে আমি প্রথম থেকেই চাই নি। কারণ, বাংলার রাজনৈতিক সংষ্কৃতির সঙ্গে বিজেপি’র রাজনৈতিক সংষ্কৃতির বিশেষ কোনো মিল বা সম্পর্ক নেই। বিজেপি’র বাংলা দখলের স্বপ্ন কেন মুখ থুবড়ে পড়লো তা একটু তলিয়ে ভাবলেই বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ১৮-টি আসন পেলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় বাংলার প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে অমার্জনীয় অসভ্যতার নজির তৈরি করেছিল বিজেপি। কম করেও দু’জন ক্যাবিনেট এবং জনা চারেক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে বাংলার এমপিদের নির্বাচন করা জরুরি ছিল। বিজেপি করে নি। বাংলার মানুষ এটা ভালভাবে নেয় নি। বিজেপি সবচেয়ে খারাপ কাজ করেছে মুকুলের সঙ্গে। মুকুলকে যথেচ্ছ ব্যবহার করলেও উপযুক্ত মর্যাদা দেয় নি। গুরুত্বপূর্ণ পদ বা কেন্দ্রেীয় মন্ত্রীত্ব মুকুলকে দেওয়া হয় নি। শুধু তাই নয়--একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুকুলকে ফ্রিহ্যাণ্ড দেওয়ার বদলে তাকে নিষ্ক্রিয় করে রেখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে আসা হল অমিত মালব্যকে। কে এই অমিত মালব্য? বঙ্গ রাজনীতি ও সংষ্কৃতির সঙ্গে তার সম্পর্ক কতটুকু? রাজ্যরাজনীতিতে মুকুলের চেয়েও তার প্রভাব প্রতিপত্তি বেশি এই ধারণা তৈরি হল কি করে? মুকুল-শোভন-শুভেন্দু-সব্যসাচী-রাজীব একত্রিত হয়ে বাংলায় বিজেপিকে যতটা প্রাসঙ্গিক করে তোলার ক্ষমতা রাখেন সেই ক্ষমতা অমিত মালব্য রাখেন এ ধরণের বালখিল্য ধারণার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
চোখ ধাঁধানো বিপুল বিলাসবৈভবপূর্ণ প্রচার অভিযানে বিজেপি স্রোতের মতো গোবলয়ের নেতাদের এনে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তই করেছেন শুধু--কাজের কাজ কিছুই হয় নি। ঢাল-তলোয়ারহীন ১৮ জন সাংসদ কোনো দায়িত্ব না পেয়ে শুধু রাজ্যে মাঝে মাঝে পায়চারি করে বেড়িয়েছেন মাত্র--ফলে নিজেদের এলাকাগুলোও ধরে রাখতে পারেন নি--গোটা রাজ্যে প্রভাব বিস্তার তো দূর অস্ত ! ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতিতে বাংলার মানুষের আস্থা নেই--এটা বিজেপি নেতারা মানতে চান নি। তাই বার বার যোগী আদিত্যনাথকে রাজ্যে এনে নিজেদেরই পায়ে কুড়ুল মেরেছেন। বাংলার যুব সমাজ যোগীকে একেবারেই পছন্দ করে না। তাকে সহ্যই করতে পারে না--এটা বিজেপি নেতারা বুঝতেই পারেন নি। যোগী-সন্ত-বাবাজি-মহারাজদের ব্যাপারে বাংলার জনমানসে বিরক্তি এবং হতাশা তৈরি করে। বিজেপি নেতারা যদি গোটা রাজ্যে মুকুল-শোভন-সব্যসাচী-শুভেন্দু-রাজীবদের চষে বেড়াতে দিতেন তাহলে এই তীব্র নৈরাশ্যজনক ছবিটা দেখতে হতো না। বিজেপি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে মারাত্মক ভুল খেলা খেলেছে--তার মাশুল দিতে হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কিছু নিশ্চিত আসনে। কোনোরকম রহস্য না রেখে যদি প্রথমেই রাজ্যের মুখ হিসেবে মুকুল বা শুভেন্দুকে তুলে ধরে যুদ্ধে নামার কথা বিজেপি ভাবতো তাহলে এভাবে মুখ পোড়াতে হত না।
যাইহোক, আজ বেলা তিনটে সাড়ে তিনটে নাগাদ ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। যদিও এটা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে তৃণমূলই ফের ক্ষমতায় ফিরছে। বিজেপি’র গোবলীয় শাসনে যাচ্ছে না বাংলা--আমার কাছে স্বস্তির বলতে এটাই যথেষ্ট। কারণ, বিকল্প হিসেবে আমি বিজেপিকে মেনে নেওয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না--তৃণমূলকে না চাইলেও। এই মুহূর্তে বিশেষ কিছু বলার নেই। পরে অনেক কথাই বলবো--বলতে হবে !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.