Header Ads

হাতে পাঁজি রোববার নির্ভেজাল ফলাফল !!

গতকাল নির্বাচন শেষে বিভিন্ন চ্যানেলের একজিট পোল নিয়ে সন্ধ্যা থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছিল রাজ্যের রাজনৈতিক বাতাবরণ। তৃণমূল এবং বিজেপি’র জোরালো দাবি এখনও স্থির হয়ে রয়েছে ২০০’র বেশ খানিকটা বেশি আসন পাওয়া নিয়ে। রাজ্য এবং সর্বভারতীয় গোটা আষ্টেক চ্যানেল ছাড়াও গোটা কয়েক নিউজ-পোর্টালও আমি দেখলাম। অধিকাংশের মধ্যেই কমবেশি ‘বায়াসনেস’ প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। অর্কপ্রভ সরকার নামে এক সাংবাদিককে হয়তো অনেকেই চেনেন--ভদ্রলোক যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোকে ধরে ধরে বিশ্লেষণের চেষ্টা করে থাকেন। এখন তাঁকে কোনো প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলে পাওয়া যায় না--তিনি একটি নিউজ-পোর্টালে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করেন। গতকাল তাঁর একজিট পোল অনেকটাই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে আমার। যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে আরামবাগ টিভি’র একজিট পোল বিশ্লেষণও। আমি বলেছিলাম বিজেপি ১৫১ থেকে ১৫৮ হতে পারে (বড়জোর ১৬১)--আরামবাগ টিভি বলছে ১৫৯ থেকে বেশ খানিকটা বেশি পাবে বিজেপি। তাদের এই পূর্বাভাসের কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছে তার সঙ্গে আমার পর্যবেক্ষণের বেশ খানিকটা মিল রয়েছে।

একটা বিষয় আমার খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। চ্যানেলগুলোর মধ্যে একমাত্র এবিপি আনন্দ গতলোকসভার নিরিখে তৃণমূলের এগিয়ে থাকা ১৬৪ আসনকে কপি পেস্ট করলেও সেটাই সর্বোচ্চ ! অর্থাৎ ২০০’র অনেকটাই নিচে ! মুখ্যমন্ত্রী ২০০’র বেশি আসনের জোরালো দাবি করেছিলেন তাঁর জনসভাগুলিতে--তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন--২০০’র কম হলে তিনি সরকার গঠন করতে পারবেন না, কারণ--দলের মধ্যে থাকা গদ্দারদের অনেককেই বিজেপি কিনে নেবে--সরকার টিকবে না ! দল ভাঙিয়ে সরকার গঠন বা শক্তি বৃদ্ধির রাজনীতিতে বিজেপিও যে তৃণমূলের চেয়ে কম যায় না তা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে--মমতার আশঙ্কার তাই যথেষ্ট কারণ থাকছেই। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এবিপি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত কোনো চ্যানেল তাঁকে আশঙ্কা মুক্ত না করে আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে !
গত লোকসভা নির্বাচনের পর আকাশ ও নদী দিয়ে প্রচুর মেঘ ও জল গড়িয়ে গেছে। অসংখ্য নির্বাচনী ইস্যুও সামনে এসেছে--যার সিংহভাগই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো ধারালো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরস্পরকে আঁচড়াতে কামড়াতেই তারা ব্যস্ত থেকেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ বসে থাকে নি--তারা নিজস্ব বোধবুদ্ধিতে বিষয়গুলো নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে বিচার বিবেচনা করেছে। ভোটের অন্ততঃ ছ’মাস আগে থেকেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছিল তাদের কি করতে হবে বা করা উচিত তাই নিয়েই। ভোটের ঠিক মুখেই মঞ্চে মঞ্চে যখন সংসদীয় গণতন্ত্রের অত্যন্ত মূল্যবান বিষয়টিকে নিয়ে ‘খেলা হবে’ বলে নাচানাচি করা হচ্ছিল--কুৎসিত অসংসদীয় ভাষা ও ভঙ্গিতে একে অপরকে আক্রমণের জন্যেই প্রচার মঞ্চগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছিল তখন সাধারণ মানুষের বিরক্তি হতাশা এবং ক্রোধ সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছিল। পরিস্থিতিটা দাঁড়াল এই রকম--বিজেপিকে জেতানোর জন্যে নয় মানুষ তৈরি হচ্ছিল তৃণমূলকে হারানোর জন্যেই। চ্যানেলের পণ্ডিতরা কিন্তু এই বিষয়টিকে তেমন পাত্তা দেন নি--অন্ততঃ পাত্তা দিচ্ছেন এমনটা প্রকাশ করেন নি--পাশাপাশি তাঁরা রাজনৈতিক দল বা নেতা-নেত্রীদের ‘গড়’ বা ‘দুর্গ তত্ত্ব’ নিয়েও মাথা ঘামান নি। গত লোকসভা নির্বাচনের আগের নির্বাচনগুলিতে ছাপ্পা ভোটের ব্যাপকতাই যে তথাকথিত ‘গড়’ বা ‘দুর্গ’ তত্ত্বের মিথ তৈরি করেছিল সেটা ২০১৯-এর নির্বাচনে স্পষ্ট হলেও বিশ্লেষকদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে নি। ফলে ছাপ্পা ভোট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও রাজ্যের ভোট শতাংশ কমবেশি ৮০% হওয়াটা কোনবিচারেই ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে যে শুভসঙ্কেত নয়--এটা কিন্তু কেউই জোর দিয়ে বলেন নি। রাজনৈতিক দলের আলোচকদের কথা শোনার জন্যে আমি একফোঁটা সময়ও নষ্ট করি না। তাদের বায়াসনেস যে দলের উপকারের চেয়ে কতটা ক্ষতি করে সেই বোধটাই তাদের মধ্যে কাজ করে না। দলের ভাল করতে গিয়ে কি চ্যানেলে কি সামাজিক মাধ্যমে এইসব নেতাকর্মীসমর্থকরা যে কিভাবে দলের ব্যাণ্ড বাজিয়ে যায় সেটা বোঝার ক্ষমতা দলের ওপরমহলের মস্তিষ্কেও যে নেই সেটা আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারি।
আলোচকবাবুরা তাঁদের আলোচনায় ‘বহিরাগত’ ও ‘খেলা হবে’ তত্ত্বকে ততটা গুরুত্ব দেন নি--দিলে চ্যানেলগুলো তাদের সমীক্ষাকে এত হাস্যকর করে তুলতে পারত না। আসলে চ্যানেলের নিজস্ব পলিসিরি মধ্যেই এবারের নির্বাচনে ছাপ্পা-বহিরাগত-খেলা হবে’র ওপর জোর দেওয়ার ভাবনা ছিল না। সঞ্চালকরাও এসব প্রসঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। এমনিতেই তাঁরা সুস্থ ও ভাল আলোচনাকে আচমকাই থামিয়ে দিয়ে কমিক রিলিফের দিকে নিয়ে যান গুরুতর বিষয়গুলিকেও। ফলে--আমি আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের সঙ্গে এইসব পণ্ডিতদের পর্যবেক্ষণের মিল খুঁজে পাই না। এবারের নির্বাচনেও আমার পূর্বাভাস তাই অনেকটাই অন্যরকম এবং উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় নির্ভর বিশ্লেষণ ভিত্তিক। এইসব কারণগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া যেমন সম্ভব নয়--তেমনি এইসব কারণগুলোই ভোটের ফলাফলকে নিয়ন্ত্রিত করতে বাধ্য বলেই আমার বিশ্বাস। এখন দেখা যাক আগামীকাল প্রকৃত ছবিটা কি উঠে আসে !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.