Header Ads

বড়োল্যান্ড নির্বাচনে ৪ শতাংশ বাঙালি হিন্দুরা উপেক্ষিত


অমল গুপ্ত, কলকাতা : আগামী ৭ ডিসেম্বরে বড়োল্যান্ডে দু'দফার নির্বাচন প্রথম দফা উদালগুড়ি, বাক্সা দ্বিতীয় দফা কোকরাঝাড় ও  চিরাং জেলাতে ১০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। বি পি এফ প্রধান হগ্রামা মহিলারি আজ বিজেপি সরকারের প্রধান শত্রু যিনি বিগত কংগ্রেস ও বর্তমান বিজেপি সরকারের প্রধান শরিক ছিলেন। বিজেপি সরকারের উজ্জ্বল মুখ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একদিন উগ্রপন্থী দলের নেতা হাগ্রামাকে বন্ধুর মত পাশে নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই বন্ধু হাগ্রামার বিরুদ্ধে লাগাতার লড়ে যাচ্ছেন। সেইদিন পর্যন্ত হাগ্রামার মত ভালো নেতা হয় না, আর আজ তার মত খারাপ নেতা নেই। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বৃস্পতিবার বড়োল্যান্ডে নির্বাচনী সভায় আশ্বাস দিলেন, বিটিসিতে উন্নয়ন করা হবে,পরিবর্তন আনা হবে। অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গাড়ির মাথায় চড়ে বিপিএফ-কে গালি-গালাজ করে গেলেন। অথচ সেই দলের দু'জন মন্ত্রী চন্দন ব্রহ্ম ও প্রমীলা রানি ব্রহ্ম তাদের সরকারের সেবা করে যাচ্ছেন। সেই দু'জন মন্ত্রী কি বিপদের বন্ধু হগ্রামা মহিলারিকে ছেড়ে দেবেন, তা তো মনে হয় না। বড়োল্যান্ড দু-দু'বার কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এখন বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন বলা হয়েছে। ৪০ টি আসনের আইন সভার আসনের সংখ্যা ৬০টি করার এক প্রস্তাব করা হয়েছে। ৪০ টি আসনের আইন সভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম হিন্দু বাংলাভাষী মানুষ, কোচ রাজবংশী, সাঁওতাল, হিন্দি ভাষী মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নেই বললেই চলে। অথচ তারা প্রায় ৬০ শতাংশ, ৪০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫ টি আসনে তারা প্রতিনিধি দাঁড়া করাতে পারবে। আর ৫ টি আসন ওপেন রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকার না থাকলে আর্থ সামাজিক অধিকারও সঙ্কুচিত হয়। সমান উন্নয়ন হয় না। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ বন্টনেরও পক্ষপাত হয়। আর তাই হয়েছে। অবড়ো অধ্যুষিত অঞ্চলে উন্নয়ন কম হয়েছে, রাস্তা-ঘাট পরিকাঠামোর সেরকম উন্নতি হয়নি। অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এককালের ভালো বন্ধু মহিলারির হাতে অর্থ দফতর ছিল, তবে বরাদ্দ নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে কেন। বরাকের বিশিষ্ট যুব নেতা প্রদীপ দত্ত রায় অভিযোগ করেছেন, বিজেপিকে ভোট দিলে আবার ডিটেনশন ক্যাম্পের রমরমা শুরু হবে। ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে। বিজেপি সরকার বাঙালি হিন্দুদের শত্রু, তা নানা ভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে। ১৯ লক্ষ মানুষের নাম এন আর সি-তে উঠেনি। তারমধ্যে বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা বেশি। যারা ৭০/৮০ বছর ধরে অসমে বসবাস করছে বলে বেঙ্গলি যুব ফেডারেশন জানিয়েছে। অথচ বিজেপি সরকার তাদের নানাভাবে হয়রান করছে বলে তাদের অভিযোগ। প্রমোদ বড়োর ইউ পি পি এল একমাত্র দল বাঙালিদের কথা চিন্তা করছে। বিজেপি করে না। বিজেপি এখন মুসলিম ভোটের দিকে ঝুঁকেছে। আগামী বিধানসভার নির্বাচনে কম করে ২০/২২ জন মুসলিম যুব প্রার্থীকে ক্যান্ডিডেট করার কথা চলেছে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন মোর্চার সভাপতি। ইতিমধ্যে ১৮ জনের এক তালিকা প্রস্তুত করেছেন বলে জানা গেছে। বিগত নির্বাচনে মাত্র একজন মুসলিম বিধায়ক ছিলেন। বরাকের সোনাই কেন্দ্রের আমিনুল হক লস্কর, যিনি বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার, তাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া উচিত ছিল। বিজেপি দেয় নি। বাঙালি হিন্দুদের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালির বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি থাকবে না। গত নির্বাচনে হোজাই, ধুবরী, লামডিং ও আর একটি কেন্দ্রে বিজেপি ক্যান্ডিডেট করেছিল শুধু হোজাই, লামডিং জেতে তবে লামডিঙের বিধায়ক বেঙ্গলি হিন্দু জনগোষ্ঠীর নয়। কার্যত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালি হিন্দুর বিপরীতে একজন বিধায়ক, শিলাদিত্য দেব। যাকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। দেবের জনপ্ৰিয়তা কমে গেছে। এবার তাকে টিকিট দেওয়া হবে তো, কারণ মুসলিম লবি তার ঘোর বিরোধী। যে লবিকে অস্বীকার করতে পারবে না বিজেপির নেতারা। এই প্রেক্ষাপটে বিটিসিতে নির্বাচনে প্রায় ৪ শতাংশ বাঙালির কোনো মূল্য বিজেপির কাছে নেই। মুসলিম ভোটারদের দিকে আর বড়ো ভোটারদের সামনে রেখে প্রচার চালানো হচ্ছে। নানা প্রলোভন আর টাকার হাতছানিতে ভোট প্রচার চলছে। অপর দিকে কংগ্রেস-এ আই ইউ ডি এফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল প্রচারে নেমেছেন। সাংসদ নব সরনিয়ার গণ সংগ্রাম দল অবড়ো ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে জোরদার প্রচার করছে। অবড়োরা ভোটের নির্ণায়ক শক্তি। এই শক্তিকে নানাভাবে ভয় দেখানো হয়। এন ডি এফ বির নানা গোষ্ঠীর হাতে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র-শস্ত্র আছে। রাজ্য পুলিশ বহু অস্ত্র উদ্ধার করেছে। আরও আছে। প্রাক্তন আলফা নেতা তথা আজকের জনপ্ৰিয় সাংসদ নব সরনিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে গোপনে অস্ত্র-শস্ত্র রাখার। নির্বাচনের সময় সেই সব অস্ত্র ভোটারদের ভয় দেখাতে, প্রভাবিত করতে কাজে লাগানো হয়। সেখানে নিরপেক্ষভাবে ভোট হয় না বলে অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিজেপি লড়ে গেলেও বি পি এফ-কে পর্যুদস্ত করা সহজ কথা নয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.