১৯৫০ সালের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের অভিকেন্দ্র ছিল আজকের সেই শোনিতপুর
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : অসমে আজ যে ভূমিকম্প হল তার তুলনা কেবল ১৯৫০ সালের ভূমিকম্পের সঙ্গেই করা যেতে পারে। ১০৫০ সালে ১৫ আগস্ট সকাল ৭.৩৯ নাগাদ ৮.৬ রিখটার স্কেলে অসম তিব্বতে ভূমিকম্পে প্রাণ কেড়েছিল প্রায় ৪৮ হাজার মানুষের। আজ সকালে পরপর তিনবার ভূমিকম্পর প্রাবল্য ছিল ৬.৭ রিখটার স্কেল। অসম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। অসমে ২ জন মারা গেছে এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। এপর্যন্ত সব ঠিক আছে এই ভূমিকম্পের সঙ্গে ১৯৫০ সালের ভূমিকম্পর গতি প্রকৃতি চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অসম অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তবর্তী শোণিতপুর জেলা ১৯৫০ সালের ভয়ানক ভূমিকম্পের অভি কেন্দ্র ছিল। অসমে, অরুণাচল প্রদেশের কাছে চীন, ভারত, ম্যাক মোহন লাইন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। শোণিতপুর জেলার ঢেকিয়াজুলির কাছে হাগুরাবলি তিন খরিয়া চা বাগানের আশপাশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে।
মাটি ফুঁড়ে জল
বেরোচ্ছে। শুকনো মাঠ নদীতে পরিণত হয়েছে। গুয়াহাটি মহানগরের বেলতলা
এলাকায় এক বহুতল বিশিষ্ট ভবনে ফাটল ধরেছে। আবাসিকরা সব ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। নগাঁও শহরে এক বিশাল ভবন হেলে
গিয়ে পাশের ভবনে গিয়ে আটকে গেছে। ভেঙে ফেলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। পিচ রোড ফেটে চৌচির, পাহাড়ে ধস নেমেছে। মুখ্যমন্ত্রী
সর্বানন্দ সনোয়াল আজ শোণিতপুর জেলার অভিকেন্দ্র ঢেকিয়াজুলি অঞ্চল সফর করে
ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নেন। তিনি বলেন, ঐ অঞ্চল প্রবল ভূমিকম্পপ্রবন এলাকা।
সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। তিনি অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান। বিজ্ঞানীদের একাংশের অভিমত আজ
মাত্র ৩০ সেকেণ্ড সময় সীমার কম্পনে অসমের প্রভূত ক্ষতি হল। রিখটার স্কেলও ৬.৭ ছিল। যদি আর কয়েক সেকেন্ড বেশি হত, তবে
কি অবস্থা হত। ভূমিকম্প মানব সৃষ্ট বা প্রাকৃতিক কারণ থাকে। ভূগর্ভস্থ শিলা খণ্ড পাশাপাশি থাকে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, উত্তর-আমেরিকা অঞ্চলের শিলা
খণ্ড ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক সংকট,
আগ্নেয়গিরি প্রবল ঝাঁকুনি প্রভৃতির কারণে প্রস্তর খণ্ড পাশাপাশি এসে পড়ে আর দুটি শিলার মধ্যে তীব্র ঘর্ষণের ফলে প্রবলভাবে কেঁপে ওঠে
মাটির উপরি ভাগ। প্রবল সামুদ্রিক ঝড় বা সুনামির তাণ্ডব শুরু হয়। ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ সব ধ্বংস স্তূপে
পরিণত হয়। কারণ হিসেবে টেকটোনিক, ভোলকেনিক বলা হচ্ছে। এইসব প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও ব্যাপকহারে বন ধ্বংস, পাহাড় প্রকৃতির ক্ষতি সাধন। বড় বড় নির্মাণ, টানেল, পাহার খনন লাগামছাড়া। কয়লা
তেল গ্যাস উত্তোলন। কেদারনাথ বার বার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে
পড়ছে। প্রবল ভূমিকম্প হচ্ছে। একমাত্র কারণ উত্তরাখন্ড এপাহাড় পরিবেশ প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্যের ভান্ডারকে ধ্বংস করে সবুজ
জঙ্গল কেটে শতাধিক জল বিদ্যুত
প্রকল্প নির্মাণ করতে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। বাধা দেবার কেউ নেই। প্রকৃতিও তার চরম
প্রতিশোধ নিচ্ছে। বার বার ধস আর
লাগাম ছাড়া প্রাণ হানি। অসম তথা উত্তর
পূর্বাঞ্চলের অবস্থা ভালো নয়। গুয়াহাটি মহানগরের মত ১৮টি পাহাড় জঙ্গল ব্রহ্মপুত্র
নদের মত বিশাল জল ভাণ্ডার দেশের এমন মনোরম ঠাঁই কোথাও নেই। এই মহানগরের কাছে সিমেন্ট কারখানা চলছে রম রম করে। দূষণ
ছড়াচ্ছে ব্যপকহারে। ব্রহ্মপুত্র নদের জল আজ দূষিত, রাজ্যের ৪৫ নদীর জল দূষণ হয়ে গেছে। পরিবেশ প্রকৃতি সুস্থির থাকলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায়
থাকে, মাটির উপরিভাগ ঠিক রাখতে, ভূগর্ভস্থ জল, খনিজ সম্পদের অপচয় বন্ধ করতে হবে। পাহাড় প্রকৃতি নদ নদীকে রক্ষা করতে
হবে। এর সঙ্গে ভূমিকম্পের কি কোনও সংযোগ আছে? এর উত্তর খুঁজতে উত্তরাখণ্ড যেতে হবে। আমি দেখেছি এত সুন্দর প্রাকৃতিক স্বর্গ রাজ্য কিভাবে ধ্বংস হচ্ছে এক দল লোভী মানুষের হাতে। বিশাল বিশাল সব জল বিদ্যুত
প্ৰকল্পের ভূগর্ভস্থ ট্যানেল। পাহাড়ি নদী ঝর্ণার জলকে গতিপথে আটকে পাহাড়ের দেওয়াল তুলে নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকৃতি
বার বার প্রতিশোধ নিচ্ছে। বার বার ভূমিকম্প আর ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে।










কোন মন্তব্য নেই