ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি ঢেকিয়াজুলির দুলাল পালের মত কাছাড়ের চন্দ্র ধর দাস বাংলাদেশি কলঙ্ক মাথায় নিয়ে ১০৪ বয়সে চলে গেলেন
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান
প্রভৃতি রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িতার বলি হয়ে, নির্যাতিত হয়ে যে সব হিন্দু ধর্মাবলম্বী
মানুষ ভারতে এসেছে বা আসবে তাদের ভারত সরকার স্থায়ী পুনর্বাসনের
সব ব্যবস্থা করবে, নাগরিকত্ব দেবে, সেই লক্ষ্যে
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে আইন প্রস্তুত করলো। তা কিন্তু
আজও লাগু হলো না। লাগু হলে স্বাধীন ভারতের স্বদেশী নাগরিকদের বন্দি করে রাখার
জন্যে ডিটেনশন ক্যাম্পের জন্ম হতো না। বন্দি অবস্থায় ২৭ জনকে মরতে হত না।
ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি ঢেকিয়াজুলির দুলাল পালকে গুয়াহাটির মর্গে ১০ দিন পরে থাকতে
হত না। পচা গলা দেহ পোড়ানো হল। কিন্তু বিদেশি তকমার কলঙ্ক নিয়েই মরতে হল। ১০৪ বছরের চন্দ্রধর
দাসকেও বাংলাদেশির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে গতকাল মরতে হল। কাছার জেলার ধলাই এলাকার
আমরাঘাট বরাই বস্তিতে নানা অসুখে ভুগছিলেন চন্দ্র ধরবাবু। তিনি ১৯৬৫ সালে অর্থাৎ ৫৫ বছর আগে
বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে ত্রিপুরা এসেছিলেন। তিনি রিফিউজি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
সংগ্রহ করে ছিলেন। তারপরও অসমে তার নামে তিন তিন বার ফরেনার ট্রাইব্যুনাল থেকে
নোটিশ পাঠানো হয়। শিলচর ৬ নম্বর ফরেনার ট্রাইব্যুনাল এক তরফাভাবে তাকে
বিদেশি ঘোষণা করা হয়। আর্ত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাকে
জোর করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি তাকে শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে পোরা
হয়। এন আর সি সেবা কেন্দ্রে চন্দ্র ধর বাবুকে ১০২ বছর বয়সেও হাজির
করা হয়। কোনো বিবেচনা করা হয়নি। তার বড় অপরাধ তিনি বড্ড গরিব। আইনি সাহায্য দেবার কেউ নেই। অসমে কিছু টাকা
পয়সা দিলেই নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলা যায়। তার ভুঁড়ি ভুঁড়ি প্রমাণ পাওয়া গেছে। চন্দ্র ধরবাবুর
সঙ্গে রিফিউজি রেজিস্ট্রেশন সারটিফিকেট ছিল, তা ভেরিফিকেশনের জন্যে ত্রিপুরা সরকারের কাছে
নথি পত্র পাঠানো হয়েছিলো। সেই রিপোর্ট আজও আসেনি। বিনা দোষে তিনি মাস
পাঁচেক বন্দি জীবন কাটান। ২৭ জুন মুক্তি পান।
তখন তার বয়স ছিল ১০২ বছর,
অসুস্থতা ও বয়সের ভারে প্রায়
পঙ্গু চন্দ্র ধরবাবুকে ফরেনার ট্রাইবুনালে শুইয়ে রাখা হত। বিদেশীর কলঙ্ক নিয়ে ডিটেনশন
ক্যাম্পে তিনি বার বার বলতেন তার মত বৃদ্ধ লোককে যেন ডিটেনশন ক্যাম্পে না পোরা হয়।
রবিবার রাতে মারা যান। তার পত্নী ভীষণ অসুস্থ। মেয়ে নিয়তি রায় তাদের দেখা শুনা করছেন। গতকাল শিলচরের
প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব এক প্রতিনিধিদের নিয়ে তার বাড়িতে যান। তিনি অভিযোগ
করেন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পরেও চন্দ্র ধরবাবুকে বাংলাদেশি কলঙ্ক মাথায়
নিয়ে মরতে হল। ১০৪ বছরের চন্দ্র ধর দাস সরকারি অমানবিকতার শিকার
হলেন। দুলাল পালের মত বাংলাদেশির তকমা নিয়ে মরতে হল চন্দ্র ধর দাসকে, হিন্দুত্ববাদি
বিজেপি সরকার নীরব দর্শক, তাদের শুধু ভোট লাগে, ভোটারকে নয়।









কোন মন্তব্য নেই