‘মহিলা ও কন্যাদের প্রতি হিংসার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ১৬দিনের অভিযান’
প্রতি বছর ১৬দিন ব্যাপী এই অভিযানের মাধ্যমে সার বিশ্বে মহিলা ও কন্যাদের প্রতি হিংসার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এর উদ্দেশ্য জনগণের মধ্যে হিংসার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর প্রতিবাদ করা। এই অভিযানের শুরু হয়েছিলো ১৯৯১ সালে উমেন্স গ্লোবাল লিডারশিপ ইন্সিটিউট, ইউএসএ, দ্বারা। ১৯৯২ সালে ইউএন জেনেরাল এ্যাসেম্বলি ঘোষণা করেন ২৫শে নভেম্বর দিনটিকে International Day For The Elimination of
Violence Against Women হিসাবে আন্তর্জাতিক ভাবে পালন করা হবে ও সাদা রিবন (White Ribbon)কে এর
প্রতীক মানা হবে।
এই দিবসটিকে চিহ্নিত করার পেছনের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক; Caribbean Archipelago তে অবস্থিত একটি দ্বীপ Dominican Republic, এই দ্বীপে ১৯৩০ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত চলেছিল Rafael Trujillo দ্বারা একনায়কতন্ত্র, এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন কমিউনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী চারবোন, এদের মধ্যে তিনবোনকে ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর একটি সাজানো পথ দুর্ঘটনায় মেরে ফেলেন Trujillo সরকার। এই তিনবোন ছিলেন, প্যাট্রিয়া, মিনারভা ও মারিয়া তেরেসা ।
এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য; মহিলা ও কন্যাদের প্রতি ঘটিত হিংসাকে প্রতিরোধ করা, হিংসা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা ব্যবহার করে মহিলাদের দমন করে রাখা হয়, তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, স্বাস্থ্য ও
শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চনা, সিধান্ত নেওয়ার পরিসর থেকে দূরে রাখা, তাদের প্ররিশ্রম ও সম্মানকে অবজ্ঞা করা। তাদের প্রতি বৈষম্য ও অবিচার (Inequity and Injustice) করা হয়, ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ, অপহরণ, খুন, পনের কারনে খুন, গার্হস্থ্য হিংসা, ট্র্যাফিকিং (বিক্রী ও চালান করা), কন্যা ভ্রুণ হত্যা, শিশুকন্যা হত্যা, ডাইনি হত্যা, এগুলো হচ্ছে মোটামুটি আমাদের পিতৃ তান্ত্রিক সমাজের ব্যবস্থা যা মহিলা ও কন্যাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আসছে।
২৯শে নভেম্বর পালন করা হয় Human Rights Defender’s Day, বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার রক্ষাকারিদের মৃত্যু হয়েছে সেই দেশের সরকার বা কায়েমি স্বার্থের প্রতিনিধিদের হাতে বা তাদের বিনা বিচারে বন্দী করে রাখা হয়েছে কারাগারে। এদের প্রতি আমাদের ঐক্য ও সমর্থন প্রদর্শন করা।
৩০শে নভেম্বর South Asian Women’s Day for Peace, Justice, Human Rights and
Democracy, ‘সংগত’নামের একটি নারি উন্নয়নকামী সংস্থা এই দিবসটিকে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মহিলাদের বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অধিকার, শান্তি, ন্যায় ও মানব অধিকার এবং গণতন্ত্র পাওয়ার জন্য সক্ষম করা হয়। এই দিনটি পালিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে।
১লা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস, বিশ্ব এইডস মহামারি শুরুথেকে এযাবৎ মহিলারা অসঙ্গত ভাবে এইচআইভির শিকার হয়েছেন, বর্তমানে এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যা মহিলাদের। মহিলা ও বয়ঃসন্ধির কন্যাদের প্রতি সামাজিক ও পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থের অসাম্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে ও তারা সহজেই এইচআইভির শিকার হন।
৩রা ডিসেম্বর ‘International Day of the Disabled and the Commemoration of the
Bhopal Gas Tragedy’, এবছরের থিম;“প্রত্যেকটি অক্ষমতা লক্ষণীয় নয়” এই বছর ফোকাস করা হবে, এমন কিছু অক্ষমতার প্রতি যা সাধারণত দর্শনীয় নয় বা দেখা যায়না যেমন; মানসিক অসুস্থতা, ক্রনিক ব্যাথা বা ক্লান্তি (ফ্যাটিগ), চোখে কম দেখা বা কানে কম শোনা, ডায়েবেটিস, মস্তিষ্কে আঘাত, Neurological
Disorder (স্নাইয়ুতন্ত্রের গোলযোগ), Learning Difference and Cognitive Dysfunctions (বুঝতে অসুবিধা এবং বুদ্ধিমত্তার অভাব) ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বের জনসংখ্যার ১৫% কোন না কোন অক্ষমতায় ভুগছেন এর মধ্যে ৮০% উন্নয়নশীল দেশগুলিতে থাকেন। এছাড়া ৪৫০ মিলিয়ন ব্যক্তি মানসিক বা নিউরোলজিক্যাল রোগে আক্রান্ত, এবং এদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ সামাজিক বৈষম্য, অবহেলা ও কলঙ্কের ভয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অক্ষম।
কোভিড১৯ এর মহামারির পরিবেশে বিচ্ছিন্ন থাকা, দৈনিক জীবন প্রণালী ভেঙ্গে যাওয়া, সামাজিক ভাবে দূরত্বের ফলে ও চিকিৎসা পরিষেবা উপলব্ধ না হওয়া এধরনের ব্যক্তিদের জীবনের গতি থামিয়ে দিচ্ছে।
১৯৮৪ সালের ২/৩রা ডিসেম্বর রাতে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে, মিথেন গ্যাস লিকের ফলে আনুমানিক ৮০০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিলো, সরকারি হিসাবে ৫৫৮,১২৫ জনের আঘাত লাগে এর মধ্যে ৩৮,৪৭৮ জনের সাময়িক আঘাত ও ৩৯০০ জন সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে অক্ষম হয়ে গেছেন, এবং পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা জন্মাচ্ছে শারিরিক মানসিক অক্ষমতা নিয়ে।
৬ই ডিসেম্বর;
Zero Tolerance Day (শূন্য সহিষ্ণুতা দিবস); ১৯৮৯ সালে ৬ই ডিসেম্বর কনাদার মন্ট্রিয়াল শসহরে “ইকলে পলিটেকনিক কলেজের” মার্ক লিপাইন নামের একটি ছাত্র ক্লাস রুমে ঢুকে তার সহপাঠী ছাত্রীদের আলাদা করে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ও পরে নিজেও আত্মঘাতী হয়। ৫০জন জখম হলেও মারা যান ১৪টি ছাত্রী। মার্ক ফেমিনিজম কে ঘৃণা করত। এই দিনটিকে মন্ট্রিয়াল ম্যাসাকার বলেও চিহ্নিত করা হয়।
১০ই ডিসেম্বর;
Human Rights Day (মানবাধিকার দিবস) এবছরের থীম হচ্ছে; Recover Better: Stand Up for Human Rights (সুস্থ হয়ে উঠুন; মানবাধিকার এর জন্য দাঁড়ান)। কোভিড-১৯-এর রোগীদের সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজন মানবিকতা।
কোন মন্তব্য নেই