Header Ads

বাংলা বাঙালিত্ব হারানোর আতঙ্কেই বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করল !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

রাজনৈতিক পর্যক্ষেণ বা বিশ্লেষণ আমার কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। বহুদিন থেকেই করে আসছি। তা সে ভোটের সময় হোক বা না হোক। মরশুমি পাখির মতো কোটর থেকে হঠাৎ হঠাৎ চঞ্চু বের করে কিচিরমিচির করি না। প্রেডিকশন বা ভবিষ্যদ্বাণী আর পূর্বাভাস যে সমার্থক নয় এটা আমি পরিষ্কার বুঝলেও অনেকেই যে তা বোঝেন না সেটা এবারে হাড়ে হাড়ে মালুম হচ্ছে। যুক্তিতর্কের ওপর দাঁড়িয়ে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটা পূর্বাভাস বেরিয়ে আসাটা অসম্ভব কিছু যেমন নয় তেমনই পূর্বাভাস কোনো দৈববাণীও নয়। কখনো কোনো দিন পূর্বাভাস মিলবে না--এমনটা কোনো মহাজ্ঞানী মহাজনও বলে যান নি। আমার পূর্বাভাস মেলে নি--তার মানে সেটা আমার ক্রিমিন্যাল অফেন্স? একবারও ভুল হবে না--এমন কোনো শর্তাধীনে রাজনৈতিক ভাষ্যকার বা বিশ্লেষকরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে থাকেন বলে তো আমি কখনও শুনি নি। অন্যের কথা আমি জানি না--কিন্তু আমি তো কারুর বেতনভূক কর্মচারী বা উচ্ছিষ্টভোগী তাঁবেদার নই যে আমাকে তার মনঃতুষ্টির কথা মাথায় রেখেই যা কিছু বলার বলতে হবে ! আমার পছন্দের বিষয় নিয়ে আমি আলোচনা করি--একটা মতামত প্রকাশ করি--তা কারুর পছন্দ হতে পারে না-ও পারে। যার পছন্দ হবে না--সে পড়বে না--আমি কারুর গলায় গামছা দিয়ে টেনে পড়াতে যাই না। আমার যুক্তিতর্ক অনেকেরই মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায় আমি জানি। গভীরে ঢুকে বোঝার চেষ্টা না করেই শুধুমাত্র তার পছন্দের দলের স্বার্থে লেখাটা যাচ্ছে কিনা সেটাই আগে ভাবে ! আমার পূর্বাভাস মেলে নি--এটা এখন আমার বিরুদ্ধে একটা বড় ইস্যু আমাকে কাছাখোলা আক্রমণের জন্যে। কেউ কেউ শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে আক্রমণ শানাচ্ছেন--যার যেমন রুচিবোধ সে তেমন করতেই পারে। কিন্তু নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা অন্যের শিরঃপীড়ার কারণ কেন হবে তা অনেকের মতো আমারও মাথায় ঢোকে না। বহু খ্যাত পণ্ডিতদেরও প্রেডিকশন কতবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে তার ঠিক নেই--মানুষ মাত্রেই তা হতে পারে--কিন্তু আমার মনের মতো না হলেই আমি দাঁত-নখ বের করে ঝাঁপিয়ে পড়বো ?

মমতা যখন কঠিন দিনগুলোতে রক্ত-ঘাম ঝরাচ্ছেন তখন আমি আমার এই কলম নিয়েই তাঁর পাশে ছিলাম। তার জন্যে চড়া মাশুল গুণতে হয়েছে আমাকে। তার ক্ষতিপূরণ দাবি করে আমি মমতার সামনে নতজানু হওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবি নি। তখন আমার পর্যবেক্ষণ যুক্তিতর্ক বিচারবোধ তাঁর পাশে আমাকে দাঁড়াতে উৎসাহিত করেছিল। দৈনিক স্টেটসম্যান কাগজের সাংবাদিক হিসেবে প্রতিদিন প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় আমার লেখা যারা পড়েছেন তারা জানেন আমি কোনো প্ররোচনার বশবর্তী হয়ে বা রূপোর চেনে বাঁধা কুকুরের দায়বদ্ধতায় কিছু লিখি নি। অসংখ্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে একের পর এক। প্রচুর হুমকি এবং বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে আমাকে--সে সব ইতিহাস আজ যারা দাঁত-নখ ব্যবহার করছে তারা জানে না। নতুন করে কিছু জানাতেও চাই না। কিন্তু তৃণমূল দল বা সরকার আমার প্রতি ন্যূনতম সুবিচার করে নি। আমি কিছু প্রত্যাশাও করি নি। ধীরে ধীরে তাদের আচার আচারণে আমি হতাশ হয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত মমতা-বিরুদ্ধতার রাজনীতির শরিক হই নি। সেটা আমার স্বভাব নয়।
রাজনীতিটা আমার পছন্দের বিষয়। এ বিষয়টা নিয়ে আমি নানাভাবে চর্চা করি ভাবি বিশ্লেষণ করি। ভোটের সময়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ভিত্তিক একটা পূর্বাভাস (একান্তভাবেই নিজস্ব ভাবনা প্রসূত) প্রকাশ করি। ৯৮% থেকে ১০০% মিলেও গেছে বার বার। এবারে মেলে নি--রাজ্যের মানুষ তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে নিতে পারে নি। বাঙালিয়ানা বা বাঙালিত্ব হারানোর একটা আতঙ্ক কাজ করেছে শেষপর্যন্ত। কোনো যুক্তিতর্ক ভালমন্দ বোধ কাজ করে নি। বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তাই মমতা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না বলেই বাম-কংগ্রেস সমর্থকরাও তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দিয়েছে। ফলে রাজ্যরাজনীতির ইতিহাসে বাম-কংগ্রেসশূন্য বিধানসভা তৈরির অসাধারণ নজির তৈরি হয়ে গেল আজ ! বিজেপি’র গাদাগুচ্ছের গোবলীয় নেতাদের দাপাদাপি বাংলার মানুষ পছন্দ করে নি। রঙ-বেরঙের প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেওয়া সত্ত্বেও বিজেপিকে ভরসা করতে পারে নি বাংলার মানুষ। দিলীপ ঘোষের ‘রগড়ে দেব’ এবং ‘উনি তো বারমুডা পরতে পারেন’--এই জাতীয় কথার পাশাপাশি যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের দাপাদাপিও মানুষ পছন্দ করে নি। যোগীর বিন্দুমাত্র গ্রহণযোগ্যতা এ রাজ্যে নেই--এটা বিজেপি’র নেতারা বুঝতে চান নি। মহিলা মহলে উত্তরপ্রদেশের নানান ঘটনার এক ভীতিপ্রদ প্রতিক্রিয়া এই ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে। সিংহভাগ মহিলা বিজেপিকে ভোট দেন নি। আরও বহু কারণ রয়েছে বিজেপি’র এই লজ্জাজনক পরাজয়ের পিছনে। পরে আলোচনার ইচ্ছে রইল।
আমাকে যারা আক্রমণ করছেন করুন--শুধু অনুরোধ করবো নিজেদের রুচিবোধ ও শালীনতাবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে করবেন না--এতে আমার কোনো ক্ষতি হবে না--আমার কনিফিডেন্স লেভেলও তলিয়ে যাবে না। শুধু মনে রাখতে বলবো আমি কারুর এঁটোকাঁটার লোভে বা প্ররোচনায় কিছু লিখি না। একজন নাগরিক হিসেবে প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করি ফেসবুকের পাতায়। আশা করি আমার এ অধিকার আছে বলে আপনারও মানবেন !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.