অসমে মিনি লকডাউন, বেলা ২ পর্যন্ত দোকানপাট-অফিস, সন্ধ্যা ৬ টা থেকে নাইট কারফিউ
অমল
গুপ্ত, গুয়াহাটি : অসমে ভয়ঙ্করভাবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে
চলেছে। প্রতিদিন ২৯/৩০ করে
মারা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায়
প্রায় ৫ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। শ্মশানে আর ঠাঁই নেই, মর্গে উপচে পড়ছে মরদেহ।
প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অসম সরকার কোভিড
নিয়ে নতুন এস ও পি জারি করেছে। আগামীকাল ভোর ৫ টা থেকে
লাগু হবে। সরকারি কার্যালয়, দোকান পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব বেলা ২ টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাত
৮ টার বদলে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে
ভোর ৫ টা পর্যন্ত নাইট কারফিউ
জারি করা হবে। গুয়াহাটিতে পরিস্থিতি প্রায় হাতের বাইরে চলে
যেতে বসেছে। জেলার যেসব
ওয়ার্ডে বা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ শতাংশ বা তার
বেশি এবং হাসপাতালের বেড ৬০ শতাংশ
ভরে গেছে সেই সব এলাকা কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করা হবে। সব
জেলার ডেপুটি কমিশনাররা এইসব
পরীক্ষা করে কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করবেন। আগামী ১১ মে থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা
হওয়ার কথা ছিল। সব স্থগিত রাখা হয়েছে। রেস্তোরা,
ধাবা থেকে হোম ডেলিভারি, দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে
সন্ধ্যা ৬ টা
পর্যন্ত। বেলা ২ টার পর
সব সভা-সমিতি করা নিষেধ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী
হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, সরকার এখনো টোটাল লকডাউন ঘোষণার কথা ভাবেনি। তবে
পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হলে তা দিতেই হবে। তিনি জানান গুয়াহাটি
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ৬ টি আই
সি ইউ বেড আছে। তিনি জানান,
সপ্তাহে এক-দেড় হাজার কোভিড রুগী হাসপাতালে ভর্ত্তি হচ্ছে। ডাক্তারের
অভাব। তাই চূড়ান্ত বর্ষের ৭৬০ জন
মেডিক্যাল স্টুডেন্টকে ডাক্তার হিসাবে কোভিড হাসপাতালগুলোতে
নিয়োগ করা হবে। বলেন, গুয়াহাটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ২৭০টি
অক্সিজেন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। আর দু-সপ্তাহ চলতে পারে এখনই
কোনো রকমে চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৮ থেকে ৪৫ বছর
পর্যন্ত বয়সের লোকদের ভ্যাকসিন
দেওয়া চলছে। এপর্যন্ত ২৬ লাখকে
দেওয়া হয়েছে। ৫ লক্ষ ডোজ মজুত আছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য সরকার ইতিমধ্যে ৫ কোটি টাকা
দিয়েছে। এ জি অফিসের ৩০ জন
করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ জন মারা
গেছেন। রাষ্ট্রীয় উদ্যান কাজিরঙা, মানস, ওরাং পবিতরা পর্যটকদের
জন্যে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের
বন্য জন্তুদের পর্যটকদের থেকে
করোনা সংক্রমিত হতে পারে। চিড়িয়াখানাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হায়দরাবাদের এক
চিড়িয়াখানাতে আর টি, পি সি আর পরীক্ষা করে ৮টি সিংহের দেহে করোনা
পজিটিভ ধরা পড়েছে। নির্বাচন শেষ হল। এই অবস্থায় অসমের ১২৬
জন নির্বাচিত বিধায়ক গুয়াহাটি এসে পৌঁছিয়েছে। এম এল এ হোস্টেল গম গম
করছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে শপথ গ্রহণ নিদিষ্ট
সময় হবে কিনা, নতুন
সদস্যদের শপথ গ্রহণ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী
পদে কে বসবেন তা অনিশ্চিত। বিজে পি সভাপতি রঞ্জিত দাস জানান, সংসদীয় কমিটির
বৈঠক আজ ও হয়নি। একজন
পর্যবেক্ষককে অসমে পাঠাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার
মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার সম্ভবোনা
বেশি। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল এক জন সৎ
ভাবমূর্তির বিজেপি নেতা, কোনো দুর্নীতি তাকে স্পর্শ করতে
পারেনি। তার বিরোধী কেউ নেই। কিন্তু অসমের জন
বিন্যাস, জাতিগত নানা সমস্যা বিশেষ করে আর্থিক সমস্যা
সমাধানে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত
নেওয়ার ক্ষমতা হিমন্তের আছে। করোনা প্রতিরোধে তার ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেই হবে। বরাক
উপত্যকার নব নির্বাচিত বিজেপি বিধায়ক কৌশিক রাই সহ প্রায়
সব বিজেপি বিধায়ক হিমন্তের
পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নতুন শরিক ইউ পি পি এল এবং অগপ-র অধিকাংশ
হিমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাইছেন। রাজ্যে জটিল কোভিড
পরিস্থিতিতে সব কিছু থমকে গেছে।
কোন মন্তব্য নেই