Header Ads

প্রসঙ্গ একজিট পোল ও আমার পূর্বাভাস !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়


প্রথমেই জানিয়ে রাখি আমি আমার ২১ মার্চের পূর্বাভাস থেকে সরছি না--এখনও অনড় হয়েই থাকছি। আজ ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পরেই একজিট পোল প্রকাশের কথা ছিল--ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েও গেছে--যথারীতি মানুষ রীতিমতো বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন এক একটি চ্যানেলে এক একটি সমীক্ষক সংস্থার একজিট পোলের এক এক রকমের ফলাফল দেখে। প্রতিবারেই এমনটাই হয়ে থাকে। এবিপি (সি-ভোটার) যথারীতি খুবই সতর্কতার সঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে যে যেখানে দাঁড়িয়েছিল তাকে সেখানেই স্ট্যাচু বানিয়ে রেখেছে ! অন্যান্য চ্যানেলগুলো তাদের সীমাবদ্ধতা প্রকাশে কার্পণ্য করে নি--অর্থাৎ বিশেষ ঝুঁকি না নেওয়ার অবস্থানেই থেকে গেছে। অর্ণব গোস্বামীর শব্দদূষণে আক্রান্ত চ্যানেলটিও বিজেপিকে প্রায় ত্রিশঙ্কু (বেশি হলে ১৪৮) অবস্থায় লটকে রেখেছে। তারা সোচ্চারে 'হাড্ডাহাড্ডি'র হাড্ডি নিয়ে মত্ত ছিল আজ !

আমি প্রায় সাত-আটটি একজিট পোলের ফলাফল দেখলাম তার মধ্যে গোটা তিনেক চ্যানেল বিজেপিকে ভাল নম্বর দিয়েছে। কিন্তু কারুর পক্ষেই বলা সম্ভব হয় নি--তৃণমূল বা বিজেপি ২০০ অতিক্রম করে যেতে পারে এবং আশ্চর্য্যজনকভাবেই সকলেই বিজেপিকে তিন অঙ্কে তুলে দিতেও দ্বিধা করে নি ! কোনো চ্যানেলই প্রশান্ত কিশোরের দাবিকে (বিজেপি তিন সংখ্যায় পৌঁছুলে আইপ্যাকের ব্যবসা তুলে দেব) পাত্তা দেয় নি। একমাত্র সিএন-ক্যালকাটা চ্যানেলকেই দেখলাম আমার পূর্বাভাসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে--এত কাছাকাছি তারা কি করে এল জানি না ! আমি একজিট পোল নামক এক অদ্ভূতুরে ‘বিজ্ঞানে’ বিশ্বাস করি না। আমি সুস্পষ্ট কিছু কারণ খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই--এভাবেই ২০০৯ সাল থেকে আমি যে সিদ্ধান্তে পৌঁছুই প্রকৃত ফলাফলে প্রায় হুবহু সেটাই প্রতিফলিত হয়ে থাকে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও তা ১০০% প্রতিফলিত হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে যে সব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়েছে সেগুলো হল--ছাপ্পা ভোট ছাড়াই কমবেশি ৮০% পোলিং--যা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কোনোভাবেই স্বস্তির কারণ হতে পারে না। ঝুঁকিবিহীন ৫০%-এর ওপর ছাপ্পা পড়ল না অথচ কমবেশি ৮০% পোলিং হয়ে গেল--এটা মোটেও ভাল সঙ্কেত হতে পারে না। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই ছাপ্পার চেহারাটা বদলানোর মরিয়া চেষ্টা করা হচ্ছে এইভাবে--বিরোধীদের আটকে রাখলেই বিরোধী ভোট পড়বে না--ফলে হারার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। নতুন স্টাইলের এই ছাপ্পা খুব একটা যে কাজ করছে না সেটা বোঝা যাচ্ছে কমবেশি ৮০% পোলিং প্রবণতা দেখেই। জেনুইন ভোট যত পড়বে--‘গড়’ বা ‘দুর্গ’ ততই হস্তচ্যুত হতে থাকবে। এটা যে কতবড় সত্যি তা বোঝা যাবে এবারের ফলাফল প্রকাশ্যে এলেই। এটা যত স্পষ্ট হচ্ছে ততই বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে জেনুইন ভোটার তো বটেই--প্রার্থীদেরও যেভাবেই হোক আটকানো--আক্রমণ হানার প্রবণতাও মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে। এবারের ভোটে সরকারি হিসেবেই ইতিমধ্যে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে--৪৮ জন প্রার্থী আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে এটা বোঝাই যাচ্ছে যে--ছাপ্পা ভোট ছাড়াই কমবেশি ৮০% পোলিং অনেকেরই রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়--যা এবারের ভোটকে রীতিমতো প্রভাবিত করেছে।
২২ থেকে ৪২ বছর বয়সীদের তীব্র রোষও এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।
বিশেষ ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে এসেছে প্রশান্ত কিশোরের দল পরিচালনার একের পর এক কিম্ভূতিকামার সিদ্ধান্ত--চমক সৃষ্টিকারী কিছু স্টান্টবাজিও (দিদিকে বলো, দুয়ারে সরকার ইত্যাদি বেশকিছু চমক)। এতেই প্রশান্ত কিশোর ক্ষান্ত থাকেন নি--জেলায় জেলায় রাজনৈতিক বোধ ও মেধাহীন কিছু পাকা চ্যাংড়াকে পাঠিয়ে সমীক্ষার ছলে বিশিষ্ট নেতাদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিলেন--ভীতি প্রদর্শনও করেছেন--ফলে সংগঠনের কাঠামোগুলো ধীরে ধীরে রীতিমতো নড়বড়ে হয়ে উঠেছিল। দলের ভেতরে বিরক্তি হতাশা ক্ষোভ বিদ্রোহের আগুন জ্বলছিল--যা একুশের নির্বাচনের প্রাক্কালে বিস্ফোরণের আকারে ফেটে পড়তে দেরি হয় নি। এই আগুনের সলতে পাকিয়েছেন মুকুল রায় অপমান ও হেনস্থার শিকার হয়ে ২০১৭ সালে দল ছেড়ে বেরিয়ে এসে যেদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন--সেই দিন থেকেই। মুকুলের পরে দলের বহু ছোটবড় নেতাই হেনস্থা ও অপমানের শিকার হচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ সবেরই একটা মারাত্মক নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট তৃণমূলকে কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ সবই তো খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এইসব জ্বলন্ত বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে আমি আলটপকা কোনো সিদ্ধান্তে কখনো আসি না--এবারেও আসি নি। প্রসঙ্গতঃ আরও অনেক কিছুই বলা যায়--আজ বলছি না।
যথাসম্ভব একজিট পোলের ফলাফল দেখেই আমি আমার ২১ মার্চের পূর্বাভাসকেই এখনও গ্রহণযোগ্য মনে করছি। আগেই বলেছি আমি জ্যোতিষী নই--একজন সাধারণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাত্র। কিন্তু আমি বাস্তব কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কাঁটাছেঁড়া করেই উপসংহারে আসি। সেই কারণেই হয়তো আমার পূর্বাভাসের সঙ্গে অনেকেরই অনুমান মেলে না ! তাই আমি এখনও মনে করছি--বিজেপি ১৫১ থেকে ১৫৮-টি (খুববেশি হলে ১৬১) আসন, তৃণমূল ১১৩ থেকে ১১৫, সংযুক্ত মোর্চা ২০ থেকে ২২-টি আসন পেতে পারে !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.