বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
নন্দীগ্রামের হাইভোল্টেজ ভোট সাঙ্গ হয়েছে। দুই হেভিওয়েটই দাবি করেছেন তিনিই জিতছেন। বৃহস্পতিবার ভোটপর্বে বারবার শুভেন্দু অধিকারী হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছেন, 'আমাদের ভোট ভোলা হচ্ছে। দুটোর মধ্যেই ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। মমতা হারছেন এবার।' পাল্টা মমতা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি জিতছেনই। ৯০ শতাংশ ভোটে জিতবেন তিনি।
এরই মধ্যে নন্দীগ্রামের যে ভোট শতাংশ সামনে এসেছে, তা দেখে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। এদিন নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, নন্দীগ্রামে মোট ভোট পড়েছে ৮৮.০১ শতাংশ। অর্থাৎ নন্দীগ্রামে যেখানে ভোটার ২ লক্ষ ৫৭ হাজার। সেখানে প্রদত্ত ভোট ২ লক্ষ ২৬ হাজার। এর মধ্যেই রয়েছে সংখ্যালঘু ভোট এবং হিন্দু ভোট। কমবেশি ১২ শতাংশ ভোট কম পড়ার অর্থ কমবেশি ৪৯ হাজার ভোট পড়ে নি। এই ৪৯ হাজারের মধ্যে কম বেশি ১৫ হাজারের সংখ্যালঘু ভোট পড়ে নি ধরে নেওয়া যায়--তার মানে এই কেন্দ্রের মোট ৬২ হাজার সংখ্যালঘু ভোটের ১৫ হাজার কমে গেলে থাকে ৪৭ হাজার ভোট। হিন্দু ভোটও কমেছে কমবেশি ৩৪ হাজারের মতো। প্রদত্ত ২ লক্ষ ২৬ হাজার ভোটের মধ্যে সংখ্যালঘু ৪৭ হাজার বাদ দিলে হিন্দু ভোট থাকে এক লক্ষ ৭৯ হাজার ভোট। ৪৭ হাজার সংখ্যালঘু ভোটের মধ্যে মিনাক্ষী যদি হাজার পাঁচেক ভোট পেয়ে যান তাহলে বাকি ৪২ হাজারের মধ্যে হাজার খানেক ভোট নিশ্চয়ই শুভেন্দুর দিকে যাওয়ার কথা। ৪৬ হাজার ভোট মমতার বাক্সে যেতেই পারে। এখন ১,৭৯,০০০ ভোটের মধ্যেই তিন প্রার্থীর কে কতটা পাবেন তাই নিয়েই চলছে চুলচেরা হিসেব। আমি দিন পনের-কুড়ি আগে বলেছিলাম শুভেন্দুকে কম করেও এক লক্ষ কুড়ি হাজার ভোট পেতে হবে। সেটা যদি শুভেন্দু তুলে নিতে পারেন তাহলে বাকি ৫৯ হাজার ভোটের মধ্যে মমতা যদি ৫০,০০০ ভোট পান তাহলে মিনাক্ষীর জন্যে থাকবে মোট ১৪,০০০ ভোট এবং মমতার সঙ্গে শুভেন্দুর ব্যবধান থাকবে ২৫ হাজার ভোটের মতো। ৫০ হাজারের বেশি ব্যবধান রাখতে হলে শুভেন্দুকে পেতে হবে এক লক্ষ ৪৫ হাজারের মতো ভোট--যা যথেষ্ট কঠিন বলেই মনে হতে পারে। আমি জানি--আমার এই অঙ্ক খুবই গোলমেলে ঠেকবে। তবু আমার ধারণা--জয়-পরাজয়ের ব্যবধান বিরাট কিছু হবে না--কারণ, তেমন বড়সড় সংখ্যাই এখানে নেই।

সে যাইহোক, নন্দীগ্রামের অনেক বুথে ভোট পড়েছে ৯০ শতাংশের উপরে। আবার একটি বুথে ভোট পড়েছে ৯৬ শতাংশ ! এই পরিসংখ্যানই ভাবাচ্ছে প্রার্থীদের--এর মধ্যে বিপুল সংখ্যায় ভোট পড়ায় অনেকটাই রিল্যাক্স মুডে দেখা যাচ্ছে শুভেন্দুকে। তাই বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন উঠছে--তবে কি এত কেন্দ্রীয় বাহিনী, এত ব্যবস্থা সত্ত্বেও হাইপ্রোফাইল কেন্দ্রে চুটিয়ে রিগিং হয়েছে। তা না হলে এত ভোটের রমরমা কী করে হয় ! প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরাও।
ভেটুরিয়া কোহিনুর স্কুলের বুথে ভোট পড়েছে ৯৬-০৬ শতাংশ। ওই বুথে মোট ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। তাঁদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮০৪ জন। আবার এমন অনেক বুথ রয়েছে যেখানে ৯৫ শতাংশের আশেপাশে রয়েছে প্রদত্ত ভোট। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা অবশ্য ফলাও করে বলছেন নন্দীগ্রামের হিন্দুপ্রধান এলাকার বুথগুলিতেই বেশি ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
শুভেন্দুও জোর দিয়েই বলছেন, আমি ২০০ শতাংশ নিশ্চিত নন্দীগ্রামে বিজেপিই জিতছে। এবং এমন কথাও বলছেন, আমি বড় কথা নয়, বিজেপি জিতছে এটাই বড় কথা। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারও জোর দিয়ে বলেছেন, নন্দীগ্রামে আমি ভালোভাবেই জিতব। এখন অন্য আসনগুলিও জিততে হবে। কম করেও ২০০ আসন তিনি চাইছেন--তার কারণ হিসেবে তিনি দাবি করছেন এতগুলো আসন না পেলে সরকার গড়া সম্ভব না-ও হতে পারে--অনেক গদ্দার চলে গেলেও বিজেপি টাকা দিয়ে আরও অনেক গদ্দার কিনে নিতে পারে ! দলে এখন গদ্দারদের রমরমা চলেছে--কাউকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না--অন্ততঃ নেত্রীর কথা থেকে সেটাই মালুম হচ্ছে !
কোন মন্তব্য নেই