আরোগ্য নিকেতন ও পলাতক আবার দেখলাম !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
নোবেলজয়ী উপন্যাস কম কিছু পড়ি নি--মাঝে মাঝে মুগ্ধ ও চমৎকৃতও যে হই নি তা নয়।
আঁতেলেকচুয়াল নই--তাই বিশ্ব সাহিত্য নিয়ে দাঁতখিঁচুনিমার্কা কেলোয়াতি লেখাপত্র
আমার কলমে আসে না--কিন্তু বিশ্বসাহিত্য যতটুকু বুঝলে নিজেকে যথেষ্ট পরিতৃপ্ত বোধ
করা যায় ততটুকু বুঝতে আমার অসুবিধে হয় নি। তাই বেশ কিছু নোবেলজয়ী উপন্যাসের সঙ্গে
বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, আশাপূর্ণা দেবী প্রমুখদের লেখার তুলনা করে ক্ষুব্ধ ও হতাশও হয়েছি। বাংলা
উপন্যাসের মূল ভাব দর্শন এবং আন্তর্জাতিকতা উপস্থাপনের উপযুক্ত ইংরেজি তর্জমা করার মতো অনুবাদক আমাদের
দেশে নেই বললেই চলে। আক্ষরিক অনুবাদ বিশ্বসাহিত্যে প্রাণপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়ে উঠতে পারে না বলেই
তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ কোনো কালেই নোবেলের বিবেচনায় আসবে না। নোবেলের
বিবেচনায় এরকম আরও বেশ কিছু ভারতীয় রচনা শুধুমাত্র উপযুক্ত তর্জমার দুর্বলতার
কারণেই আসে নি বা আসবেও না। তৃতীয় বিশ্বের লেখাও নোবেলের বিবেচনায় আসে উপযুক্ত
তর্জমার কারণেই--আন্তর্জাতিকতা ছুঁয়ে যায় ঐ সব অনুবাদের যোগ্যতায়। আমরা পারি না। ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাস পড়ার অনেক পরে চলচ্চিত্রটি
আমি দেখেছিলাম। নির্বাক বিস্ময়ের সঙ্গে বিকাশ রায়ের অভিনয় দেখেছি। বিকাশ রায়ের
প্রতিভার মূল্যায়ন হয় নি এই পোড়া দেশে। আমেরিকা-ইটালি বা ফ্রান্সে জন্মালে বিকাশ
রায় অস্কারে সম্মানিত হতে পারতেন একাধিকবার। অসাধরণ একটি উপনাসের অসাধরণ চিত্রায়ন
খুব বেশি দেখা যায় না। যা দু’একটি দেখা যায়--‘আরোগ্য নিকেতন’ তাদেরই অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বহুদিন পরে
ছবিটা দেখে ফের মন ভরে গেল।
বহুদিন পরে আবার দেখলাম ‘পলাতক’ ছবিটি। মনোজ বসুর গল্প ‘আংটি চাটুজ্জের ভাই’-এর চিত্রনাট্য লিখে তরুণ মজুমদার এবং দিলীপ
মুখার্জ্জী (একত্রে যাত্রিক) বাংলায় প্রযোজক পান নি। ছবির নায়ক যক্ষাক্রান্ত হয়ে
মুখে রক্ত তুলে মারা যাবে এবং তার দেহ নৌকায় ভেসে যাবে অকূল দরিয়ায়--শুধু তাই
নয়--সন্ধ্যা রায়ের মতো নায়িকাও ছবি হয়ে দেওয়ালে ঝুলবেন--এমন ছবিতে টাকা ঢালার সাহস
কেউ দেখাতে পারেন নি। এইরকম একটি পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছিলেন মুম্বাইয়ের ডাকসাইটে
প্রযোজক ভি শান্তারাম। আশঙ্কা ছিল ছবিটি সুপার ফ্লপ হবে--কিন্তু সমস্ত হিসেব উল্টে
দিয়ে অনুপ কুমারের অভিনয় (আরও অনেক ডাকসাইটে অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলেন) আর হেমন্ত
মুখোপাধ্যায়ের কালজয়ী সুরসৃষ্টির জাদুতে ছবিটি সুপার হিট হয়ে যায়। ‘পলাতক’ ভীষণভাবেই মন ভারি করে দেওয়ার মতো
ছবি। এই ভারি সময়ে এ ছবি কেউ দেখতে চাইবেন বলেও মনে হয় না। কিন্তু আমি দেখলাম। কান
পেতে অসাধারণ সব গানগুলো আবার শুনলাম। জহর রায়, রুমা গুহঠাকুরতা, অনুভা গুপ্ত, অসিতবরণ, হরিধন মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় দেখলাম--মন একটু ভারি
হলেও খারাপ লাগে নি। আগে ছবিটি একাধিকবার দেখা ছিল--পরিণামও জানা ছিল তাই খুব বেশি
মন খারাপ হয় নি।
(লেখার সঙ্গের ছবিদুটি স্মার্ট টিভি থেকে আমি নিজেই তুলেছি)।
কোন মন্তব্য নেই