
২১ মার্চ আমার পূর্বাভাস ছিল বিজেপি ১৫১ থেকে ১৫৮-টি আসন দখল করতে পারে। কিন্তু তারপর প্রথম তিন দফা নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করে এবং তা খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে আমার মনে হয়েছে সংখ্যাটা শেষপর্যন্ত ১৬১-তে পৌঁছে যেতে পারে। ২০১৬’র বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে আমি যতগুলো রাজনৈতিক বিশ্লেষণাত্মক লেখা পোস্ট করেছি তার মধ্যে টিএমসি’র পতন সম্ভাবনা ও তার কারণগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তৃণমূলের মহাপতনের সূচনা হয়েছিল ২০১৭’র নভেম্বরে মুকুল রায়ের দলত্যাগের মধ্য দিয়ে। এই মুকুল রায় কতটা কী করতে পারেন তা আমি বার বার বিশদে ব্যাখ্যা করেছি এবং যা যা বলেছি তা আজ পর্যন্ত অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূলের দুর্দশার সম্ভাবনা এবং তার কারণ ব্যাখ্যা করে যে পূর্বাভাস দিয়েছিলাম তা ১০০% সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত রামধাক্কা খাওয়ার পর তৃণমূল নেত্রী নিজের ওপর আস্থা রাখতে পারেন নি--তাঁর আত্মবিশ্বাসে বিস্ময়কর ফাটল ধরেছিল--তাই কয়েক’শো কোটি টাকার চুক্তিতে দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে এবং একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে এলেন ! ঠিক সেই মুহূর্তেই কিন্তু একটা নেগেটিভ বার্তা ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয় নি।
প্রশান্ত কিশোর তাঁর কর্পোরেট ভোট প্রকৌশল (ডিজিট্যাল প্রযুক্তি নির্ভর) মেধা নিয়ে রাজনৈতিক স্টান্টবাজিতে অত্যন্ত স্বল্পমেধার রাজনীতিকদের প্রাথমিকভাবে মুগ্ধ করে দিয়ে এমন একটা আবহ তৈরি করেন যাতে তাঁকেই দলের সুপ্রিমো বলে ভাবতে সকলে বাধ্য হয়। আমার এখনও বিশ্বাস, পশ্চিমবঙ্গে প্রশান্ত কিশোরকে আমদানি করার আগ্রহ বা সিদ্ধান্ত মমতার ছিল না। প্রশান্ত কিশোর বিশেষ কাউকে দ্রুত সুপ্রিমো করে তোলার দায়িত্ব নিয়েই রাজ্যে এসেছিলেন বলেই আমার মনে হয়েছিল এবং তা যুক্তিসহ ব্যাখ্যাও করেছি। আমি বার বার বলেছি টিএমসি’র পতনের অন্যতম প্রধান কারণ হতে চলেছেন প্রশান্ত কিশোর। আমি যা বলেছিলাম তা যে মিথ্যা বলি নি তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। ২-রা মে’র পর এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখবো।
টিএমসি হারতে চলেছে প্রধানতঃ তিনটি কারণে--এক, ছাপ্পা ভোটের ও বুথ দখলের সুযোগ না থাকা, দুই--২২ থেকে ৩২ এবং ৩২ থেকে ৪২-এর তীব্র রোষ, তিন--ভাতা ও শ্রীযুক্ত ডোল ভিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে কাঙাল কর্মহীন পঙ্গু করে তোলার নজিরবিহীন অর্থনৈতিক অপ-কাণ্ডকারখানা ! এসবের ভেতরেই রয়েছে সেই সমস্ত বিষয়গুলো যাদের মারাত্মক নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট থেকে দলকে রক্ষা করতে চূড়ান্তভাবেই ব্যর্থ হয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। সংগঠনের খোলনলচে বদলাতে গিয়ে তিনি দলের গোটা কাঠামোটাকেই এতটাই নড়বড়ে করে ফেলেছেন যে, বিজেপি’র মতো বিপুল শক্তিশালী একটি রেজিমেন্টেড (আরএসএস নিয়ন্ত্রিত) দলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার ক্ষমতা ততটাই হারিয়ে ফেললো টিএমসি যতটা হারালে ক্ষমতায় ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। দলের মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ বিদ্রোহ এতটাই মাথাচাড়া দিল যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকল না পিকে তো বটেই--স্বয়ং দলনেত্রীরও। ফলে নির্বাচনের প্রাক্ মুহূর্তে যে ভাবে দলে ধস নামলো তার প্রতিক্রিয়া হল সুদূরপ্রসারী।
সাত দফা নির্বাচনের পর যার ফলশ্রুতিতে বিজেপি ১৪৫-টির মতো আসনে এগিয়ে গেছে বলেই আমার ধারণা। আর ১৬-টি আসন পেলেই ১৬১ আসন বিজেপির দখলে চলে যাবে। ১৩-টি আসন পেলে ১৫৮-টি আসন তো হবেই ! আমি আগেই বলেছিলাম--দফা পিছু বিজেপি গড়ে কমবেশি ২০-টি আসন পেতে পারে। কোনো কোনো দফায় ২৫-টিও হতে পারে--এই হিসেবেই সাত দফার পর বিজেপি ১৪৫-টি আসনে এগিয়ে আছে বলে আমার বিশ্বাস।
আজ সাত দফার নির্বাচনে বিজেপি দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ এবং বর্ধমান পশ্চিমে ভাল ফল করবে। ২১ মার্চ আমি লিখেছিলাম--‘দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬-টি আসনের মধ্যে টিএমসি পেতে পারে ২-টি এবং বিজেপি পেতে পারে ৪-টি আসন। বাম মোর্চা লড়বে ঠিকই কিন্তু তাদের জোরদার লড়াইয়ের সুফলটুকু নিয়ে যাবে বিজেপি। এরকম ঘটনা সিংহভাগ আসনেই ঘটতে চলেছে। মালদার ১২-টি আসনের মধ্যে টিএমসি ২-টি, বাম-কংগ্রেস মোর্চা ৪-টি এবং বিজেপি ৬-টি আসন পেতে পারে।’ কিন্তু মালদার পরিস্থিতি সংযুক্ত মোর্চা তথা কংগ্রেসের পক্ষে খুব একটা আশাপ্রদ মনে হচ্ছে না। মালদহে কংগ্রেসের বিপক্ষে বাম শরিক ও বাম নির্দল প্রার্থী লড়াইতে থাকছে। ফলে কংগ্রেসের তথা সংযুক্ত মোর্চার দুটি আসন কমছে--বিজেপি’র বাড়ছে দুটি--অর্থাৎ মোট আসন বিজেপি’র হচ্ছে ৮। আজ মালদহের যে ছয়টি আসনে নির্বাচনে হল--হবিবপুর, হরিশ্চন্দ্রপুর, গাজোল, মালতীপুর, চাঁচল, রতুয়া--এর মধ্যে বিজেপি চারটি এবং কংগ্রেস একটি এবং তৃণমূল একটি পেতে পারে।
২১ মার্চ পশ্চিম বর্ধমান সম্পর্কে লিখেছিলাম--‘পশ্চিম বর্ধমানের ৯-টির মধ্যে টিএমসি ৩-টি এবং বিজেপি ৬-টি আসন পেতে পারে।’ কিন্তু বিজেপি ৭-টি আসন পেলেও মনে হয় অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এবারে মুর্শিদাবাদেও বিজেপি খাতা খুলতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছ। ওদিকে কলকাতার ভবানীপুর এবং রাসবিহারীও এবারে অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে বলেই মনে হচ্ছে আমার !!
কোন মন্তব্য নেই